মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্রলীগের সম্মেলন: পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ শতাধিক নেতার

প্রকাশিত: ১২:১৯ পিএম, নভেম্বর ২৯, ২০২২

ছাত্রলীগের সম্মেলন: পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ শতাধিক নেতার

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ৬ ডিসেম্বর। সম্মেলনের তারিখ ঘনিয়ে আসায় শেষ মুহূর্তে শীর্ষপদে আসতে দৌড়ঝাঁপ করছেন শতাধিক নেতা। তবে মাঠের আলোচনায় ও ইতিবাচক রাজনীতির কারণে এগিয়ে আছেন অন্তত দুই ডজন নেতা। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান বলছে, সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব বাছাই করা হয়। গঠনতন্ত্রে সম্মেলনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে বাছাই করার কথা বলা হলেও ছাত্রলীগের ‘সর্বোচ্চ অভিভাবক’ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিতেই মূলত শীর্ষ নেতৃত্ব বাছাই করা হয়। এখন পর্যন্ত ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনের তারিখ তিনবার পরিবর্তন হয়েছে। গত ৩ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল কিন্তু সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফর থাকায় তার নির্দেশে সম্মেলনের তারিখ পিছিয়ে ৮ ও ৯ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর স্থগিত হওয়ায় সম্মেলনের তারিখ এগিয়ে এনে আগামী ৬ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। পদ পেতে নেতাদের কাছে ধরনা : ৩০তম সম্মেলনেও নতুন নেতৃত্ব আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আশা দেখছেন শতাধিক পদপ্রত্যাশী। তারা ছাত্রলীগের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের চার নেতা এবং আওয়ামী লীগের অন্যান্য প্রভাবশালী নেতার কাছে ধরনা দিচ্ছেন। তাদের মাধ্যমেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে নাম পৌঁছানোর কৌশল বেছে নিয়েছেন প্রার্থীরা। এতদিন ছাত্রলীগ নেতারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করলেও শেষ মুহূর্তে তাদের আনাগোনা বেড়েছে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ের দিকে। ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চার শীর্ষ নেতাসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলকে কেন্দ্র করে প্রার্থীদের তোড়জোড় চালানোর রীতি নতুন নয়। বিশেষ করে সিন্ডিকেট যুগের অবসানের পর এ চিত্রই বেশি দেখা যাচ্ছে। সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই রাজনীতির আঁতুড়ঘরখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন, টিএসসিসহ বিভিন্ন জায়গায় কর্মীদের নিয়ে সরব আছেন শীর্ষ পদপ্রার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাশাপাশি ব্যানার-ফেস্টুন টানানোর মাধ্যমে জানান দিচ্ছেন নিজেদের প্রার্থিতার খবর। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, শীর্ষপদে তাদেরই বিবেচনা করা হচ্ছে যাদের সাংগঠনিক সক্ষমতা ভালো, ক্লিন ইমেজের অধিকারী এবং পরিবারের সঙ্গে জামায়াত-বিএনপির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী, শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় এবং ইতিবাচক কাজের মাধ্যমে আলোচনায় আসতে পেরেছেন, এমন ছাত্রনেতারাও নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন। অঞ্চলভিত্তিক আলোচনায় এগিয়ে যারা : গত কয়েক বছরে শীর্ষ নেতৃত্ব বাছাই প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট কয়েকটি অঞ্চল বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। উত্তরবঙ্গ, বৃহত্তর ফরিদপুর, বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা, ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগ থেকে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে। উত্তরাঞ্চল থেকে এ বছর আলোচনায় আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক সহ-সম্পাদক (এজিএস) সাদ্দাম হোসেন। এ ছাড়াও আলোচনায় আছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক সদস্য রাকিবুল হাসান রাকিব, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণ সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু। চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ও ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান সৈকত, ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামবিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাহসান আহমেদ রাসেল, সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম শামীম এবং সহ-সম্পাদক মো. সোহরাব হোসেন শাকিল। বরিশাল অঞ্চল থেকে সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের নাম। এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক সবুর খান কলিন্স, উপ-কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক খাদিমুল বাশার জয় ও সহ-সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেনও আলোচনায় আছেন শীর্ষ নেতৃত্বের দৌড়ে। বৃহত্তর খুলনা অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাঁধন ও মানব সম্পদবিষয়ক সম্পাদক নাহিদ হাসান শাহীন আলোচনায় থাকছেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস ও সহ-সম্পাদক এসএম রাকিব সিরাজী। বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আইন সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত, কর্মসংস্থান সম্পাদক রনি মুহাম্মদ, কবি জসীম উদ্দীন হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহেদ খান এবং সহ-সভাপতি রাকিব হোসেন। এর বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের শীর্ষপদে আসার দৌড়ে রয়েছেন মুহসিন হল ছাত্রলীগের সভাপতি শহিদুল হক শিশির, বঙ্গবন্ধু হল শাখার সভাপতি মো. মেহেদী হাসান (শান্ত), শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ও কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-প্রচার