ক্রিস্টাল ইন্সুরেন্স এর লালভবন শাখা, ১৮ রাজউক এভিনিউ, মতিঝিল ঢাকা অফিসের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান গোলাপ। একই অফিসের অপর দুই কর্মকর্তা মোছাম্মৎ শারমিন ইসলাম-সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট,ও সুলতানা আক্তার বর্ষা-অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
একই অফিসে কাজ করার সুবাদে শারমিন ইসলাম ও সুলতানা আক্তার বর্ষার মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুই বান্ধবীর মধ্যে টাকা পয়সার আদান-প্রদান ও শুরু হয়। উল্লেখ্য রাজধানীর সবুজবাগ থানা এলাকাধীন দক্ষিণগাঁও মৌজায় শাহীবাগ এলাকায় ৪২৩ ওযুতাংশের একটি জায়গায় হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন থেকে লোন নিয়ে বাড়ি করার জন্য সুলতানা আক্তার বর্ষা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু জায়গার উপরে ফাউন্ডেশন সহ প্রথম তলার স্ট্রাকচার নির্মাণ না করলে হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন থেকে লোন পাওয়া যায় না। তাই হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন থেকে লোন পেলেই টাকা পরিশোধ করে দিবে বলে বান্ধবী শারমিনের কাছ থেকে কয়েকটি ধাপে মোট ২৫ লক্ষ টাকা ধার হিসেবে নেয় সুলতানা আক্তার বর্ষা।
শারমিনের কাছ থেকে নেওয়া ধারের টাকা দিয়ে ফাউন্ডেশন সহ স্ট্রাকচার দাঁড় করায় বান্ধবী বর্ষা। পরিদর্শনে আসে হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন।মনজুর হয় হাউজ বিল্ডিং এর প্রথম ধাপের লোন। কিন্তু মৌখিক চুক্তি মোতাবেক একটি টাকাও ফেরত দেয় না বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের সাংগঠনিক সম্পাদিকা সুলতানা আক্তার বর্ষা। এভাবে হাউজ বিল্ডিং এর যে দ্বিতীয় ধাপের লোনের টাকা ও অনুমোদন হয়, কিন্তু তখনও বর্ষা টাকা ফেরত দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ক্রিস্টাল ইন্সুরেন্সের মুস্তাফিজুর রহমান গোলাপ এর মধ্যস্থতায় টাকা পরিশোধের বিষয়ে নিয়ে আলোচনা করা হয়। আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় পাওনা টাকার বিনিময়ে নির্মাণাধীন ভবনের চতুর্থ তলার উত্তর-দক্ষিণ দুইটি ইউনিট শারমিন ইসলামের নামে বায়না দলিল সম্পাদন করে দেয়া হবে। বায়না দলিলে এক নম্বর সাক্ষী হয় ক্রিস্টাল ইন্সুরেন্সের মোস্তাফিজুর রহমান গোলাপ। বায়না দলিলে দুই ইউনিটের মূল্য ২৬ + ২৬ = ৫২ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। উক্ত বায়না দলিলে ২৫ লক্ষ টাকা পরিশোধ দেখিয়ে আরও ২৭ লক্ষ টাকা পরিশোধ করে ফ্লাট দুটি বুঝে নেওয়ার শর্ত ছিল। পরবর্তীতে টাকার প্রয়োজন হলে আবারও সুলতানা আক্তার বর্ষা বান্ধবী শারমিনের নিকট থেকে আরো ৭ লক্ষ টাকা গ্রহণ করে। মোট পরিশোধিত ২৫ +৭=৩২ লক্ষ টাকার বিষয়টি কোন নতুন স্ট্যাম্পে না লিখে মোট ৩২ লক্ষ টাকার একটি চেক শারমিন ইসলামকে প্রদান করে সুলতানা আক্তার বর্ষা। এই ঘটনার কিছুদিন পর মারা যান বর্ষা। বর্ষা মারা যাওয়ার পর ঐ চেক ক্যাশ করা সম্ভব হয় না। পরবর্তীতে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বর্ষার স্বামী অন্যতম ঋণ খেলাপি আওয়ালের সাথে বৈঠক হয়।
