মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্নীতির আখড়া এসেনসিয়াল ড্রাগস

প্রকাশিত: ১২:৪৮ পিএম, মার্চ ১১, ২০২৩

দুর্নীতির আখড়া এসেনসিয়াল ড্রাগস

এ এক সরকারি অর্থ লুটপাটের স্বর্গরাজ্য। ক্যান্টিন বন্ধ। কিন্তু বিল তোলা হয়েছে ভর্তুকির। কাঁচামালের তুলনায় ওষুধের উৎপাদন কম দেখিয়ে করা হয়েছে তছরুপ। বিধি লঙ্ঘন করে টেন্ডার প্রদান। বিনা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ বাণিজ্য এমন কোনো অনিয়ম নেই যা হয়নি এখানে। এটি দেশের একমাত্র সরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগ্‌স কোম্পানি লিমিটডে (ইডিসিএল)। শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এটি। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটিতে সরকারি অডিটেই আর্থিক বড় দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের অডিট প্রতিবেদনে ৩২টি গুরুতর অনিয়মে সরকারি ৪৭৭ কোটি ৪১ লাখ ৯১ হাজার ৩৭৮ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষায় যেসব অনিয়ম ধরা পড়েছে তার মধ্যে আছে- নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, ব্যবহৃত কাঁচামালের চেয়ে ওষুধ উৎপাদন কম দেখানো, উৎপাদিত ওষুধে সঠিক মাত্রায় কাঁচামাল ব্যবহার না করে গুণগত ওষুধ উৎপাদন না করা, কনডম প্রস্তুতে কাঁচামালের ঘাটতি, বনভোজনের নামে ভ্রমণভাতা, করোনাকালীন ক্যান্টিন বন্ধ থাকলেও প্রাপ্যতা না হওয়া সত্ত্বেও কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদেরকে অনিয়মিতভাবে ক্যান্টিনে সাবসিডি প্রদানের নামে টাকা আত্মসাৎ। এছাড়া সর্বনিম্ন দরে মালামাল ক্রয় না করে উচ্চমূল্যে বিভিন্ন জিনিস ক্রয় করে সরকারি টাকার লুটপাট, সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ প্রদান না করে ভাগাভাগির মাধ্যমে সরবরাহকারীগণকে কার্যাদেশ প্রদান-পূর্বক মালামাল ক্রয় সংস্থার আর্থিক ক্ষতিসহ বিভিন্ন খাতে অনিয়ম উঠে এসেছে নিরীক্ষায়। প্রাথমিকভাবে ইস্যুকৃত প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৫১টি আপত্তি তুলেছে অডিট কমিটি। এর মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তরের কোয়ালিটি কন্ট্রোল কমিটি ১৯টি আপত্তি বাতিল করে দেয়। বাকি ৩২টিকে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম (এসএফআই) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে থেকে ১১টিকে পিএ কমিটির জন্য (সংসদীয় কমিটিতে) পাঠানো হচ্ছে বলে সূত্র বলছে। পরিচালক ও দলনেতা মোহা. নূরুল আবসারের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের দলটি ১৭ই ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে ১০ই এপ্রিল ২০২২ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি নিরীক্ষা করেন। প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর এআইআর হিসেবে দাখিল করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। ২০১৪ সাল থেকেই এসেনসিয়াল ড্রাগ্‌স কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির জগলুল দায়িত্ব পালন করে আসছেন। স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তরের প্রতিবেদনের সুপারিশে বলেছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিময়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে আপত্তিকৃত অর্থ আদায় করে সংস্থার তহবিলে জমা করা আবশ্যক। আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অনিয়ম রোধে মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক বলে অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। অডিট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন ইডিসিএল কর্তৃক ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ব্যবহৃত কাঁচামালের তুলনায় ওষুধ উৎপাদন কম দেখানোর ফলে সংস্থার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১৭৪ কোটি ৪১ লাখ ৬৯ হাজার ৩৮০ টাকা। নিরীক্ষিত প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত বিল/ ভাউচার, স্টোরে সংরক্ষিত বিলকার্ড ও অন্যান্য আইটেম উৎপাদনের হিসাব অনুযায়ী যে পরিমাণ কাঁচামাল প্রয়োজন তার চেয়ে অধিক পরিমাণ কাঁচামাল প্রতিষ্ঠানের স্টোর থেকে প্রোডাকশনে প্রেরণ করা হয়েছে। ফলে অধিক পরিমাণ কাঁচামাল ব্যবহার করে ওষুধ কম উৎপাদন দেখানোর ফলে উল্লিখিত অর্থ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে রাষ্ট্রের। উৎপাদিত ওষুধে সঠিক মাত্রায় কাঁচামাল ব্যবহার না করার ফলে গুণগত মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদন না করে বিক্রয় করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১০২ কোটি ১১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৫৪ টাকা। নিরীক্ষিত প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত বিল/ভাউচার, স্টোরে সংরক্ষিত বিলকার্ড ও অন্যান্য রেকর্ডপত্র যাচাইয়ে দেখা যায়, পরিশিষ্টে বর্ণিত ৪টি ক্যাপসুল/ট্যাবলেট আইটেম উৎপাদনের জন্য স্টোর থেকে যে পরিমাণ কাঁচামাল প্রোডাকশনে ইস্যু করা হয়েছে, তা দ্বারা অধিক পরিমাণে ওষুধ উৎপাদন করা হয়েছে। অর্থাৎ ওষুধগুলোতে নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম পরিমাণ কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে উৎপাদিত ওষুধের গুণগতমানসম্পন্ন না হওয়া সত্ত্বেও সরকারি হাসপাতালগুলোতে ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে এবং হাসপাতালসমূহ কর্তৃক এমএসআর খাত থেকে ওষুধের মূল্য পরিশোধ করায় অর্থ অপচয় হয়েছে। বাজার মূল্যের চেয়ে উচ্চমূল্যে পিভিসি ফিল্ম ক্রয় করায় সংস্থার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ১৫ লাখ ৯৮ হাজার ২০০ টাকা। সরবরাহকারীকে আর্থিক সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে পুনঃপুনঃ প্রাইস অফারের মাধ্যমে অধিক দরে কাঁচামাল ক্রয় করায় সংস্থার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৬ কোটি ২১ লাখ টাকা। এতে দেখা যায়, প্যারাসিটামল কাঁচামালের বাৎসরিক চাহিদা ছিল ৪৩০ টন। ৪৮০ টাকা কেজি দামের সময় বেশি না কিনে পরবর্তীতে ৭৫০ টাকা দামে কেনা হয়। অর্থবছরের শুরুতে চাহিদা মোতাবেক দরপত্র না করে কম মূল্যে অল্প পরিমাণ (৬৫ হাজার কেজি) ক্রয় করে অধিক মূল্যে অধিক পরিমাণ (২ লাখ কেজি) প্যারাসিটামল বিপি ক্রয় করা হয়েছে। অডিট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সর্বনিম্ন্ন দরদাতার উদ্ধৃত দরে কার্যাদেশ না দিয়ে উচ্চদরে কার্যাদেশ প্রদান করায় সংস্থাটির ২৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ইডিসিএল ক্রয় বিধি (পারচেজ ম্যানুয়েল) লঙ্ঘন করে একই ব্যক্তি কর্তৃক দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির চেয়ারম্যান ও দরপত্র অনুমোদন-পূর্বক কাঁচামাল ক্রয় বাবদ অনিয়মিত ব্যয় করা হয়েছে ৯৮ কোটি ৭১ লাখ ২৬ হাজার ৫১০ টাকা। নিরীক্ষা মন্তব্যে বলা হয়েছে, জবাব আপত্তি নিষ্পতির সহায়ক নয়। কারণ পরিচালনা পর্ষদের ১১৬তম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ক্রয় কমিটি-১ এর চেয়ারম্যান করা