মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

হেফাজত: শাপলা চত্বরে উত্থান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কাণ্ডে কোণঠাসা

প্রকাশিত: ০৭:১০ এএম, মে ৫, ২০২১

হেফাজত: শাপলা চত্বরে উত্থান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কাণ্ডে কোণঠাসা

আট বছর আগে শাপলা চত্বরের মহাসমাবেশ দিয়ে উত্থান হয়েছিল হেফাজতে ইসলামের। ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি গঠিত হেফাজতে ইসলাম আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শাহবাগে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের বিপরীতে হঠাৎ করে ধর্মের অবমাননা বন্ধে আইন পাসসহ ১৩ দফা দাবিতে ওই বছর আন্দোলনে নামে হেফাজতে ইসলাম নামের এই সংগঠনটি। ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ ঢাকা তারা। অনেকটা এই সমাবেশের মাধ্যমেই তাদের চূড়ান্ত উত্থান ঘটে। এর পর মধ্যখানে অন্যান্য ইস্যুতে টুকটাক মাঠে থাকলেও নতুন করে আলোচনায় আসে চলতি বছরের ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতা করে। এর জেরে ২৬ থেকে ২৮ মার্চ দেশব্যাপী ব্যাপক সহিসংতা চালায়  ধর্মভিত্তিক এ দলটি। চলমান এই সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্রাহ্মবাড়িয়া জেলা। সারাদেশসহ ওই জেলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি নজরে আসতেই বেশ নড়েচড়ে বসে সরকার। অপরাধীদের ধরতে শুরু হয় অভিযান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অপরাধী যেই হোক ছাড় পাবে না। হেফাজতে ইসলামের ২০১৩ সালের ৫ মে এবং ২০২১ সালের ২৬ মার্চের দুটো আন্দোলনই ছিল সহিংস। দুটো আন্দোলনই জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সংগঠনটিকে অরাজনৈতিক সংগঠন বলা হলেও মূলত বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের নেতারাই হেফাজতের নেতৃত্বে রয়েছেন। যদিও এর আমীর ছিলেন হাটহাজারী দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী। তাকে সামনে রেখে এই আন্দোলনের সূচনা হলেও পরবর্তীতে দেখা যায় এর রাজনৈতিক রূপ। মূলত শাপলা চত্বরের আন্দোলনে উত্থান হওয়া দলটি  ব্রাহ্মণবাড়িয়া কাণ্ডে অনেকটাই কোণঠাসা। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ৫ মের মহামাবেশ কেন্দ্র করে দোকানপাট, সরকারি স্থাপনা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পুলিশ ফাঁড়ি, থানা ও গাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, হামলা, নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলার ঘটনায় ৮৩টি মামলা করা হয়। এ বছরের ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর কেন্দ্র করে চালানো তাণ্ডবের ঘটনায় ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৪২টি মামলা হয়েছে। এছাড়া ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় ১২টি মামলা হয়। মোট ২৩৭টি মামলায় অজ্ঞাতনামা প্রায় পৌনে দুই লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় হেফাজতের শীর্ষ স্থানীয় ২১ নেতাসহ সারাদেশে ৯০০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার তদন্তে নেমেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব মামলার চার্জশিট আদালতে জমা দেওয়াই তাদের লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ২০১৩ সালের পর থেকে এই পর্যন্ত হওয়া মামলা গুলোর মধ্যে ২৯টি মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে ৪টি মামলার। মাঝে দীর্ঘ সময় হেফাজতের মামলা নিয়ে পুলিশের নড়াচড়া কম থাকলেও ২৬ মার্চের পর আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে পুলিশ। এ বিষয়ে জনাতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পেন্ডিং মামলাগুলোর চার্জশিট হতে আরও কিছু দিন সময় লাগবে। কাজ চলছে।’ শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামকে হটিয়ে দিতে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী ‘অপারেশন শাপলা’ নাম দিয়ে অভিযান চালায়। ওই অভিযানের আগে ও পরে এক পুলিশ সদস্য ও দুইজন বিজিবি সদস্যসহ ১৩ জন নিহত হয়েছিলেন বলে দাবি পুলিশের। তবে হেফাজতে ইসলাম ও তাদের সমমনা দলগুলোর দাবি ছিল আরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। ২৬ মার্চের তাণ্ডবের ঘটনায় ১৭ জন্য নিহত হয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।    
Link copied!