সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২

পর্যটকদের সেন্টমার্টিন যাত্রায় জালিয়াত চক্র!

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০২৫, ১০:৩২ এএম

পর্যটকদের সেন্টমার্টিন যাত্রায় জালিয়াত চক্র!

জেলা প্রতিনিধি: প্রকৃতির অপরুপ প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারি ১২টি নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে নজরদারি অব্যাহত থাকলেও সেন্টমার্টিন যাত্রায় গত ১৪ দিনে বেশ কিছু অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসন বলছে, অনিয়ম চোখে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
গত ১ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। রোববার পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করেছেন। এর মধ্যে যাত্রার প্রথম দিনেই সরকার প্রদত্ত ট্রাভেল পাস ছাড়া টিকিট বিক্রির অভিযোগে কেয়ারি সিন্দাবাদ নামে একটি জাহাজকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ৩ ডিসেম্বর কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউ ঘাটে পাঁচ যাত্রীর কাছে নকল কিউআর কোডসংবলিত টিকিট শনাক্ত করে ট্যুরিস্ট পুলিশ। এক টিকিটে দুই যাত্রী– সেন্টমার্টিন যাত্রাকালে সূক্ষ্ম এই কারচুপি ধরা পড়ে। এজেন্সি থেকে টিকিট সংগ্রহ করা পর্যটকরা বিপাকে পড়েন। যদিও প্রশাসনের মধ্যস্থতায় পরে তাদের ভ্রমণের সুযোগ দেওয়া হয়।
এদিকে ১১ ডিসেম্বর ‘মিজান ট্রাভেলস’ নামে একটি এজেন্সি থেকে টিকিট কিনে প্রতারণার শিকার হন মানিকগঞ্জ থেকে আসা ৪৪ পর্যটক। অভিযোগ করা হলে এজেন্সিটিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, সরকারি নির্দেশনা বান্তবায়নে ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহায়তা দিয়ে আসছে। বেশ কিছু জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে। সেগুলোর বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ ১২ ডিসেম্বর জাহাজের যাত্রাবিলম্ব হওয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) গ্রেপ্তারের হুমকি দেন এক পর্যটক। পরে তিনি ক্ষমা চেয়ে রক্ষা পান।
ইউএনও তানজিলা তাসনিম বলেন, আমরা প্রতিদিন ভোর থেকে যাত্রা তদারকিতে ঘাটে অবস্থান নিই। কোনো অনিয়ম দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দিনে দুই হাজারের বেশি পর্যটক পরিবহন করার নিয়ম নেই। এ ছাড়া আরও অনেক নিয়ম রয়েছে, যেগুলো তদারকির জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত সার্বক্ষণিক কাজ করছেন।
কক্সবাজার শহর থেকে প্রতিদিন ছয়টি জাহাজে প্রায় দুই হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাচ্ছেন। মৌসুমের শুরুতে দৈনিক যেতেন এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩৫০ জন। জাহাজ মালিকরা জানিয়েছেন,পর্যটকের চাপে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন জাহাজের টিকিট আগাম বিক্রি হয়ে গেছে। এ ছাড়া ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি শেষ। সব মিলিয়ে এই সময়ে অগ্রিম বিক্রীত টিকিটের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার।
গত ১ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ার পর ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করেছেন। ট্রাভেল পাসের জন্য নির্ধারিত সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, গত ১৪ দিনের মধ্যে রোববার দুই হাজার পাসের বিপরীতে সর্বোচ্চ এক হাজার ৮৭১টি পাস ইস্যু করা হয় এবং ছয়টি জাহাজে করে সেন্টমার্টিন যাত্রা করেছেন এক হাজার ৮৫৬ পর্যটক।
এদিকে জাহাজ মালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, শুরুর প্রথম দুই সপ্তাহে পর্যটকের চাপ কম থাকলেও বিজয় দিবসসহ সরকারি ছুটি থাকায় তৃতীয় সপ্তাহে পর্যটকের চাপ বেড়েছে। মাসের শেষ দিন পর্যন্ত সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
তিনি জানান, গত ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য সেন্টমার্টিন দ্বীপ উন্মুক্ত করা হলেও রাতযাপনের অনুমতি না থাকায় সেই মাসে পর্যটকদের আগ্রহ ছিল না বলে জাহাজ চলেনি। ১ ডিসেম্বর থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত রাতযাপনের সুযোগ রাখায় এখন পর্যটক বেড়েছে। প্রতিদিন অনুমতিপ্রাপ্ত ছয়টি জাহাজ আনুপাতিক যাত্রী পরিবহন করছে।ফাইলছবি

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!