জান্তার পেতে রাখা মাইনে প্রতিনিয়ত মৃত্যুরমুখে স্থানীয়রা। নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে গরু আনতে গিয়ে একের পর এক পা হারাচ্ছে বাংলাদেশিরা। গত আট বছরে মাইন বিস্ফোরণে পা হারিয়েছেন ৫০ জন। আর চলতি বছর এ সংখ্যা ১৪ জনে। জান্তার পুঁতে রাখা মাইনের ক্ষত সীমান্তের ঘরে ঘরে বিরাজ করছে।
নুরুল আবছার। বয়স এখনো আঠারো পেরোয়নি। এরইমধ্যে মাইন বিস্ফোরণে ডান পা হারিয়ে হাঁটাচলার জন্য নির্ভর হচ্ছে ক্রাচের ওপর। জীবনের এই সময়ে পা হারিয়ে বড় অসহায় জীবনযাপন করছেন এই তরুণ। নাইক্ষ্যংছড়ির জারাইলছড়ি সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা আবছারের দাবি, মিয়ানমার থেকে চোরাইপথে গরু আনতে গিয়ে এক বছর আগে মাইন বিস্ফোরণে পা হারান তিনি।
আবছার বলেন, গরুর সওদাগররা আমাদের নিয়ে গেছে। আমরাতো ওখানে পার হয়নি, শুধুমাত্র তারকাটার কাছাকাছি গিয়েছিলাম।শুধু আবছার নয়, এখন সীমান্তের ঘরে ঘরেই যেন মাইনের ক্ষত। মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে অবৈধভাবে গরু, সিগারেট, মাদকসহ বিভিন্ন পণ্য আনতে গিয়ে মাইনের ফাঁদে পড়ছে স্থানীয়রা। এরকম কয়েকজন জানান, তারা মূলত পাচার চক্রের সদস্যদের প্রলোভনে পড়ে মিয়ানমার সীমান্তে গরু আনতে গিয়েছিলেন। বিনিময়ে প্রতি গরু বাবদ তাদের দেয়া হয় দুই হাজার টাকা।
স্থানীয়রা বলেন, আমরা লেবারের মাধ্যমে যেতাম গরু আনতে। ১০ ফিট ভেতরে যেতেই মাইন বিস্ফোরণ ঘটে।
১৯৯৭ সালে কানাডায় অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে স্থল মাইন ব্যবহার থেকে সরে আসার চুক্তিতে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ স্বাক্ষর করলেও মিয়ানমার করেনি। বরং তারা মাইন পুঁতে মৃত্যু ফাঁদ তৈরী রাখে সীমান্তে। ওপারে এখন জান্তা সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকলেও তাদের পুঁতে রাখা মাইন ঠিকই থেকে গেছে। ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা।
কাঁটাতারের কাছে শুধু লাল কাপড় স্থাপন নয়, সীমান্তে মাইনের ফাঁদ থেকে স্থানীয়দের বাঁচাতে এখন সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে বিজিবি।
নাইক্ষ্যংছড়ি-১১ বিজিবির সহকারী পরিচালক মো. আল আমিন বলেন, সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে লাল পতাকা স্থাপনের মাধ্যমে সর্তকবার্তা জারি করা হয়েছে। মোবাইল টহলের মাধ্যমে সীমান্তজুড়ে অধিক সতর্কতা প্রচারের জন্য মোবাইল টহল পরিচালনা করা হচ্ছে।
বিজিবি বলছে,সীমান্তে চোরাচালান রোধে এখন নেপথ্যের কারিগরদের ধরা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অন্যতম গডফাদার শাহীনসহ অনেক সহযোগী গ্রেপ্তার হয়েছে। সচেতনতা বাড়ানোর কথা বলছে উপজেলা প্রশাসনও।
নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল এস কে এম কফিল উদ্দিন কায়েস বলেন, সবচেয়ে বড় যে শাহীন ডাকাত যে গর্জনিয়া থেকে পুরো নাইক্ষ্যংছড়ি পর্যন্ত প্রাধান্য বিস্তার করেছিল তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনের আওতায় আছে, সে বর্তমানে জেলে আছে।
নাইক্ষ্যংছড়ির ইউএনও মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এখানকার মানুষের সচেতনতা বা শিক্ষা যেহেতু আমরা পার্বত্য এলাকায় আছি। এখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কম, সচেতন মানুষের সংখ্যাও কম, শিক্ষার হারও কম। তবুও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। গত আট বছরে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তেমাইন বিস্ফোরণে পা হারিয়েছে অন্তত ৫০ জন। যেখানে চলতি বছরে আহত হয়েছেন ১৪ স্থানীয় বাসিন্দা।সংগৃহীত
আপনার মতামত লিখুন :