শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বৃষ্টির খবরে হাওরে ধান কাটার ধুম

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ৩০, ২০২৪, ০৭:২৩ পিএম

বৃষ্টির খবরে হাওরে ধান কাটার ধুম

আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশজুড়ে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি জানিয়েছে, আগামী ২ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে। শুক্র ও শনিবার তা বিস্তরলাভ করে দেশজুড়ে হতে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন। চলমান তাপপ্রবাহ শেষে বৃষ্টির পূর্বাভাসে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন বোরোর মৌসুমের কৃষকরা। বৃষ্টির আগে পাকা ধান ঘরে তোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সম্ভাব্য ভারী বৃষ্টিপাতের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষায় হাওর অঞ্চলে ৮০ শতাংশ পরিপক্ব হলে বোরো ধান কাটার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। গত রবিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বৃষ্টি নিয়ে এমন খবরে বোরো ধান কাটার ধুম পড়ে গেছে হবিগঞ্জের হাওরগুলোতে। দাবদাহ উপেক্ষা করে কৃষকরা গোলায় ধান তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

কৃষকরা জানিয়েছেন, সময় কম পাওয়ায় শ্রমিকের বদলে হার্ভেস্টর মেশিনে ঝুকছেন কৃষকরা। এতে দ্রুত সময়ে মাঠের ধান ঘরে তুলতে পারছেন তারা। আগামী ১০-১৫ দিন আবহাওয়া কৃষকদের পক্ষে গেলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী হাওরের কৃষকরা।

সরেজমিনে বাহুবল, লাখাই আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হাওর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, দল বেঁধে নারী-পুরুষ খাস্তে দিয়ে ধান কাটা উৎসবে মেতে উঠেছেন। কোনো কোনো স্থানে কম্বাইন্ড হার্ভেস্টারসহ বিভিন্ন যন্ত্রের মাধ্যমে ধান কাটা হচ্ছে। কৃষকরা জানান, আগাম ও হাইব্রিড জাতের ধান কাটা অনেকটা শেষের পথে। আবহাওয়া ভালো থাকলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ধান কাটা শেষ হবে।

বানিয়াচং উপজেলার কৃষক হানিফ মিয়া বলেন, প্রচণ্ড গরম থাকার পরেও হাওরে রাত দিন ধান কাটা হচ্ছে। হার্ভেস্টর মেশিন মাঠে থাকায় অল্প সময়ের মধ্যেই ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে। প্রতি বিঘা জমির ধান মেশিনে কাটতে খরচ হচ্ছে আড়াই হাজার টাকা।

মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলার ৯টি উপজেলায় আট হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে।

কৃষি অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি বোরো মৌসুমে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এবার এক লাখ ২২ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে চাষ হয়েছে এক লাখ ২৩ হাজার ৭৩৭ হেক্টর জমিতে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ২০ হাজার ৬৬৫ মেট্রিক টন।এ বছর ধানের দাম প্রতি কেজি ৩০ টাকার বেশি হতে পারে। সে হিসেবে ১৫০০ কোটি টাকার ধান উৎপন্ন হতে পারে হবিগঞ্জে।

আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশা গ্রামের কৃষক জয়নাল মিয়া জানান, ধানের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। আগামী ১৫ দিন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার বোরোতে লোকসান গুণতে হবে না।

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক বনি আমিন বলেন, এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হবে। আমারা কৃষকদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছি। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া না হলে কৃষকরা ধান ঘরে তুলতে পারবেন।

এদিকে সুনামগঞ্জ কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে সুনামগঞ্জে দুই লাখ ২৩ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে বোর চাষাবাদ করেছেন কৃষকরা। এখান থেকে এ বছর ১৩ লাখ ৭০ হাজার ২০২ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হবে। যার বাজার মূল্য প্রায় চার হাজার ৪১০ কোটি টাকা।

তবে সুনামগঞ্জ কৃষি বিভাগের উপ পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেছেন, ধান ঘরে তুলতে কৃষকদের সহযোগিতা ও দূর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় জরুরি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তারা মাঠ পর্যায়ে থেকে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!