হারুন অর রশিদ দুদু, শেরপুর : “কেবলমাত্র গরু-ছাগল, গবাদিপশু, হাঁসমুরগি, ফসলের মাঠের খোঁজখবর করলেই চলবে না, সম্পদ ভাবলে চলবে না। নিজের সন্তানের প্রতি আরও যতœবান হতে হবে, প্রতিদিন নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে হবে। কোথায় যায়, কী করে, কাদের সাথে মেলামেশা করে, সব বিষয়ে খবরাখবর রাখতে হবে। সন্ধ্যায় সন্তান ঘরে ফিরলো, নাকি অন্য কোথাও গেলো, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। সন্তানকে সম্পদে পরিণত করতে না পারলে কোন সম্পদই কাজে আসবে না। এজন্য সবাইকে এখন থেকেই সচেতন হতে হবে। শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশে মনোযোগী হতে হবে।” শেরপুরে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে অনুষ্ঠিত এক মা সমাবেশে এমন কথা বলেন সিপিবি নেতা মোলায়মান আহমেদ। ১১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার বলাইরচর কান্দাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নাগরিক প্ল্যাটফরম জনউদ্যোগ শেরপুর এর আয়োজনে এ মা সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, দিন দিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এখানে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। শিক্ষকরা প্রশিক্ষিত। নিয়মিত মনিটরিং হচ্ছে, জরিপ হচ্ছে। তারপরও শিশুরা কিন্ডারগার্টেন, মাদ্রাসা মুখী হচ্ছে। টাকা দিয়ে সেখানে পড়ালেখা করছে। এমনও প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে যেখানে ৬ জন শিক্ষক রয়েছেন কিন্তু ছাত্র সংখ্যা মাত্র ১৪। এটা কেন হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষার এমন চিত্র কেবল শেরপুরের নয়, সারাদেশের। এ বিষয়ে ভাবতে হবে, কারণ অনুসন্ধান করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অনুষ্ঠান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শেরপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দা মোহসীনা সোবহান। তিনি বলেন, শেরপুরে কিছুদিন হয় আমি যোগদান করেছি। এটা ঠিক যোগদান করার পরে একটি বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে আমি ৬ জন শিক্ষার্থী পেয়েছি। তাও তিনজন ছিল ব্র্যাকের। এমন হতাশাজনক চিত্র দেখে আমি দু’দিন ঘুমাতে পারিনি। পরে পদক্ষেপ নিয়েছি। সেই বিদ্যালয়ে এখন ৭৯ জন শিক্ষার্থী নিয়মিত ক্লাশ করছে। আশা করছি, সামনে আরো পরিবর্তন আসবে। আমরা নিয়মিত বিদ্যালয় পরিদর্শন করছি, বাড়ি-বাড়ি ভিজিট করছি। সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের পদক্ষেপ নিচ্ছি। তিনি মা-দেও উদ্দেশ্যে বলেন, শিশুদের সুস্থ রাখার জন্য মা-দেরকে আগে সুস্থ থাকতে হবে। এজন্য নিজেদের শরীরের প্রতি যতœবান হওয়ার জন্য, সময়মতো খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেন। তিনি শিশুরা বিদ্যালয়ে আসার সময় তাদেরকে হালকা টিফিন সাথে দেওয়ার আহ্বান জানান। আগামী মাসে শিশুরা যাতে বিনামূল্যে দেওয়া টাইফয়েড টিকার ভ্যাকসিন নেয়, সে বিষয়ে সবাইকে সহযোগিতা করার কথা বলেন। তিনি বাল্যবিয়ে রোধ ও মাদক নিয়ন্ত্রণে মা-দেরকে আরো উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান। বিদ্যালয়ের সমস্যাগুলো যাতে দ্রæত সমাধান হয়, সে বিষয়ে তিনি সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন এবং করে যাবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন। উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. হারুন অর-রশীদ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জনউদ্যোগ আহ্বায়ক মো. আবুল কালাম আজাদ। এতে উদ্দীপনামূলক বক্তব্য রাখেন শিক্ষক, কবি-গবেষক জ্যোতি পোদ্দার, আইসিটি উদ্যোক্তা মাওলানা মিনহাজ উদ্দিন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও মন্মথ দে মহাবিদ্যায়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম, প্রধান শিক্ষক এস.এম. আবু হান্নান, সিপিবি নেতা মোলায়মান আহমেদ প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্যে প্রধান শিক্ষক এস.এম. আবু হান্নান বলেন, মা হলেন সন্তানের প্রথম শিক্ষক আর আমরা স্কুলের শিক্ষকরা হলাম দ্বিতীয় শিক্ষক। মা’র নিকট থেকেই শিশুরা প্রথম শিক্ষা পায়। এজন্য মাদেরকে শিশুর সুশিক্ষা ও ভবিষ্যৎ গঠনে যতœবান হতে হবে। তাদের বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা এবং লেখাপড়ার বিষয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে হবে। তবেই শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটবে। কবি-গবেষক জ্যোতি পোদ্দার বলেন, পরিবার থেকেই শিশুরা প্রথম শিক্ষা পায়। এজন্য শিশুর সামনে পরিবারের লোকজন এমন কোন আচরণ করা যাবে না,যা শিশুর মনোজগত গঠনে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। শিশুটি সময়মতো স্কুলে গেলো কী না, কী পড়া শিখলো, না কী সে স্কুল ফাঁকি দিচ্ছে, অসৎ সঙ্গে মেলামেশা, বাজে নেশা করছে, এসব বিষয়ে মাদেরকেই সবার আগে খেয়াল রাখতে হবে। দামি খাবার খেতে হবে, এমন নয়, শিশুর জন্য সুষম খাবার, পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে হবে। তবেই শিশুর পড়ালেখায় মনোযোগ বাড়বে। সাবেক চেয়ারম্যান মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম বিদ্যালয়টির সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও অবকাঠামো উন্নয়নে শিক্ষা কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জনউদ্যোগ আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার খানাখন্দে ভরা কাঁচা রাস্তাটি পাকা করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইইডি’র সহযোগিতায় মা সমাবেশে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে ছেলে ও মেয়েদের জন্য ফুটবল উপহার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের টার্ম পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এ মা সমাবেশে শতাধিক মা এবং শিশু ও পুরুষসহ দুই শতাধিক অভিভাবক অংশগ্রহণ করেন।
আপনার মতামত লিখুন :