সম্পাদক মো. রায়হান হোসেন। বয়স গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর : ছাত্র রাজনীতিতে শীর্ষ নেতাদের বয়স নিয়ে সমালোচনা আছে দীর্ঘদিন ধরেই। অভিযোগ রয়েছে প্রথম সারির ছাত্র সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্র নন। ছাত্রলীগের এবারের সম্মেলনেও নেতৃত্বের বয়সসীমা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। গঠনতন্ত্রে ২৭ বছর থাকলেও নেতৃত্বে নির্বাচনের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত বয়সসীমা পুরোপুরি অনুসরণ করা হয়নি। সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ছাত্রলীগের সম্মেলনে ২৮ বছর বয়সি নেতা নির্বাচন করার কথা বললেও পরে তা বাড়িয়ে ২৮ বছর ৩৬৪ দিন অর্থাৎ অনূর্ধ্ব ২৯ বছর করার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। জানা যায়, আসন্ন সম্মেলনকে ঘিরে আওয়ামী লীগ নেতাদের একটি পক্ষ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসার বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩০ বা অনূর্ধ্ব ৩১ করার পক্ষে। অন্যদিকে আরেকটি পক্ষ গতবারের মতো বয়সসীমা অনূর্ধ্ব ২৯ রাখার পক্ষে আছেন। তবে বয়সসীমার বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতির ওপর নির্ভর করায় অনূর্ধ্ব ২৯, ২৯-এর ঘরে এবং ৩০ ঊর্ধ্ব বয়সসীমায় থাকা সব প্রার্থীই নেতৃত্বে আসতে নিজেদের মতো করে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে ২০০৬ এর পর থেকে এ পর্যন্ত কখনোই ২৯ ঊর্ধ্ব বয়সি কাউকে শীর্ষ নেতৃত্বে আনার নজির নেই। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চার নেতার একজন ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক সময়ের আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের রাজনীতিতে শীর্ষপদে আসতে হলে অবশ্যই ছাত্র হতে হবে। পাশাপাশি ক্লিন ইমেজ ও ছাত্রদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। গঠনতন্ত্রে বয়সের কথা ২৭ বলা হলেও গতবার কাউন্সিলে তা বাড়ানো হয়েছিল। এ বছর করোনা মহামারির কারণে বয়সের বিষয়টি কিছুটা শিথিল করা হতে পারে।’ সম্মেলনের পরপরই কমিটি দেওয়া হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘ছাত্রলীগের কমিটি করতে কিছুটা সময় লাগে। অনেক কিছু হিসাব করে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে হয়। ফলে কমিটি ঘোষণা করতে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। সংকটে পিঠটান, এখন পদ চান : ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী এক ধরনের সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হয়। সে সময় বিএনপির হরতাল-অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচির ফলে দেশজুড়ে এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়। ফলে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কমিটি করতে গিয়েও কর্মী সংকটে পড়তে হয়। এখন ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী অনেকেই সে সময় পদ নিতে চাননি। ফলে ওই সময় অধিকাংশ আবাসিক হলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি ছাত্রলীগ। নির্বাচনের আগে ১৮টি হলের মধ্যে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, কবি জসীম উদ্দীন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, অমর একুশে হল ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়। বাকি হলগুলোতে নেতাকর্মী সংকটে কমিটি দেওয়া যায়নি। সংকটের সে সময় ছাত্রলীগে সক্রিয় থাকা নেতাদের শীর্ষ নেতৃত্বে আনার বিষয়টিও আলোচনায় আছে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে আছেন ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন (কবি জসীম উদ্দীন হল), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান আল ইমরান (মুহসীন হল), তাহসান আহমেদ রাসেল (এসএম হল), মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস (এসএম হল), আইন সম্পাদক ফুয়াদ হাসান শাহাদাত (এসএম হল), উপ-আইন সম্পাদক শাহেদ খান (জসীম উদ্দীন হল), উপ-তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক এহসান উল্লাহ পিয়াল (একুশে হল), সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ ইনান (এফ রহমান হল), খাদিমুল বাশার জয় (এফ রহমান হল) ও সবুর খান কলিন্স (এফএইচ হল)। আলোচনায় নারী ও ঢাবির বাইরের নেতারা : প্রতিবারের মতো এবারও ছাত্রলীগের শীর্ষপদে একজন নারীকে নির্বাচন করার করার কথা শোনা যাচ্ছে। ছাত্রলীগের ৭৪ বছরের ইতিহাসে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কখনো নারী নেতৃত্ব দেখা যায়নি। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন শুধু মারুফা আক্তার পপি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে না হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের শীর্ষে নারী নেতৃত্ব বেছে নিতে পারে হাইকমান্ড, এমন কথা শোনা যাচ্ছে। এবারের সম্মেলন সামনে রেখে নারী নেতা হিসেবে আলোচনায় আছেন- ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তিলোত্তমা সিকদার এবং ফরিদা পারভীন। এদিকে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন করা হচ্ছে অনেক দিন ধরে। সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন যথাক্রমে লিয়াকত শিকদার ও নজরুল ইসলাম বাবু। লিয়াকত শিকদার ঢাকা কলেজ এবং নজরুল ইসলাম বাবু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ দুই পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে এবার এ প্রথার ব্যত্যয় ঘটিয়ে ঢাবির বাইরে থেকে আসতে পারে সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্ব। ঢাবির বাইরে থেকে শীর্ষ নেতৃত্বের দৌড়ে আছেন- ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-নাট্য ও বিতর্ক সম্পাদক তারেক আজিজ, উপ-মানব সম্পদবিষয়ক সম্পাদক শেখ মেহেদী হাসান ও উপ-প্রচার সম্পাদক মো. আলামিন শেখ। তারা তিনজনই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
Link copied!