মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি ঘরনাার সাহাবুদ্দিনের সীমাহীন দুর্নীতি,টেলিটক লুটে খাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৯:৫৯ এএম, জুন ২৭, ২০২২

বিএনপি ঘরনাার সাহাবুদ্দিনের সীমাহীন দুর্নীতি,টেলিটক লুটে খাচ্ছে

ডেইলি খবর ডেস্ক: বিএনপির ঘরনাার সাহাবুদ্দিনের সীমাহীন দুর্নীতি, টেলিটক লুটে খাচ্ছে। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার কার্যালয়ের ডিভিশন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন এই সাহাবুদ্দিন। এখন তিনি সরকারি মোবাইল কোম্পানি টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)।বিএনপির বিশ্বস্ত কর্মি বলেই ওই সময়ে তিনি এই দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তিনি এখন আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত কর্মি। এই সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় সম্পৃক্ততাসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে। এর মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি। বিটিআরসির তদন্তে তার বিরুদ্ধে অনিয়মে সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকেও লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে তদন্ত হওয়া জরুরি বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার কার্যালয়ের ডিভিশন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন সাহাবুদ্দিন। বিএনপি ঘরানার ব্যক্তি হিসাবেই পরিচিত তিনি। সরকার পালটানোর সঙ্গে সঙ্গে ভোল পালটে তিনি আওয়ামী লীগার বনে যান। সুত্রগুলো জানায়,টেলিটকের মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের শতকরা ৯০ ভাগ ক্রয় প্রক্রিয়ায় কোনো দরপত্র আহ্বান করা হয় না। এ ডিপার্টমেন্টের মাধ্যমে গত ৩ বছরে প্রায় ৩৪২ কেটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে। এছাড়া বিভিন্ন জেলায় টেলিটকের টাওয়ার ভাড়ার নামেও চলছে লাগামহীন দুর্নীতি। টেলিটকে ডিজিএম পদমর্যাদার কর্মকর্তারা যেখানে কোনো গাড়ি পান না সেখানে এমডি একাই দখল করে আছেন ৫টি গাড়ি। নিজের জন্য, স্ত্রীর জন্য, দুই ছেলের জন্য দুটি, এমনকি শ্বশুরবাড়ির জন্য একটিসহ ৫টি গাড়ি ব্যবহার করেন টেলিটক এমডি বিএনপির ঘরনার এই সাহাবুদ্দিন। অভিযোগ উঠেছে,দুর্নীতি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠেছেন সাহাবুদ্দিন। গড়ে তুলেছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। রাজধানীর পিঙ্ক সিটির এ ব্লকে ডুপ্লেক্স বাড়িসহ ঢাকায় রয়েছে তার ৯টি বাড়ি। বসুন্ধরা আবাসিক এইচ ব্লকে পাঁচ কাঠায় ৯ তলা বাড়ির কাজ শেষ পর্যায়ে,বাড্ডার টেকপাড়ায় ১০ কাঠা জায়গায় টিনশেড ঘর, রূপনগরে ১৫ কাঠার ২টি প্লট, পশ্চিম রামপুরায় ৮ তলা বাড়ি, আফতাবনগরে ৫ কাঠা প্লটে বাড়ি, মধ্য বাড্ডায় ৫ কাঠা জায়গার উপর ৬ তলা বাড়ি, বাড্ডা কাদেরিয়া হাউজিংয়ের পাশে ৩৫ কাঠার দুটি প্লট, পশ্চিম ধানমন্ডির বসিলায় ২০ কাঠার ২টি প্লট ও পশ্চিম নাখালপাড়ায় ৬ তলার একটি বাড়ি রয়েছে সাহাবুদ্দিনের। ঢাকার বাইরে ৭২ বিঘা জমি কিনেছেন। এছাড়াও নামে-বেনামে বহু সম্পত্তির মালিক বনেছেন সাহাবুদ্দিন। ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল বা ভিওআইপি সরকারের রাজস্ব ফাঁকির অন্যতম মাধ্যম হিসাবে এখনো সচল। দায়িত্বশীলদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এ ব্যবসায় ভর করে শত শত কোটি টাকা চলে যাচ্ছে একটি চক্রের কব্জায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জালে মাঝেমধ্যে জড়িতদের কেউ কেউ ধরা পড়লেও থেমে নেই অবৈধ এ ব্যবসা। অভিযোগ উঠেছে, ভিওআইপি বাণিজ্যের প্রায় পুরোটার নেতৃত্বে স্বয়ং টেলিটকের এমডি সাহাবুদ্দিন। এ বিষয়ে ২০২০ সালের ৮ জুন মাজেদুর রহমান নামের এক ব্যক্তি দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সেখানে সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট কিছু অভিযোগ তুলে