মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

কানাডায় যাওয়ার লোভে বিয়ে করে বৃদ্ধের ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা গচ্চা

প্রকাশিত: ০৩:৫৭ এএম, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২০

কানাডায় যাওয়ার লোভে বিয়ে করে বৃদ্ধের ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা গচ্চা

ডেইলি খবর ডেস্ক: কানাডা যাওয়ার লোভে পড়ে ৭০ বছর বয়স্ক এক বৃদ্ধ ৩৭ বছর বয়সি মহিলাকে বিয়ে কওে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা খুইয়েছেন। ঘটনার বিবরনে পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি লম্বা। সন্তানহীন ডিভোর্সি। কানাডার নাগরিক এবং সেখানকার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। সর্বোপরি নামাজি। পত্রিকার পাতায় এমন পাত্রীর জন্য পাত্র চেয়ে বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন রাজধানীর পুরান ঢাকার ৭০ বছর বয়সী এক ব্যবসায়ী। গুলশান দুই নম্বরের একটি থাই রেস্টুরেন্টে পাত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তার। এরপর কানাডায় নিয়ে যাওয়া, নাগরিকত্বের আবেদন করা এসব নানা ছলনায় তার কাছ থেকে এক কোটি ৮০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন ওই পাত্রী। তথাকথিত এই পাত্রীর সঙ্গে ব্যবসায়ীর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল গত ১২ জুলাই। এরপর দেড় মাসের ব্যবধানে তিনি টাকাগুলো দেন। এর মধ্যে কখনোই তিনি প্রতারিত হচ্ছেন এটা ভাবেন নাই। শেষমেশ গত ১ সেপ্টেম্বর পাত্রীটি যখন ‘ডলারের বাক্স’ বলে তার হাতে এ-৪ সাইজের সাদা কাগজের একটি বাক্স ধরিয়ে দেয় তখনই তিনি নিজের দুর্গতি টের পান। দ্বারস্থ হন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ঢাকা মেট্রো (পশ্চিম) ইউনিটের। গত বৃহস্পতিবার সিআইডি বনানী সুপার মার্কেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সেই পাত্রীকে। তার নাম সাদিয়া জান্নাত (৩৮)। বাড়ি কুমিল্লার মুলাদিতে। সিআইডি শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে,সাদিয়া জান্নাত এবং তার স্বামী মো:এনামুল হাসান সংঘবদ্ধভাবে এই প্রতারণার কাজ করতেন। ২০১৫ সাল থেকে সাদিয়া এই কাজ করে আসছেন। সাদিয়াকে গ্রেপ্তারের পর পুরান ঢাকার সেই ব্যবসায়ী ছাড়াও আরও সাতজন ব্যক্তি জানিয়েছেন তাদের কাছ থেকেও একইভাবে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় সাদিয়ার কাছ থেকে তিনজন ভুক্তভোগীর পাসপোর্ট, দশটি মুঠোফোন, সাতটি সিল, অসংখ্য ব্যবহৃত সিম, হিসাবের খাতা এবং একটি বেসরকারি ব্যাংকে ৪৮ লাখ টাকা জমা দেওয়ার রশিদ উদ্ধার করা হয়েছে। পুরান ঢাকার প্রতারিত সেই ব্যবসায়ী ভোজ্য তেলের ব্যবসা করেন। দেশে সয়াবিন তেল আমদানিকারকদের প্রথম দিককার একজন তিনি। তার স্ত্রী মারা গেছেন। দুই ছেলে সন্তানের জনক তিনি। এ ঘটনায় গুলশান থানায় করা মামলায় প্রতারণার পুরো ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে ১২ জুলাই গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে প্রথম সাদিয়ার সঙ্গে তার দেখা হয়। তখন সাদিয়া জানান কানাডায় তার ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা আছে। তিনি এবং তার এক ভাই মিলে দেখাশোনা করেন। আলাপের একপর্যায়ে সাদিয়া পাত্র হিসেবে তাকে পছন্দ হয়েছে এবং বিয়ে করে কানাডায় নিয়ে যাবেন বলে জানান। কথা অনুযায়ী ব্যবসায়ী ১৫ জুলাই সাদিয়াকে তার পাসপোর্ট দেন। এরপরই শুরু হয় টাকা নেওয়া। মামলায় ব্যবসায়ী বলেছেন, সাদিয়া কানাডার ভিসার আবেদনের জন্য প্রথম তার কাছে দেড় লাখ টাকা নেন। সেই টাকা দেওয়ার পর ভিসার জন্যই আরও ৭০ হাজার টাকা নেন। নগদ সেই টাকা দেওয়ার পর ট্রাভেল ডকুমেন্টস তৈরি করা বাবদ আইনজীবীকে দেওয়ার জন্য নেন আরও ছয় লাখ টাকা। এরপর ‘কানাডার সোশ্যাল সিকিউরিটির’ জন্য নেন ৬০ লাখ টাকা। ১২ আগস্ট সেই টাকা নেওয়ার পর রাতে সাদিয়া তাকে ফোন করে বিভিন্ন লোভ দেখাতে থাকেন। তিনিও তার মিষ্টি কথায় ভুলতে থাকেন। এভাবেই সাদিয়ারফাদে পা রেখে বৃদ্ধ এখন দিশেহাড়া।
Link copied!