নিজস্ব প্রতিবেদক: পতিত ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের দোসর রাজধানীর কর অঞ্চল ১৪ এর কর্মচারী লায়ন বি. এম. সাইদুজ্জামান (সবুজ) এর বিরুদ্ধে থাকা সত্ত্বেও ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন তিনি।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি এবং প্রতারণার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে নতুন কিছু নয়, তবে তার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে নানারকম অপরাধমূলক তথ্য। পতিত সাবেক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সক্রিয় সদস্য লায়ন বি. এম. সাইদুজ্জামান (সবুজ) দীর্ঘদিন ধরে তার রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে গত ১৫ বছর একাধিক অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অবৈধ ভাবে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। রাজনৈতিক দ্বিচারিতা ও আন্দোলন দমন অভিযানে ভূমিকা- বিশেষভাবে আলোচিত জুলাই-আগস্টেও ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ছিলেন তিনি কঠোর বিরোধীপক্ষ। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর। অনুসন্ধানে জানা যায়, তিনি সেই সময় আওয়ামীপন্থি অবস্থান থেকে আন্দোলন দমনে সরাসরি অংশ নেয়ার অভিযোগ উঠে। নিজের অপকর্ম আড়াল করার জন্য কৌশলে ৫ আগস্ট তিনি গণভবনে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পতাকা হাতে ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করেন। কিন্তু তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ থেকে পরবর্তীতে মুছে ফেলা কিছু ছবি এবং সংরক্ষিত অন্যান্য প্রমাণাদি গণমাধ্যম কর্মীদের হাতে আসে । যা তার পল্টিবাজ চরিত্র প্রকাশ পায়। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের অবস্থান পরিবর্তন শুধু রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের কৌশল মাত্র। প্রশাসনের নীরবতা এবং তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া জনমনে প্রশ্ন সৃষ্টি করছে। ফ্যাসিবাদের দোসর থাকাকালীন দলীয় প্রভাব ও অবৈধ সম্পদের পাহাড়-লায়ন বি. এম. সাইদুজ্জামান (সবুজ) তার বাবা আদিল উদ্দীনের নিয়োগ তদবির এর প্রভাব ব্যবহার করে তাকে (এনবিআর) -এ অফিস (এমএলএসএস) হিসেবে যোগ দিয়ে খুব তাড়াতাড়ি পদোন্নতি পেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হন এবং সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সদস্য পদে আসীন হন। এরপর তিনি রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক সুযোগ কাজে লাগিয়ে একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক বনে যান।
লায়ন বি,এম,সাইদুজ্জামান সুবুজ এর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনসমূহ (ক্রমিক অনুযায়ী):
১. প্রোপাইটারশিপ, এট ওয়েল ব্রিজ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর ১৫ ডিসেম্বর ২০২১
২. অ্যাডভাইজার, অন্ন ফুড – ৮ অক্টোবর ২০২০
৩. অ্যাডভাইজার, রোদ্দুর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন- ৭ অক্টোবর ২০২০
৪. সিইও, এট ওয়েল কটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-২৭ জুলাই ২০২০
৫. ওয়ার্ক এট মেডিকেল.নেট- ২৬ জুলাই ২০২০
৬. ওয়ার্ক এট লায়ন্স ক্লাব অফ ঢাকা সেন্ট্রাল গ্রিন সিটি- ১ জুলাই ২০২০
৭. সিইও ও ফাইন্যান্স ডিরেক্টর, ড্রাগন ফোর্স সিকিউরিটি লিমিটেড- (৭ অক্টোবর ২০২০)
৮. প্রেসিডেন্ট, ই-এক্স ক্যাডেট অফ থ্রি-এসবিএন, কালিগঞ্জ- ৪ এপ্রিল ২০১৯
৯. সিইও ও ফাইন্যান্স ডিরেক্টর,ওয়েল সার্জিক্যাল অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড – ২২ মার্চ ২০১৮
১০. অ্যাডভাইজার, সবুজ দেশ নিউজ (অনিবন্ধিত- নিউজ পোর্টাল) ২৭ মার্চ ২০১৭
১১. অ্যাডভাইজার, ব্লাড ব্যাংক অফ কালিগঞ্জ, ঝিনাইদহ – ১ জানুয়ারি ২০১৭
১২. লাইফ মেম্বার, বাংলাদেশ লায়ন্স ফাউন্ডেশন – ২৬ নভেম্বর ২০১৫
১৩. সিইও ও ফাইন্যান্স ডিরেক্টর, গোল্ড এগ্রো লিমিটেড ও গোল্ড হ্যাচারি অ্যান্ড ফিশারিজ লিমিটেড – ১ জানুয়ারি ২০১৫
১৪. প্রোপাইটারশিপ, এস-টি কর্পোরেশন-২০১৩
১৫. প্রোপাইটারশিপ, সবুজ বাংলা রেস্টুরেন্ট, কালিগঞ্জ-১ জানুয়ারি ২০১৩
১৬. সিইও, গ্রিন ঢাকা (রেন্ট-এ-কার) – জানুয়ারি ২০১২
১৭. প্রোপাইটার শিপ, রাজধানী বস্ত্র বিতান অ্যান্ড ফ্যাশন হাউজ, কালিগঞ্জ-২৭ জুলাই ১৯৯৬
এছাড়াও,তিনি ঢাকার সাভারের আমিনবাজারে বড়-বরদর্শী মৌজায় "ঢাকা ইকো গার্ডেন সিটি" নামে একটি হাউজিং প্রকল্পের সাথে সরাসরি জড়িত এবং এটি পরিচালনা করাচ্ছেন তার বাবা আদিল উদ্দীনকে দিয়ে। ভুক্তভোগীদের দলিল, মৌজা ম্যাপ এবং লায়ন বি,এম,সাইদুজ্জামান সবুজের ফেসবুক পেইজে পাওয়া তথ্য এই প্রকল্পে তাদের সম্পৃক্ততা প্রমাণ মিলে।
পিতা-পুত্রের দুর্নীতির জাল আদিল উদ্দীন মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারে ইউনিটে কর্মরত অবস্থায়ই সরকারি চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ঘুষ গ্রহণ, বদলি বাণিজ্যসহ একাধিক দুর্নীতিতে জড়িত আছেন এবং এই অর্থে তারা রাজধানীর বছিলায় সিলিকন সিটিতে এক একর জমি ক্রয় করে নির্মাণ করছে,এম এম শপিং কমপ্লেক্স-(বর্তমানে নির্মাণাধীন) -যার ডিরেক্টরশিপ স্ত্রী সালমা আদিল এর নামে। এটি সরকারি চাকরি ১৯৭৯ বিধিমালার সরাসরি লঙ্ঘন। অভিযোগের সার্বিক বিষয় নিয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়ো যায়নি। রাজনৈতিক রূপান্তরের অপচেষ্টা বর্তমানে তিনি বিলুপ্ত এনবিআর আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে রাজনৈতিক পরিচয় পাল্টানোর অপচেষ্টা করছেন।তবেতার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে ৫ আগস্টের আগে প্রকাশিত দুটি ছবিতে"ভরসা রাখুন নৌকায়"লেখায় তিনি তার রাজনৈতিক আনুগত্য স্পষ্ট করেছেন। লায়ন সবুজ ও তার পিতা যত অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন, তা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দ্বারা তদন্ত করে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
আপনার মতামত লিখুন :