বৃহস্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইসলামপুরের দুর্গম চরে ক্যাপসিকাম চাষে সফল হৃদয়

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৪, ০২:১৩ পিএম

ইসলামপুরের দুর্গম চরে ক্যাপসিকাম চাষে সফল হৃদয়

যমুনার দুর্গম চরাঞ্চলে ক্যাপসিকাম চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা হৃদয় মিয়া। বেকারত্ব ঘুচিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্নে ইউটিউবে ভিডিও দেখে বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেন চাষাবাদ। প্রাথমিকভাবে ৪০ শতক জমিতে ক্যাপসিকাম বীজ রোপণ করেন। ফলনও হয়েছে বাম্পার।

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার যমুনার মধ্যবর্তী দুর্গম চরাঞ্চল সাপধরী ইউনিয়নের চেঙ্গানিয়া গ্রামের রূপসা চরে ক্যাপসিকাম চাষ শুরু করেন হৃদয়। তিনি ওই গ্রামের বাসিন্দা আবু সাঈদের ছেলে।

সরেজমিন দেখা গেছে, প্রতিটি গাছে ঝুলছে সবুজ রঙের ক্যাপসিকাম। ক্যাপসিকাম খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন হৃদয় মিয়া। তার হাতের ছোঁয়া আর যত্ন-পরিচর্যায় ক্যাপসিকামের চারাগুলো হয়ে উঠেছে হৃষ্টপুষ্ট।

হৃদয় মিয়া জানান, চারা রোপণের দুই মাস পর থেকেই গাছে ফল ধরা শুরু হয়। ৪০ শতক জমিতে ক্যাপসিকাম চাষে বীজ কেনা, জমি প্রস্তুত, সার, বালাইনাশক ও মালর্চিং পেপার কেনা এবং শেড তৈরিসহ সব মিলিয়ে তার প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যদিও নিজেরা কাজ করায় এর মধ্যে শ্রমিকের খরচ খুব বেশি লাগেনি। চারা রোপণের আড়াই মাস পর থেকে ক্যাপসিকাম বিক্রি শুরু করেন।

তবে ক্যাপসিকাম স্থানীয়ভাবে বিক্রি করা যায় না। বিক্রি করতে হয়েছে ঢাকার কারওয়ান বাজারে। প্রতি মণ ক্যাপসিকাম বিক্রি করা হয়েছে ৮ থেকে ৪ হাজার টাকায়। ইতিমধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ক্যাপসিকাম বিক্রি করা হয়েছে। এখন খেতে যে পরিমাণ আছে, এতে অন্তত দেড় লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করা যাবে বলে আশা করছেন তিনি।

হৃদয় মিয়ার বাবা আবু সাঈদ বলেন, হৃদয় দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। সে ইউটিউব দেখে আধুনিক পদ্ধতিতে ৪০ শতাংশ জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করেছে। পরিপক্ব হওয়ার প্রতিটি ক্যাপসিকাম ওজন হয় আড়াই শ গ্রাম। যা বাজারে বিক্রি করে পরিবারের অভাব-অনটন ঘুচবে বলে আশাবাদী।

আবু সাঈদ আরও বলেন, ‘স্থানীয় বাসিন্দারা ক্যাপসিকাম সবজিটি খাওয়ায় অভ্যস্ত না থাকায় স্থানীয় কোনো হাট-বাজারে বিক্রি করতে পারছি না। অনেকটা বাধ্য হয়েই বিক্রি করতে হচ্ছে ঢাকার কারওয়ান বাজারে নিয়ে গিয়ে। এতে সময় ও অর্থ দুটোই অপচয় হচ্ছে।’

‘ক্যাপসিকাম পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের আধুনিকায়ন পদ্ধতিতে কিছু জমিতে নাগা ফায়ার মরিচ, টমেটো স্মার্ট-১২১৭, নাপসান ফুলকপি ও কিছু জমিতে বিগবস বেগুনের চাষ করেছি। কিন্তু আমাদের এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় উৎপাদিত পণ্য সহসায় বিক্রি করা যায় না। বলেন, আবু সাঈদ।

সাপধরী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বিএসসি বলেন, ‘তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা হৃদয় মিয়ার ক্যাপসিকাম চাষ করা দেখে এলাকাবাসী আনন্দিত। এর আগে আমরা এ জেলায় কোথাও ক্যাপসিকামের চাষ দেখিনি। প্রথমবারের মতো এলাকায় চাষ করায় প্রতিদিনই দূর-দুরান্ত থেকে লোকজন ক্যাপসিকামের খেত দেখতে আসছেন। ইতিমধ্যে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মেহেদী হাসান টিটু ক্যাপসিকাম খেত পরিদর্শন করেছেন। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে স্থানীয় কৃষকেরা ক্যাপসিকাম চাষ বাড়াবে বলেও আমার বিশ্বাস।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এল এম রেজুওয়ান বলেন, ক্যাপসিকাম উচ্চ মূল্যের একটি নতুন ফসল। এ উপজেলায় প্রথমবার বাণিজ্যিকভাবে এ ফসল চাষ করে সাফল্য লাভ করেছেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা হৃদয় মিয়া। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। বাজারে দাম ও চাহিদা ভালো হওয়ায় এ উপজেলায় আগামীতে ক্যাপসিকামের চাষ আরও বাড়বে বলে আশা করছি।’

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!