হলেও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি/চেয়ারম্যান করা হয়নি। এছাড়া পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তের আলোকে পারচেজ ম্যানুয়েল সংশোধন করা হয়নি। পণ্য/মালামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে একই ব্যক্তি দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি ও অনুমোদনকারী হওয়ায় ক্রয়কার্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকাই স্বাভাবিক। সুপারিশে বলা হয়েছে, দায়ী ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। অধিকন্তু ভবিষ্যতে এ ধরনের অনিয়ম রোধে মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক বলে অডিট কমিটি মনে করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ প্রদান না করে ভাগাভাগির মাধ্যমে সরবরাহকারীগণকে কার্যাদেশ প্রদান-পূর্বক মালামাল ক্রয় করায় ৫ কোটি ১৭ লাখ ৭১ হাজার ২৩ টাকা অনিয়মিত ব্যয়িত হয়েছে। এতে পারচেজ ম্যানুয়েল অধ্যায়-৪ এর অনুচ্ছেদ ১৩(গ) এর লঙ্ঘন হয়েছে। সংস্থাটির ক্রয়বিধি লঙ্ঘন করে উন্মুক্ত দরপত্র/প্রেস টেন্ডার আহ্বান না করে অবাধ প্রতিযোগিতাবিহীন প্রাইস অফারের মাধ্যমে একক দরদাতা প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে পণ্য ক্রয় করে ১৮ কোটি ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা অনিয়মিত পরিশোধ করা হয়েছে। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও মালামাল সরবরাহ না করায় পারফরমেন্স সিকিউরিটি বাজেয়াপ্ত না করায় সংস্থার ৮০ লাখ ৯ হাজার ৯১১ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে সরবরাহকারীর উদ্ধৃত দরের চেয়ে অধিক দরে কার্যাদেশ প্রদান করায় সংস্থার ৪৪ লাখ ৬৯ হাজার ৩২৫ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে আরেকটি আইটেমে। পরিশোধিত বিলের সঙ্গে অতিরিক্ত ভ্যাট প্রদান করায় সংস্থার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৬৪ লাখ ১৮ হাজার ৬৫৬ টাকা। নিরীক্ষিত প্রতিষ্ঠানের অগ্রিম রেজিস্টার, সমন্বয় রেজিস্টার বিল/ভাউচার ও অন্যান্য রেকর্ডপত্র যাচাইয়ে দেখা যায় যে, পরিশিষ্টে বর্ণিত কর্মকর্তা/ কর্মচারীদেরকে বর্ণিত অর্থ অগ্রিম প্রদান করা হয়। পূর্ববর্তী সময়ের গৃহীত অগ্রিম সমন্বয় না হওয়া সত্ত্বেও পুনরায় ২০২০-২০২১ অর্থবছরে পুনরায় অগ্রিম প্রদান করা হয়েছে। উক্ত অগ্রিম সমন্বয় না করায় সংস্থার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। ইডিসিএল পারচেজ ম্যানুয়াল অধ্যায়-২ এর অনুচ্ছেদ ৫ (র) মোতাবেক সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত পারচেজ ডিপার্টমেন্টের প্রতিনিধিকে মালামাল ক্রয়ের জন্য অগ্রিম প্রদানের প্রভিশন রাখা হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা/কর্মচারীগণকে পূর্বের গৃহীত অগ্রিম সমন্বয় না করা সত্ত্বেও পুনরায় একজনকে সর্ব্বোচ্চ ২৬ লাখ ৮৯ হাজার ৭০০ টাকা অগ্রিম প্রদান করা হয়েছে এবং উক্ত অগ্রিমসহ প্রদত্ত সর্বমোট ২ কোটি ৩৭ লাখ ৬৩ হাজার ৭৯৬ টাকা টাকা সমন্বয় করা হয়নি। যা ইডিসিএল পারচেজ ম্যানুয়াল এর লঙ্ঘন । কাঁচামাল মজুত থাকা সত্ত্বেও উৎপাদন না করে এবং স্থানীয় বাজার থেকে ওষুধ ক্রয়ের পরামর্শ দিয়ে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানকে অনাপত্তিপত্র প্রদান করায় কোম্পানি ৬ কোটি ৭৪ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকা বিক্রয় আয় বঞ্চিত হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে বকেয়া আদায় না করায় কোম্পানির আর্থিক ক্ষতি ১০ কোটি ১২ লাখ ৭ হাজার ৩১৪ টাকা। প্রাপ্যতা না হওয়া সত্ত্বেও কর্মকর্তা/কর্মচারী ও শ্রমিকদেরকে অনিয়মিতভাবে ক্যান্টিন সাবসিডি প্রদান করায় সংস্থার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২ কোটি ৩৭ লাখ ২৩ হাজার ৫০২ টাকা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেতন ভাতাদি সংক্রান্ত বিল/ ভাউচার, কন্ট্রোল লেজার ও অন্যান্য রেকর্ডপত্র যাচাইয়ে দেখা যায়, বাংলাদেশ কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইডিসিএল কার্যালয়ে অবস্থিত ক্যান্টিনটি বন্ধ করে দেয়া হয়। ক্যান্টিন বন্ধ থাকা সত্ত্বেও কর্মকর্তা কর্মচারী ও শ্রমিকদের দুপুরের খাবার বাবদ দৈনিক জনপ্রতি ৫৮ টাকা ক্যান্টিন সাবসিডি হিসাবে প্রদান করা হয়েছে। প্রশাসনিক মন্ত্রণায়য়ের অনুমোদন ব্যতীত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের অতিরিক্ত ভাতাদি প্রদান করায় সংস্থার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ১৩১ টাকা। অন্যদিকে প্রাক্কলনে উল্লিখিত স্পেসিফিকেশন মোতাবেক আসবাবপত্র ক্রয় না করায় অনিয়মিতভাবে পরিশোধ ৯৮ লাখ ১ হাজার ৮৯ টাকা। সরবরাহকারীকে সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে পূর্ববর্তী কার্যাদেশ বাতিল করত: একই ঠিকাদারের নিকট থেকে মেরোপ্যানেম ইনজেকশনের কাঁচামাল ক্রয় করায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৭৮ লাখ ৯৯২ টাকা। ওই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকভুক্ত না করেই অন্য আইটেম ক্রয় করা হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ক্রয় প্রক্রিয়ার শর্তভঙ্গ করে সুনির্দিষ্ট ব্র্যান্ড, মডেল উল্লেখপূর্বক পুরাতন মডেল (রিকন্ডিশন) এর গাড়ি ক্রয় বাবদ অনিয়মিতভাবে ৮৯ লাখ ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। চুক্তি বহির্ভূতভাবে খালি কন্টেইনারের পরিবহন ভাড়া এবং পরিবহন ও আনলোডিং বাবদ চুক্তি মূল্যের অতিরিক্ত হারে কন্টেইনার বিল পরিশোধ করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১৫ লাখ ৮৫ হাজার ২৪০ টাকা। সরবরাহকারীকে সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে একক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রাইস অফারের মাধ্যমে কাভার্ড ভ্যান ক্রয় বাবদ ৫২ লাখ ৩৭ হাজার ৭৫০ টাকা অনিয়মিতভাবে পরিশোধ করা হয়েছে। বোর্ডের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ৮টি গাড়ি বিক্রয় এবং অগ্রহণযোগ্য কারণ দেখিয়ে মাইক্রোবাস (গাড়ি) অকেজো ঘোষণা করে রিকন্ডিশন গাড়ি ক্রয় করায় সংস্থার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা। পিকনিকে অংশগ্রহণের জন্য ভ্রমণভাতা পরিশোধ করায় সংস্থার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৯ লাখ ৮৬ হাজার ৪০৪ টাকা। সংস্থার কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজে এক প্লান্ট হতে আরেক প্লান্টে গমনের জন্য ভ্রমণভাতার আদেশ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু খুলনা ও ঢাকায় পিকনিকে অংশগ্রহণের জন্য একযোগে যথাক্রমে ১৯৩ জন ও ৪০ জন কর্মকর্তা/ কর্মচারীকে ভ্রমণভাতা বাবদ উল্লিখিত অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগ বিধির পরিপন্থিভাবে এডহক ভিত্তিতে কর্মকর্তা/কর্মচারীদের নিয়মিতকরণ ও বেতনভাতা পরিশোধ বাবদ অনিয়মিত ব্যয় করা হয়েছে এক অর্থবছরে ৬ কোটি ৪১ লাখ ৩০ হাজার ৩৫৬ টাকা। এখানে এডহক ভিত্তিতে নিযোগ করার বিধান নেই। দ্বিতীয় এডহক ভিত্তিতে কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের বিষয়ে সার্ভিস রুলে