মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ইন্দিরা গান্ধী

প্রকাশিত: ১০:১৭ এএম, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১

মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ইন্দিরা গান্ধী

চলতি বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে বাংলাদেশ। একই সময়ে উদযাপিত হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। বাঙালি জাতির সবচেয়ে কঠিন সময় অর্থাৎ স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে যেসব দেশ, পত্রপত্রিকা, সাংবাদিক ও স্বনামধন্য ব্যক্তি সহযোগিতা করেছে তাদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা করা জরুরি। যে দেশের সহযোগিতা ছাড়া ৯ মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের জয় ছিল প্রায় অসম্ভব, সে দেশটি হচ্ছে প্রতিবেশী ভারত। ভারতের জনগণ, সেসময়ের সরকার ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আমাদের স্বাধীনতার জন্য যে অবদান রেখেছেন তার কোনো তুলনা হয় না। পাকিস্তান সামরিক জান্তার গণহত্যার মুখে বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। স্বাধীনতাযুদ্ধ পরিচালনাকারী মুজিবনগর সরকার ভারতে থেকেই কার্যক্রম চালিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ভারত শুধু আশ্রয় দেয়নি, প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্রও দিয়েছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সেসময় ভারতে অবস্থানকালে সে দেশের জনগণের সহযোগিতা ও সহমর্মিতার কথা শ্রদ্ধাভরে, কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি। ভারতের দূরদর্শী প্রধানমন্ত্রী নেহরুকন্যা ইন্দিরা গান্ধী বাঙালিদের তার দেশে আশ্রয় ও আহার দিয়েছেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনের জন্য এবং শত্রুর হাতে বন্দি বঙ্গবন্ধুর জীবন রক্ষার জন্য বিশ্বের বহু রাষ্ট্র সফর করেছেন। বাংলাদেশকে সমর্থনের কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেসময়ের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন সেদেশ সফরকালে ইন্দিরা গান্ধীকে অসম্মান করে এবং হতচ্ছাড়া মেয়েলোক হিসেবে উল্লেখ করে বলে, ‘তাকে আমি দেখে নেব।’ তাছাড়া ক্রুদ্ধ নিক্সন মিসেস গান্ধীকে ‘বিচ’ (কুত্তি) ও বাস্টার্ড (বেজন্মা) বলেও গালি দেয়। ইন্দিরা জানতেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঠেকিয়ে রাখতে নিক্সন-কিসিঞ্জার জুটি যা যা দরকার, তা-ই করবে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র-চীনকে মোকাবিলা করার জন্যই ১৯৭১-এর আগস্টে অন্যতম পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ২৫ বছরের মৈত্রীচুক্তি স্বাক্ষর করে ইন্দিরার ভারত। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গণহত্যা শুরু করলে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। গণহত্যা শুরুর মাত্র ১ দিন পর ২৭ মার্চ শনিবার ইন্দিরা গান্ধী গণহত্যার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা করেন। এর ৩ দিন পর ৩১ মার্চ ভারতের লোকসভা বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন জানায়। ৪ এপ্রিল তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে বৈঠককালে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন ইন্দিরা গান্ধী। গণহত্যার পর তখনও কেউ জানে না বঙ্গবন্ধু কোথায়। তিনি জীবিত নাকি পাকিস্তানিরা তাকে হত্যা করেছে। বাংলাদেশ সরকার তখনও গঠিত হয়নি। ঠিক ওই সময়ে বাংলাদেশে গণহত্যার নিন্দা ও স্বাধীনতার প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন জানিয়ে ইন্দিরা গান্ধী অবিস্মরণীয় ইতিহাস সৃষ্টি করেন। তিনি নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে- পাকিস্তান সামরিক চক্রের বাংলাদেশে গণহত্যার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা করেন ২৭ মার্চ। ৩১ মার্চ লোকসভায় গৃহীত সর্বসম্মত প্রস্তাবে প্রতিবেশী বাংলাদেশে গণহত্যা বন্ধের দাবি জানিয়ে বলা হয়, স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম বৈধ ও ন্যায্য। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে উদ্বেগ ও সমবেদনা প্রকাশ করে প্রস্তাবে বলা হয়- “১৯৭০-এর ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পূর্ব বাংলার জনগণ যে নির্ভুল রায় দিয়েছে, সেই গণরায়কে সম্মান দেয়ার পরিবর্তে পাকিস্তান সামরিক সরকার ট্যাঙ্ক, মেশিনগান, বন্দুক, বেয়নেট, ভারী সমরাস্ত্র ও বিমানবহর ইত্যাদি দিয়ে বর্বরোচিত আক্রমণ দ্বারা সে দেশের জনগণকে দমন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ সভা পূর্ব বাংলায় জনগণের ন্যায্য ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সংহতি ঘোষণা করছে। পূর্ব বাংলার নিরস্ত্র জনগণের উপর সকল প্রকার শক্তি প্রয়োগ ও নির্বিচারে গণহত্যা বন্ধের দাবি জানাচ্ছে এ সভা এবং গভীর প্রত্যয় ব্যক্ত করছে যে, পূর্ব বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের মুক্তির এ ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থান জয়যুক্ত হবে।” ৪ এপ্রিল (মতান্তরে ৩ এপ্রিল) ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকের আগের দিন দিল্লিতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এক ঊর্ধ্বতন পরামর্শদাতা তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে আলোচনাকালে জানতে চান, আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে কোনো সরকার গঠন করেছে কি না। মিসেস গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকের সূচনাতে তাজউদ্দীন আহমদ জানান, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণ শুরুর আগে ২৫/২৬ মার্চেই বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করে একটি সরকার গঠন করা হয়। শেখ মুজিবকেই স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি এবং মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠকে যোগদানকারী সব প্রবীণ নেতাই (পরে ‘হাইকমান্ড’ নামে পরিচিত) ওই মন্ত্রিসভার সদস্য। তখন অনেক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ না হওয়া সত্ত্বেও দিল্লিতে সমবেত দলীয় প্রতিনিধিদের পরামর্শে তাজউদ্দীন নিজেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উপস্থাপিত করেন ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকে। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, তাজউদ্দীন আহমদের এই উপস্থিত সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে অসামান্য শক্তি সঞ্চারিত হয়। সদ্য গঠিত বাংলাদেশ সরকারের আবেদন অনুসারে স্বাধীনতা ঘোষণার মাত্র ৮/৯ দিনের মধ্যে ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে সকল প্রকার সহযোগিতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেন। ফলে স্বাধীনতা ঘোষণার শুরুতেই স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সম্ভাবনাময় হয়ে ওঠে। কারো প্রশ্ন থাকতে পারে, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এত কম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে সাহায্য-সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিলেন কেন? উত্তরে ৩টি কারণের কথা বলা যেতে পারে: প্রথমত, ১৯৪৭ সালে পাক-ভারত প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই দুদেশের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক ছিল। ১৯৬৫ সালে দুদেশের স্বল্পস্থায়ী যুদ্ধের কথা কারো অজানা নয়। তাছাড়া পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতি গোড়া থেকেই ভারতের সহানুভূতিশীল মনোভাব ছিল। দ্বিতীয় কারণ ছিল, আদর্শগত। ভারতের কংগ্রেস ও বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সংসদীয় গণতন্ত্র এবং অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তৃতীয় কারণটি একেবারেই মানবিক। পূর্ব বাংলায় নিরীহ জনগণকে পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর নির্বিচার হত্যায় সমগ্র দুনিয়ার মানুষ আলোড়িত হয়েছিল। তাছাড়া ভৌগোলিক নৈকট্যের কারণে পূর্ব বাংলার মানুষের প্রতি ভারতের মানবিক সহানুভূতি ও সমবেদনায় সাড়া পড়েছিল সবচেয়ে বেশি। এমন অবস্থায় ভারত সরকার ও সেদেশের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরার পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে সমর্থন করার রাজনৈতিক ও মানবিক উভয় কারণই সমানভাবে ছিল। ১০ এপ্রিল শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠনের কথা ঘোষণা করা হয়। সেদিন রাতে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এক দীর্ঘ ভাষণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষাপটসহ বিস্তারিত বর্ণনা করেন। ভারতের শিলিগুড়ির এক অজ্ঞাত বেতার কেন্দ্র থেকে এ ভাষণ প্রচারিত হয়। পরে ভাষণটি আকাশবাণীর নিয়মিত কেন্দ্রসমূহ থেকে পুনঃপ্রচারিত হয়। ১৭ এপ্রিল ভারত সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আমবাগানে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বৈদ্যনাথতলার নতুন নামকরণ করেন মুজিবনগর। জুলাইয়ের শেষদিকে বিশ্ব রাজনীতিতে একটি নাটকীয় ঘটনা