শুক্রবার, ৩০ মে, ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

১৮-২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেছে-গভর্নর

ব্যবসা-বাণিজ্য ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ২৮, ২০২৫, ০৯:২৮ এএম

১৮-২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেছে-গভর্নর

বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামলে ১৮ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেছে দেশের বাইরে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এ পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছে। এর সিংহভাগ অর্থই পাচার করেছে ১১ ব্যক্তি ও শিল্পগোষ্ঠী। একজনই ৩৫০টি বাড়ি কিনেছেন। পাচারকৃত টাকা উদ্ধারে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে পাচারকারীদের দেশে থাকা সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। শিগগিরই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকাল বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব কথা জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
এ সময় জানানো হয়,অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থা থেকে বিএফআইইউতে সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্টিং ব্যাপকহারে বেড়েছে। চলতি অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই তা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৫৬ শতাংশ বেড়েছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএফআইইউ-এর প্রধান কর্মকর্তা এএফএম শাহীনুল ইসলাম।
আহসান এইচ মনসুর বলেন,অর্থপাচার রোধ বা পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। আমরা কেউ এ ধরনের কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। পাচারের অর্থ ফেরত আনার কাজ গতিশীল করতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। সে জন্য আইনে পরিবর্তন আনা হবে। ফলে টাস্কফোর্সের ক্ষমতাও বাড়বে। পাচারকৃত অর্থ ফেরত আসতে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে। টাকা এখনই আসবে এমন ধারণা করা ভুল। ছয় মাসের মধ্যে কিছু সম্পদ আমাদের ফ্রিজের লক্ষ্য ছিল, সেটি দুই মাসের মধ্যেই করেছি। অন্তর্র্বতী সরকারের লক্ষ্য- প্রথম বছরের মধ্যে বেশিরভাগ সম্পদ জব্দ করা।
গভর্নর বলেন, টাকাপাচারকারীদের ফেরত এনে জেলে ঢোকানো কঠিন ব্যাপার। যেহেতু ব্যাংকের টাকা গেছে, তাই সম্পদ জব্দের মাধ্যমে তা উদ্ধার করার চেষ্টা করছি। এখানে বিভিন্ন আইনি জটিলতা আছে। এখন যদি কারও বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল কেস করি, তাহলে সিভিল কেস করতে পারব না। তাই আগেই ভাবতে হবে, কার বিরুদ্ধে কোন কেস করব। দুটোই আলাদা রাখতে হবে। বিদেশের আইন আর এখানকার আইনে অনেক পার্থক্য রয়েছে। তাই এক কেসের সঙ্গে আরেক কেস সাংঘর্ষিক হলে পুরো জিনিস বাতিল হয়ে যাবে। এ জন্য আন্তর্জাতিক মানও বজায় রাখতে হবে।
বিদেশে ইতোমধ্যে সম্পদ জব্দ হয়েছে, জানিযয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিদেশে একজনের সম্পদ জব্দ হয়েছে। সামনে আরও সম্পদ জব্দ হবে। আমাদের উদ্দেশ্য-পাচারকারীদের ওপর চাপ তৈরি করা, যাতে আদালতের বাইরে গিয়ে অর্থ উদ্ধার করা যায়।কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যবসা বন্ধ করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা কারও ব্যবসা বন্ধ করিনি। যাদের ব্যবসা বন্ধ হয়েছে,অন্য কারণে তা হয়েছে।দুর্বল ব্যাংক নিয়ে গভর্নর বলেন, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা হবে। প্রাথমিকভাবে কিছু ইসলামি ব্যাংক দিয়ে শুরু হবে। একীভূত হলেও আমানতকারীদের অর্থ সুরক্ষিত থাকবে। কারণ ব্যাংকগুলো সরকারি মালিকানায় চলে যাবে। তাই আমানতকারীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।
সভায় জানানো হয়, চলতি অর্থবছরে শুরু থেকে ২৫ মে পর্যন্ত বিএফআইইউতে ২৭ হাজার ১৩০টি সন্দেহজনক লেনদেন ও কার্যক্রম সংক্রান্ত প্রতিবেদন (এসটিআর/এসএআর) দাখিল হয়েছে; গত অর্থবছরের তুলনায় যা ৫৬ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে বিএফআইইউতে মোট ১৭ হাজার ৩৪৫টি দাখিল করা হয়েছে। জুলাই বিপ্লবের পর এ ধরনের রিপোর্টিং ব্যাপক বেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ ধরনের রিপোর্টিং হয় ১৪ হাজার ১০৬টি। এর মানে,গত অর্থবছর রিপোর্টিং বেড়েছিল ২৩ শতাংশ। এ ছাড়া বিএফআইইউ গত অর্থবছরে ১১৪টি আর্থিক গোয়েন্দা প্রতিবেদন বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থার কাছে পাঠিয়েছ। আইন প্রয়োগকারী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ মোট ১ হাজার ২২০টি তথ্য বিনিময়ও হয়েছে, আগের বছরের তুলনায় যা ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি।
অনুষ্ঠানে বিএফআইইউ-এর প্রধান এএফএম শাহীনুল ইসলাম বলেন,অর্থপাচার ও হুন্ডি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা ও লেনদেন ভারসাম্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এই প্রবণতা। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের নির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় স্থিতিশীলতা ফেরাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে কাজ চলছে। ১১টি গ্রæপ নিয়ে যৌথ তদন্ত চলছে। এ কাজে পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংক।বিএফআইইউ-এর পরিচালক মুহাম্মদ আনিছুর রহমান বলেন,অর্থপাচার ধরা ও উদ্ধার করা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এটা চলতেই থাকবে। গত বছর জুলাই মাসের পর বিএফআইইউ-এর কাজ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। সন্দেহজনক প্রতিবেদন অনেক বেড়েছে। বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন পাঠানো চার গুণ বেড়েছে।

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!