উক্ত বৈঠকে গৃহীত ৭ লক্ষ টাকার পরিবর্তে চার লক্ষ টাকা পরিশোধ দেখিয়ে নতুন করে বায়না নামা দলিল করা হয়। গত ৬/১০/২০২৪ ইং তারিখে মো: রবিউল আওয়াল ও তার ছেলে সাব্বির আহমেদ সরদার ওয়ারিশ হিসেবে একটি বায়না নামা দলিল সম্পাদন করে, উক্ত দলিলে ফ্লাট দুইটির মূল্য ২৭+২৭= ৫৪ লাখ টাকা মূল্য ধার্য করা হয়। উক্ত বায়না দলিলে ফ্ল্যাটের মালিকের মূল্য ৩৬ লক্ষ টাকা এবং হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের ঋণ বাবদ ১৮ লক্ষ টাকা পরিশোধ করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়। উক্ত দলিলে ২৫ + ৪=২৯ লক্ষ টাকা পরিশোধ পেয়ে ৬/১০/২০২৪ ইং তারিখে চার লক্ষ টাকা গ্রহণ করে। এভাবে ফ্ল্যাট বাবদ মোট ৩৩ লক্ষ টাকা গ্রহণ করে। অবশিষ্ট তিন লক্ষ টাকা ছয় মাসের মধ্যে পরিশোধের শর্ত ছিল এবং হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের ১৮ লক্ষ টাকা মালিক ১৬৩৪০ টাকা মাসিক কিস্তিতে পরিশোধের শর্ত ছিল।
এই ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পর ছেলের লেখাপড়ার কথা বলে আরও ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করে ঋণ খেলাপি আউয়াল। এখানে উল্লেখ্য ঋণ খেলাপির জন্য অর্থ ঋণ আদালতে একটি মামলা ও হয়েছে ইতিমধ্যে আওয়াল এর বিরুদ্ধে। অর্থজারী মামলা নম্বর ৩৫৩/২০২৪। যে মামলায় ইতিমধ্যে আউয়ালের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে শাহবাগ থানায়। এদিকে ঋণের মাসিক কিস্তি মালিকপক্ষ প্রতি মাসে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও ঋণ হিসেবে টাকা জমা দেয় না ঋণ খেলাপি আউয়াল।
সামগ্রিক বিষয়ে অবগত করে মালিকদের
২৬/১/২০২৫ ইং তারিখে প্রথম নোটিশ পাঠায় শারমিন ইসলাম যেখানে হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের ঋণের ফাইল কপি ও প্রেরণ করা হয়।
উক্ত নোটিশে ছয় মাসের মধ্যে চতুর্থ তলার ঋণের দায় শারমিন ইসলামের নামে বদলি করে ত্রিপক্ষীয় দলিল সম্পাদন করে ফ্লাট মালিকদের পাওনা টাকা বুঝে নেওয়ার অনুরোধ করা হয়। মালিকের ঠিকানায় (রেজিঃ )পত্র প্রেরণ করলেও ডাক পিয়ন মালিক অনুপস্থিত উল্লেখ করে পত্র ফেরত পাঠায়। ফলে নোটিশটি আউয়াল এর হোয়াটসঅ্যাপ এ পিডিএফ করে পাঠানো হয় যা আওয়াল দেখে।
উল্লেখ্য আউয়াল এর স্ত্রী বর্ষা মারা যাওয়ার পর আউয়াল আবারো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। গত ১০/৫/২০২৫ ইং তারিখে রাত আনুমানিক বারোটার দিকে আউয়ালের বর্তমান স্ত্রী রেশমি আক্তার লিজা তার বোন শিরিন ও ভাই তুহিন চতুর্থ তলায় শারমিনের ঘরে প্রবেশ করে ফ্ল্যাটের কিস্তির টাকা দাবি করে। ওই ঘটনার ১০থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে রবিউল আউয়াল এসে তার ছেলেকে বিদেশ থেকে আনতে হবে বলে এক লক্ষ টাকা দাবি করে।