কোনো গাইড লাইন নেই। অথচ বিভিন্ন পদে ৪৭ জন কর্মকর্তাকে ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে এবং ১০৯ জন কমকর্তা/ কর্মচারীকে একই সালের ২০শে মার্চ এডহক ভিত্তিক থেকে নিয়মিত করা হয়। কাজেই বিধি- বহির্ভূতভাবে এডহক ভিত্তিতে জনবল নিয়োগও নিয়মিত করা হয়েছে। আবার মঞ্জুরীকৃত পদের চেয়ে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ-পূর্বক অনিয়মিতভাবে বেতন ভাতা বাবদ ১০ কোটি ৮৮ লাখ ১৩ হাজার ১২০ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। সংস্থাটির ঢাকা কার্যালয়ে বর্ণিত ৮টি পদের বিপরীতে মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা ৮৩৩টি কিন্তু কর্মরত রয়েছে ৯৩১ জন অর্থাৎ ১০৬জন কর্মকর্তা/কর্মচারী অতিরিক্ত নিয়োগ-পূর্বক বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। একইভাবে বগুড়া কারখানায় ১২টি পদের বিপরীতে ৫৪টি, খুলনা কারখানায় ৮টি পদের বিপরীতে ১৭০টি, ল্যাটেক্স প্রসেসিং প্লান্ট, মধুপুর, টাঙ্গাইল এ ৬টি পদের বিপরীতে ২৩টি এবং ইডিসিএ ৩য় প্রকল্প গোপালগঞ্জ কার্যালয়ে ২টি পদের বিপরীতে ৮জন অতিরিক্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীর বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। এছাড়া পদ সৃজন না করেই অনিয়মিতভাবে কর্মচারী নিয়োগ-পূর্বক বেতন-ভাতাদি বাবদ অনিয়মিতভাবে ১০ লাখ ২৩ হাজার ৫০৬ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। নিয়োগ বিধি লঙ্ঘন করে উপ-সহকারী প্রকোশলী নিয়োগ করায় ৫ লাখ ৩৮ হাজার ২০৯ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। মঞ্জুরীকৃত পদের বিপরীতে অতিরিক্ত জনবল কর্মরত থাকা সত্ত্বেও পুনরায় এডহক ভিত্তিতে ৫৬ জন ও ৩৭ জন ক্যাজুয়াল লোক নিযোগ করে ১ কোটি ১০ লাখ ৫১ হাজার ৫৮৫ টাকা পরিশোধ করা হয়। শ্রম আইন-২০০৬ এর ধারা-১০৮ এবং২ (৬৫) এর লঙ্ঘন করে অনিয়মিতভাবে প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত জনবলকে ওভারটাইম প্রদান করায় সংস্থার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২ কোটি ৬৭ লাখ ৬৮ হাজার ৯৭১ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় জারিকৃত পে-স্কেল ২০১৫ আদেশ মানছে না প্রতিষ্ঠানটি। তবে এক অর্থবছরে সরকারি পে-স্কেলের চেয়ে ১০ কোটি ৯৯ লাখ ২০ হাজার ৩৩৬ টাকা বাড়তি ব্যয় হয়েছে রাষ্ট্রের। এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন- যে পরিমাণ টাকার অনিয়মের কথা উঠে এসেছে সেটা জনগণের টাকা। যেটুকুও তথ্য এসেছে তাতে মনে হচ্ছে সিন্ডিকেট করে এসব অনিয়ম করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে যারা এসব অনিয়ম করেছেন তাদের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণকারী অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)কে অনুসন্ধান করে দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক। এসব অনিয়মের ব্যাপারে জানতে এসেনসিয়াল ড্রাগ্‌স কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এহসানুল কবির জগলুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা দিলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব এবং প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড অব ডিরেক্টরস মেম্বার ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, অডিট রিপোর্টটি দেখিনি। অডিট আপত্তি দিয়েছে। তার জবাব তারা দিবে। কেউ ব্যক্তিগত অন্যায় করে থাকলে তার দায়-দায়িত্ব নিতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
Link copied!