বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২

স্বাধীন বাংলাদেশে আজও নাগরিক নিরাপত্তা অধরা

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৬, ২০২৫, ১০:১৩ এএম

স্বাধীন বাংলাদেশে আজও নাগরিক নিরাপত্তা অধরা

ডেইলিখবরডেস্ক: মহান বিজয়ের ৫৫ বছরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। স্বাধীন পতাকা আছে, আছে নিজ ভূখন্ডে চলার স্বাধীনতা। কিন্তু সেই চলা আর বলার নিরাপত্তা আসলে কতটুকু? সরকার আসে, সরকার যায়—কিন্তু রাষ্ট্র কি সত্যিই গণমানুষের, গণঅধিকারের হয়ে উঠেছে? তাই তো আজও ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত হয় সবুজ বাংলার জমিন। গণতন্ত্র ও সুশাসনের আকাঙ্ক্ষা রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কাছে বারবারই অধরা থেকে গেছে।
রাষ্ট্র গঠনের প্রথম ও মৌলিক উপাদান হলো একটি ভূখন্ড। একাত্তরে রক্তের বিনিময়ে সেই ভূখন্ড নিশ্চিত করেছিলেন বাংলার পূর্বপুরুষেরা। এরপর এ জনপদে শাসন ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার নামে এসেছে নানা সরকার—কেউ রাজনৈতিক দলের ব্যানারে, কেউ সরাসরি উর্দি পরে, আবার কেউ আড়াল থেকে।
কিন্তু স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়েও প্রশ্ন থেকেই যায়—শাসকেরা কতটুকু পূরণ করতে পেরেছে নাগরিকের অধিকার? এ বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, নির্বাচনের আগে জনপ্রতিনিধিদের দেখা গেলেও একবার জয়ী হলে তাদের আর খোঁজ মেলে না। তাদের মতে, দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো জবাবদিহিতার অভাব। তবু তারা আশাবাদী—সামনে হয়তো ভালো কিছু হবে।
তারুণ্য চেয়েছে মুক্তি, চেয়েছে গর্বিত নাগরিকের পরিচয়। কিন্তু ’৭১ থেকে ’২৪ প্রতিটি সংকট কাটিয়ে আবারও রাজনীতি ও শাসনযন্ত্র ঘুরপাক খেয়েছে একই ভুলের বৃত্তে। তাই স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়েও অধরাই রয়ে গেছে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানিকীকরণ, সুশাসন ও নাগরিক নিরাপত্তা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চরম মতানৈক্যের কারণে দেশে একটি সাংঘর্ষিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। ক্ষমতায় যাওয়া দল নিজেদের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চায়, যার ফল ভোগ করে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হয়েছে সাধারণ জনগণকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, জাতীয় স্বার্থের জায়গা বাদ দিয়ে যখন রাজনৈতিক দলগুলো ব্যক্তি স্বার্থকে প্রধান্য দেয়, তখনই সুশাসন ভেঙে পড়ে।
বিশ্লেষকদের মতে, যুগে যুগে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা কেউই গুরুত্ব দেয়নি। বরং দলীয়করণের আঘাতে বিচার বিভাগ, সংসদ, নির্বাহী বিভাগ, দুদক ও নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো কখনোই দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে পারেনি। তবে ’২৪-পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতায় সংকট উত্তরণের সুযোগ এখনো রয়েছে বলে মনে করেন তারা।
অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান বলেন, জুলাই সনদে গণতান্ত্রিক উত্তরণে জবাবদিহিতামূলক সরকার প্রতিষ্ঠার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত আছে। সেগুলো কার্যকর করা গেলে পরিবর্তনের আশা করা যায়।
অন্যদিকে অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন,এই মুহূর্তে প্রয়োজন একটি ‘কোয়ালিটি’ রাজনৈতিক দল যারা আধুনিক বিশ্বকে বুঝবে, যাদের দৃষ্টি হবে বৈশ্বিক, কিন্তু কাজ করবে স্থানীয় বাস্তবতায়।
৫৪ পেরিয়ে ৫৫তম বিজয়ে বাংলাদেশ। সমকালীন ইতিহাসের পথ ধরে যে নতুন জয় বাংলার দুয়ারে এসেছে, তা এখনো আঁকতে পারেনি কাঙ্খিত ভয়হীন রাষ্ট্রেও প্রতিচ্ছবি। তাহলে আর কত আত্মত্যাগের গল্প লিখলে মিলবে সত্যিকারের বিজয়ের স্বাদ? এই প্রশ্নই আজ ধ্বনিত হচ্ছে নাগরিক মনে।ছবি-সংগৃহীত

 

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!