ঘটল, ভারতের জন্য যা ছিল উদ্বেগজনক। পাকিস্তানের সামরিক সরকারের সহযোগিতায় খুব গোপনে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. হেনরি কিসিঞ্জার চীন সফরে যায়। এই সফরে পাকিস্তানের মধ্যস্থতায় এবং কিসিঞ্জারের দূতিয়ালিতে আমেরিকার সঙ্গে চীনের বরফশীতল সম্পর্কের অবসান ঘটে। এই ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্যস্থতায় পাকিস্তান বিশ্বের দুই বৃহৎ শক্তির প্রিয়পাত্রে পরিণত হলো। ভারতের ওপর আরও চাপ সৃষ্টির অসৎ উদ্দেশ্যে নতুন শক্তিতে বলীয়ান পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ২ আগস্ট ঘোষণা করল- রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে কারাগারে আটক শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার খুব শিগগিরই শুরু হবে। ভারতের সরকার ও সে দেশের জনগণ জেনারেল ইয়াহিয়ার ন্যক্কারজনক ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ জানায়। দিল্লি, কলকাতা, বোম্বেসহ ভারতের বড় বড় শহরে শেখ মুজিবের বিচারের উদ্যোগের প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সুস্পষ্ট ভাষায় বিশ্ববাসীসহ পাকিস্তানকে জানিয়ে দিলেন, শেখ মুজিবের বিচারের আয়োজন করা হলে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। পাকিস্তানকে মুজিবের বিচারপ্রহসন বন্ধে চাপ দেয়ার জন্য ইন্দিরা বিশ্বের বিভিন্ন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানকে চিঠি লিখলেন। ৪ আগস্ট লোকসভায় সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা শেখ মুজিবের জীবন রক্ষার জন্য যেকোনো উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানায়। তবে যেরকম নাটকীয়ভাবে চীন-মার্কিন সম্পর্ক নতুনভাবে শুরু হয়, এর চেয়ে আরও অধিক নাটকীয়তার মধ্যে দিল্লিতে ৯ আগস্ট ভারত-রাশিয়া মৈত্রীচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার শরণ সিং ও সফররত রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদ্রে গ্রোমিকো ২৫ বছর মেয়াদি ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো- চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দুই দেশের একটি যদি তৃতীয় কোনো রাষ্ট্র দ্বারা আক্রান্ত হয়, তখন অপর দেশ তার মিত্রের সাহায্যে এগিয়ে আসবে। সোভিয়েত আক্রান্ত হলে ভারত এবং ভারত আক্রান্ত হলে সোভিয়েত সব রকমের সাহায্য করতে পারবে। আখেরে এ চুক্তির ফল ভোগ করেছে বাংলাদেশ। ভারত-সোভিয়েত মৈত্রীচুক্তি স্বাক্ষরিত না হলে একাত্তরে ৯ মাসের যুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করতে পারত কি না প্রশ্ন থাকে। ডিসেম্বরে বিজয়ের চূড়ান্ত ক্ষণে সপ্তম নৌবহরের মাধ্যমে আমেরিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল। ওই বিপদের সময় ত্রাণকর্তা হিসেবে এগিয়ে আসে সোভিয়েত ইউনিয়ন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত সৃষ্টি এবং পাকিস্তান সরকারের অত্যাচারে ভারতে আসা বাংলাদেশের এক কোটি মানুষের চাপে পিষ্ট ভারতে সেসময়ের পরিস্থিতি বর্ণনা করার জন্য ইন্দিরা গান্ধী নভেম্বরের দিকে বিশ্বের শক্তিশালী কিছু দেশ সফর করেন। অবশেষে পাকিস্তানই ‘সুযোগ’ করে দেয় ভারতকে। ৩ ডিসেম্বর আকস্মিক ভারত আক্রমণ করে বসে পাকিস্তান। পাল্টা আক্রমণে বাধ্য হয় ভারত সরকার। এ সময় বাংলাদেশ এবং ভারত সরকারের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যৌথ বাহিনী গঠিত হয়। মুক্তিবাহিনীর গেরিলা হামলায় পাকিস্তানি সৈন্যরা বিভিন্ন স্থানে পিছু হটতে বাধ্য হয়। মুক্তিবাহিনী নব উদ্যমে আক্রমণ শুরু করলে পাকিস্তানি সেনারা বেসামাল হয়ে পড়ে। অবশেষে পর্যুদস্ত পাকিস্তানি বাহিনী ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। আমাদের মুক্তিসংগ্রামে ভারতের অবিস্মরণীয় অবদানের কথা স্বীকার করতেই হবে। সে দেশের জনগণ ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সার্বিক সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া ৯ মাসের যুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ আরও জটিল হতো। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ১৪ হাজার ভারতীয় সেনাসদস্য জীবন দান করে। পৃথিবীর সব দেশের আগে ভারতই সর্বপ্রথম (৬ ডিসেম্বর) বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। বাঙালি জাতি প্রতিবেশী ভারত, সে দেশের জনগণ ও মহীয়সী ইন্দিরা গান্ধীকে চিরকাল শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। লেখক: মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক গবেষক, সিনিয়র সাংবাদিক।
Link copied!