১৩/৫/২০২৫ ইং তারিখে রাত বারোটার দিকে ১০০ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে টাকা নেয় এবং ফ্ল্যাটের মূল্য বাবদ বাকি ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা চতুর্থ তলার ঋণ শারমিনের নামে বদলি করে ত্রিপক্ষীয় দলিল সম্পাদন কালে গ্রহণ করবে বলে প্রতিশ্রæতি দেয়। উল্লেখ্য অক্টোবর ২০২৪ এ ফ্ল্যাটে ওঠার পর থেকে হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন এর ঋণের কিস্তি বাবদ আউয়ালকে ৮৯৩৮০/টাকা পরিশোধ করেন শারমিন কিন্তু ঋণ হিসেবে তা জমা করা হয় না।
এদিকে আউয়ালের সাথে গোপনে যোগসাজশ করে চতুর্থ তলার উত্তর-দক্ষিণ ইউনিট দুটি, হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন এর মাধ্যমে ত্রিপক্ষীয় দলিল করে ক্রয় করে কুক্ষিগত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয় ক্রিস্টাল ইন্সুরেন্স এর মুস্তাফিজুর রহমান গোলাপ। মনের ভিতরে দূরভিসন্ধি রেখে শারমিন এবং বর্ষা দুই বান্ধবীর মধ্যে মীমাংসার ব্যবস্থা করে বায়না দলিল করার উদ্যোক্তা এবং উক্ত দলিলের প্রথম সাক্ষী মুস্তাফিজুর রহমান গোলাপ এখন এক প্রকার প্রকাশ্যে ভিলেন হিসেবে আবির্ভূত হন, চলে আসেন পর্দার সামনে যেটি স্পষ্টতই প্রতারণার শামিল। ইতিমধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান গোলাপ ঋণ খেলাপি আউয়ালকে নিয়ে হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনে দুই দফায় আবেদন করেছেন ত্রিপক্ষীয় দলিল সম্পাদন করার জন্য।
রবিউল আউয়াল গং একই সম্পত্তি দুইজনের নিকট বিক্রয়ের যে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং একই সাথে ওই ভবনে বসবাসকৃত মানুষদের সাথে তার বর্তমানে বিবাহিত দ্বিতীয় বউ ও বউয়ের বাবা ভাই ও বোনদের মাধ্যমে অশান্তি ও বিবাদ সৃষ্টি করছে,তার মূল উদ্যোক্তা এই মোস্তাফিজুর রহমান গোলাপ।
এ বিষয়ে গোলাপের সাথে দেখা করে তার মতামত জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে দেখা না করে বারবার কালক্ষেপণ করেন। পরবর্তীতে মুঠোফোনে তার সাথে কথা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা তা লেখার জন্য বলেন। এদিকে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় মোস্তাফিজুর রহমান গোলাপ বিগত ফ্যাসিবাদ সরকারের আমলে একজন সক্রিয় ও প্রভাবশালী কর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার জন্মস্থান নওগাঁয় তিনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের এই প্রভাবশালী নেতা ও ক্রিস্টাল ইন্সুরেন্সের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান গোলাপের এমন কর্মকান্ডের কারণে সর্বস্বান্ত হতে চলেছেন একই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোসাম্মৎ শারমিন ইসলাম। নিরুপায় হয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছেও অভিযোগ জানিয়েছেন শারমিন ইসলাম। নিরুপায় শারমিন ইসলাম প্রশাসনের সকল স্তরের কাছে সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :