যুবলীগের রাজনীতিই অঢেল সম্পদ এনে দিয়েছে খাজনা তোলার ছেলে বগুড়াড়ার শুভাশীষ পোদ্দার লিটনকে, স্বৈরাচারের দুর্নীতি-চাঁদাবাজ আর দখল, টেন্ডার ঠিকাদারী এসবই তার ছিল আলাদিনের চেড়াগতুল্য। যা দিয়ে-নিয়ে শূন্য থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। হয়েছেন অঢেল সম্পদের মালিক। পাচারও বকরেছেন অঢেল টাকা। ভোট চুরির উপজেলা পরিষদের সা্েক এই চেয়ারম্যান এবং দলীয় প্রভাবে দুই দফা বিআরটিসির পরিচালক হয়ে অবৈধভাবে তিনি নামে-বেনামে সম্পদ করেছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তিনি ব্যাপক প্রভাব খাটিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ অসংখ্য মামলা হয়েছে। ৫ আগস্টের পর লিটন কলকাতায় চলে গেছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
বগুড়া পৌরসভার সাবেক এক মেয়র জানান, লিটনের বাবা নরেশ পোদ্দার পৌরসভার খাজনা সংগ্রাহক ছিলেন। আশির দশকে পৌরসভার মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তিনি ভারতে পালিয়েও যান। তিনি আর দেশে ফেরেননি। লিটন এক সময় আত্মীয়-স্বজনের দয়ায় চললেও শহরের মধ্য কাটনারপাড়া রুহিনী পোদ্দার লেনে ছয়তলা ভবন নির্মাণ করেছেন। কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন লিটন।শুধু বগুড়া করোনেশন ইনস্টিটিউশন অ্যান্ড কলেজের সভাপতি হয়ে তিনি পাঁচ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছেন। কলেজ ছাড়াও বোবা স্কুলসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন লিটন। লিটনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভুক্তভোগী আবদুল করিমসহ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, বগুড়া পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের মাধ্যমে লিটনের রাজনীতি শুরু। ২০০৫ সালে তিনি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ২০১৬ সালে জেলা যুবলীগের সভাপতি হন। দীর্ঘদিন তিনি এক ছাত্রলীগ নেত্রীর বাড়িতে আশ্রয়ে ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি বগুড়া বিআরটিসির পরিচালক হন। এ পদে তিনি পর পর দুবার ছিলেন। ২০১৬ সালে পৌর নির্বাচনে ভোট ডাকাতিতে তার হাতে খড়ি। এ বছর মহিলা কাউন্সিলর পদে মাদক ব্যবসায়ী এক যুবলীগ নেতার আত্মীয় ও বিএনপি নেত্রীকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তিনি জয়ী করেন। নিজ দলের প্রার্থীকে হারাতে বোরকা পরে লিটন ভোট ডাকাতি করেন।
২০২৪ সালে বগুড়া সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে লিটন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অভিযোগ, তৎকালীন পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তীকে (পলাতক) লিটন দুই কোটি টাকা ঘুস দেন। ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ও টাকার বিনিময়ে লিটনকে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়। এ ব্যাপাওে প্রতিদ্ব›িদ্ব প্রার্থীরা প্রশাসনে নালিশ করেও প্রতিকার পাননি। ২০২৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের হলফনামায় লিটন তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ২০ লাখ ২৮ হাজার ৭৫০ টাকা। তবে স্থানীয়দের দাবি, শূন্য থেকে শুরু করা লিটন গত কয়েক বছরে অবৈধভাবে শতাধিক কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। ভারতেও তার একাধিক বাড়ি আছে। অনেক টাকা তিনি পাচারও করেছেন। নামে-বেনামে হাউজিং ও অন্যসব ব্যবসা রয়েছে লিটনের। শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায় বিলাসবহুল বহুতল মার্কেট গড়েছেন। বিভিন্ন মার্কেটে দোকান ও অকৃষি জমির মালিকও তিনি হয়েছেন। ক্ষমতার দাপটে মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনি ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন। তবে অজ্ঞাত কারণে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) লিটনের সম্পদ ও সম্পত্তির হিসাব নেয়নি।
আপনার মতামত লিখুন :