ধরেন তিনি। গত বছরের ৪ ফেব্রæয়ারি রাজধানীর নিউমার্কেট, তুরাগ ও শাহ আলী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জামসহ তিনজনকে আটক করে র‌্যাব। একই বছরের ২৩ জুন বাংলাদেশ টেলিযোযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। তাতে এরসঙ্গে টেলিটকের কতিপয় কর্মকর্তার জড়িত থাকার কথা বলা হয়েছে। এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটিও করেছিল বিটিআরসি। তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের যুগ্ম সচিব (কোম্পানি) মুহাম্মদ আব্দুল হান্নান, বিভাগের উপসচিব বিদ্যুৎ চন্দ্র ও উপসচিব মো. শামসুল আলম। এই তদন্ত কমিটি চলতি বছর প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ফেব্রæয়ারিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নিদের্শনা দিয়েছিলেন। সূত্রমতে, ১৫ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নির্দেশনায় টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করে ডাক,টেলিযোগাযোগ বিভাগ। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হলেন সেই বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (টেলিকম) মো: মাহবুব উল আলম, সদস্য সচিব হলেন একই বিভাগের উপসচিব (কোম্পানি) এবিএম সাদিকুর রহমান, সদস্য হলেন-টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম।অভিযোগ উঠেছে,প্রতিষ্ঠানটির মার্কেটিং অ্যান্ড ভ্যাস ডিপার্টমেন্ট থেকে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) নিয়োগ পরীক্ষায় সফটওয়্যার সাপোর্টের বিপরীতে ভেন্ডর কোম্পানি সিনটেক্স সিস্টেমের নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার ৪৫১ টাকার বিল প্রদানের চেষ্টার অভিযোগে টেলিটকের ক্রয় বিভাগের সব কর্মকর্তাকে একযোগে বদলি করা হয়। সাহাবুদ্দিনের সীমাহীন দুর্নীতির আলামত ধ্বংস সম্পর্কে তথ্য ও টেলিটকের বহুল জনপ্রিয় টেলিপে অ্যাপস পুনরায় চালুকরণ প্রসঙ্গে নুরুল জিহাদ নামের এক ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বরাবর। সেখানে তিনি কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরেন এমডি সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে। তিনি অভিযোগ করেন, টাকা খেয়ে টেলিটকের জনপ্রিয় অ্যাপ টেলিপে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে সব মোবাইল ব্যাংকিং বিজনেস পাইয়ে দেওয়ার জন্য কারিগরি ত্রুটির কথা বলে ইচ্ছে করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জনপ্রিয় অ্যাপটি। এছাড়া নুরুল জিহাদ আরেক অভিযোগে উল্লেখ করেন, সাহাবুদ্দিন টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রতিষ্ঠানটি কাগজে-কলমে প্রতি বছর অগ্রগতির রিপোর্ট পেলেও বাস্তবে স্থবির হয়ে পড়ছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তাকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানোর কারণে টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাহাবুদ্দিন ও টেলিটকের এডমিন বিভাগের ডিজিএম কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। সাহাবুদ্দিন নিজে বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখান বলে অভিযোগ তোলেন আল আরাফাত সিকিউরিটি সার্ভিস লি.র কর্মচারী মানিক আলী। অভিযোগের বিষয়ে নিয়ে সাহাবুদ্দিন বলেন,এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা-বানোয়াট। আমার নামে কোথাও কোনো জমি নেই। যতটুকু আছে তা আমার স্ত্রীর নামে। আমি টেলিটকে যোগদানের আগেই পিংক সিটির ওই বাড়ি কেনা। অল্প জমি আমরা ৬ জনে মিলে কিনেছিলাম বসুন্ধরায় আর পৈতৃকভাবে কিছু পেয়েছিলাম এতটুকুই। এর বাইরে কোথাও কোনো সম্পত্তি নেই আমার। কিন্তু উল্লেখিত সম্পদ আর নিজের পরিবার ও শশুরবাড়ির নামে ৫টি গাড়ি ব্যবহার এসব বেমালুম ভুলেই গেছেন। যেমনটি তার নেএী ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে বলেছিলেন ওহ পানি চুক্তির কথা বলতে ভুলেই গিয়েছিলেন। সুত্র-যুগান্তর
Link copied!