শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর ব্রাজিল সফর, গুরুত্ব পাবে বাণিজ্য-বিনিয়োগ

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৩, ২০২৪, ০১:৩১ পিএম

প্রধানমন্ত্রীর ব্রাজিল সফর, গুরুত্ব পাবে বাণিজ্য-বিনিয়োগ

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী জুলাইয়ে ব্রাজিল সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা ডি সিলভার আমন্ত্রণে রিও ডি জেনিরোতে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গার অ্যান্ড পোভার্টির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি।

এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোনও শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা দ্বিপক্ষীয় সফরে ব্রাজিলে যাবেন। ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও অন্যান্য সহযোগিতার ক্ষেত্রে এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে ব্রাজিল আমাদের প্রথম স্বীকৃতি দিলেও এই প্রথমবারের মতো ওই দেশে শীর্ষ পর্যায়ের কোনও রাজনৈতিক সফর হচ্ছে। ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওরো ভিয়েরা সম্প্রতি ঢাকা সফর করেছেন এবং সেটিও ব্রাজিলের কোনও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম ঢাকা সফর।’

সফরের উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে যেকোনও শীর্ষ পর্যায়ের সফরের উদ্দেশ্য থাকে রাজনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় করার জন্য। পাশাপাশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগও গুরুত্ব পাবে।’

সম্পর্কের ধারাবাহিকতা

ব্রাজিলের ফুটবল বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রিয় হলেও ওই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গত ১৫ বছরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশে দূতাবাস খোলে ব্রাজিল। অন্যদিকে ২০১২ সালে ব্রাজিলে দূতাবাস উদ্বোধন করে বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যেকোনও দেশে দূতাবাস খোলা হলে ওই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অত্যন্ত ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর মাধ্যমে দুই সরকারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ অনেকগুণ বাড়ে।’

ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য

ব্রাজিল থেকে তুলা, সয়াবিন, সয়া, চিনির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ, যার পরিমাণ প্রায় ২৫০ কোটি ডলার। অন্যদিকে ব্রাজিলে তৈরি পোশাক, পাটজাত পণ্য পাঠায় বাংলাদেশ, যার পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি ডলার।

এ বিষয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা বিষয়টির পরিবর্তন চাইছি। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ব্রাজিলে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে প্রবেশ করে। আমরা চেয়েছি ব্রাজিলের তুলা দিয়ে তৈরি পোশাক বিনা শুল্কে ওই দেশে প্রবেশাধিকার।’

পাটজাত পণ্যের ওপর ২০২১ থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত ব্রাজিল অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছে। এর ফলে ওই দেশে এই পণ্য রফতানিতে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। সম্প্রতি ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওরো ভিয়েরার সফরের সময়ে বিষয়টি উত্থাপন করা হলে এটি প্রত্যাহারের জন্য বাংলাদেশ আবেদন করলে সেটি তিনি ইতিবাচক বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান আরেক কর্মকর্তা।

আঞ্চলিক ব্যবসা

আগে থেকেই ব্রাজিলের তুলা বাংলাদেশে আসছে। এবার তারা বাংলাদেশে গরুর মাংস পাঠাতে আগ্রহী। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোতেও তারা যেন তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করে।

এ বিষয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ব্রাজিল থেকে আমরা তুলা আমদানি করি। আমরা তাদের অনুরোধ করেছি বাংলাদেশে ওয়্যারহাউজ তৈরি বা ভাড়া করার জন্য, যেখান থেকে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা তুলা কিনবেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশে রাখা তুলা তারা এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশেও পাঠাতে পারবে। ফলে বাংলাদেশিদের তুলা আমদানির যে সময় প্রয়োজন, সেটি একদম কমে যাবে এবং অন্যদিকে বাংলাদেশেও ব্রাজিলের বাণিজ্যিক স্বার্থ বাড়বে বলে তিনি জানান।

জানতে চাইলে আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘গরুর মাংসের ক্ষেত্রে আমরা প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের প্রতি বেশি আগ্রহী। এর মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্য দেশগুলোতে তারা এখান থেকে ব্যবসা করতে পারবে।’

ব্রাজিলের বিনিয়োগ শূন্য

ব্রাজিল পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম অর্থনীতি হলেও বাংলাদেশে ওই দেশের কোনও বিনিয়োগ নেই।

এ বিষয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্রাজিলের বিনিয়োগ চাই। তারা চাইলে তাদের জন্য একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ করা সম্ভব। ব্রাজিল থেকে বিনিয়োগ এলে সেটি ওই দেশের সঙ্গে যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক যে ঘাটতি, সেটির ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়া সহজ হবে বলে তিনি জানান।

মাওরো ভিয়েরার বাংলাদেশ সফরে যত আলোচনা

গত ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ সফর করেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওরো ভিয়েরা। এদিন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওরো ভিয়েরার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকার ব্রিকস সংগঠনে যোগ দেওয়ার আগ্রহের কথা জানায়। আন্তর্জাতিক সহযোগিতাসহ পরিবহন খাতে বায়ো-ফুয়েলসহ কম দূষণকারী জ্বালানির ব্যবহারকে উৎসাহী করতে বাংলাদেশ ও ব্রাজিল পরস্পর সহযোগিতা, গবেষণা ও বিনিয়োগ করতে সম্মত হয়েছে ব্রাজিল।

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বিভিন্ন এজেন্ডা ও আঞ্চলিক উদ্যোগ, বহুপাক্ষিক সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা, কৃষি, পশুসম্পদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শিক্ষা, ক্রীড়া, বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন দুই মন্ত্রী।

একই সময়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর সঙ্গে বৈঠক করেন মাওরো ভিয়েরা। এ সময় দক্ষিণ আমেরিকায় বাংলাদেশি পণ্যের বাজারসুবিধা সম্প্রসারণে সহায়তা করার আগ্রহ জানায় ব্রাজিল। পরে ব্রাজিলকে বাংলাদেশে গরুর মাংস রফতানির অনুরোধ করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।

পরদিন ৮ এপ্রিল সকালে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওরো ভিয়েরার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন তারা।

বাংলাদেশ থেকে সরাসরি তৈরি পোশাক (আরএমজি) পণ্য আমদানি করতে ব্রাজিলকে আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে আরএমজি পণ্য তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সীমিত পরিসরে ব্রাজিলে রফতানি করা হচ্ছে। সরাসরি বাংলাদেশ থেকে আরএমজি পণ্য আমদানি করলে ব্রাজিলের জন্য এটি আরও সাশ্রয়ী হবে।’

বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্য নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্য ব্রাজিলের দিকে ঝুঁকছে। এই ভারসাম্য নিশ্চিত করতে ব্রাজিল বাংলাদেশ থেকে পাট ও পাটজাত পণ্য এবং চামড়াজাত পণ্যসহ আরও পণ্য আমদানি করতে পারে। ব্রাজিল থেকে মূলত চিনি, সয়াবিন তেল ও তুলা আমদানি করে বাংলাদেশ। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানোর বিশাল সুযোগ রয়েছে।’

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!