শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২

সড়কের দুই পাশেই যেনো অক্সিজেনের ভান্ডার

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৯, ২০২৫, ১১:৪০ এএম

সড়কের দুই পাশেই যেনো অক্সিজেনের ভান্ডার

ডেইলি খবর ডেস্ক: এ যেনো অক্্িরজেনের ভান্ডার। সড়কের দুই পাশজুড়ে সারি সারি কৃষ্ণচূড়া গাছ। পিচঢালা পথ সবুজ ছায়ায় ঢাকা। যতদূর দৃষ্টি যায়, নির্মল প্রকৃতির ছোঁয়া। কোলাহলমুক্ত সড়কে পাখির ডাক শোনা যায়। এইপই এখন ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার প্রায় সব সড়কের দৃশ্য এখন এমন। এই বদলে যাওয়ার কারিগর এক দল উদ্যমী তরুণ।তারা গড়ে তুলেছেন ‘অক্সিজেন’ নামের একটি সংগঠন। নগর ও গ্রামকে সবুজায়নের পাশাপাশি তারা শিক্ষা ও মানবতার সেবায় কাজ করছেন।
অক্সিজেনের জন্ম মানবিকতা থেকে। সীমান্তবর্তী গ্রামের কোনো শিশুর পড়ার জায়গা নেই, কোনো প্রবীণ অক্ষর চিনতে পারেন না কিংবা কোনো অসহায় মানুষের থাকার জায়গা নেই এমন উপলব্ধি থেকে এর শুরু।
প্রথমে নিজেদের শ্রম আর সামান্য অর্থ নিয়ে তারা গড়ে তোলেন উপজেলার প্রথম পাঠাগার। এরপর পরিবেশ, প্রকৃতি ও জীবনের সহায়ক হয়ে ধীরে ধীরে ‘অক্সিজেন’ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এক নির্ভরযোগ্য নাম হয়ে ওঠে। ২০১৭ সালের ২৬ মার্চ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নিয়ে ৭৫ সদস্য নিয়ে এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। ২০২০ সালের ২৬ মার্চ গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর থেকে পাঠাগারের নিবন্ধন নেওয়া হয়। বর্তমানে পাঠাগারটিতে বইয়ের সংখ্যা তিন হাজারেরও বেশি। এখন পর্যন্ত তারা দুই হাজার ৫০০ কৃষ্ণচূড়া, ৫০০ নিম গাছ ও ১২ হাজার তালের বীজ রোপণ করেছেন।
শুধু বৃক্ষরোপণ নয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও শিক্ষার আলো ছড়াতে কাজ করছে সংগঠনটি। গড়ে তুলেছে ‘অক্সিজেন লোকস্মৃতি জাদুঘর’। এটি এলাকার ঐতিহ্য ও বিলুপ্ত স্মৃতি সংরক্ষণ করছে। এ ছাড়া অসচ্ছল ব্যবসায়ীদের জন্য দোকান, দুস্থদের ভ্যানগাড়ি, গৃহহীনদের আবাসন এবং সুপেয় পানির জন্য নলকূপ বসানোর কাজও তারা করে যাচ্ছেন। এমনকি নারীদের স্বাবলম্বী করতে সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ ও বিতরণ করা হচ্ছে। সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক সুমি কায়সার জানান, বিলুপ্তপ্রায় দেশি উদ্ভিদ সংরক্ষণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তারা ভেষজ উদ্যান গড়ে তুলেছেন।
সচেতনতা, মানবতা ও সংস্কৃতির যৌথ বিকাশ-এই সংগঠনের বড় কার্যালয় বা সুবিধাভোগী নেতৃত্ব নেই। এটি সাত সদস্যের নির্বাহী কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোজাহেদুল ইসলাম ইমনের নেতৃত্বে বর্তমানে সদস্য সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়েছে। সদস্যদের ব্যক্তিগত অনুদান ও সাধারণ মানুষের ক্ষুদ্র সহযোগিতা এর মূল শক্তি। অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয় হরিপুরের বটতলী বাজারের পাঠাগারটি।
মোজাহেদুল ইসলাম ইমন বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, সমাজ পরিবর্তনের মূল শক্তি হলো সচেতনতা, মানবতা ও সংস্কৃতির যৌথ বিকাশ। আমরা তরুণ প্রজন্মের মাঝে পরিবেশ সচেতনতার সমন্বিত বোধ জাগিয়ে তুলতে চাই।
তিনি জানান, অক্সিজেনের শুরুটা সহজ ছিল না। স্থানীয়দের অনেকে প্রথমে একে ‘ধান্দাবাজি’ বলে কটাক্ষ করতেন। কিন্তু তারা থামেননি। গত কয়েক বছরে তারা ৩৫ হাজার ৮৫০ জনের পাশে দাঁড়িয়েছেন। পাঁচটি ঘর নির্মাণ, ৩৭টি টিউবওয়েল স্থাপন এবং পাঁচ হাজার মানুষের একবেলা আহারের ব্যবস্থা করে তারা মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন।
উপজেলার মানিকহারি গ্রামের মিজানুর রহমান বলেন, ‘অক্সিজেন থেকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন অন্যের কাপড় সেলাই করে আমার সংসার চলছে।’ সায়েদা বেগম বলেন, ‘বাড়িতে টিউবওয়েল ছিল না। অক্সিজেনের ছেলেরা আমার কষ্ট দেখে বিনামূল্যে টিউবওয়েল বসিয়ে দিয়েছে।’
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ-এই সংগঠনের তহবিল ও লোকবল সংকট রয়েছে। অনেক সময় কাজ করতে গিয়ে সদস্যদের পকেট ফাঁকা হয়েছে, তবুও তারা থামেননি। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাইদুজ্জামান সাগর বলেন, ‘সব বাধা পেরিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আর্থিক সহযোগিতা পেলে আমাদের কাজ আরও ত্বরান্বিত হবে।’ চিকিৎসক আবু হোসেন জানান, সীমিত সামর্থ্য নিয়েও অক্সিজেন যে মানবিক দায়িত্ববোধ, স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে, তা অনুকরণীয়।
হরিপুর মহিলা কলেজের প্রভাষক রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘অক্সিজেনের রোপণ করা গাছগুলো এখন মানুষের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। পর্যটকরাও এখন এই লাল-সবুজ দৃশ্য দেখে আকৃষ্ট হন।’
ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রধান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘একটি রাস্তায় তারা নিম গাছ রোপণ করে নিম সড়ক নাম দিয়েছে। এভাবে তরুণরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’সদ্য বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র বর্মণ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অক্সিজেন সীমান্তবর্তী হরিপুরের জন্য একটি রোলমডেল। তাদের এগিয়ে নেওয়া বিত্তবানদের দায়িত্ব।’ছবি-সংগৃহীত
 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!