মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

আওয়ামী লীগের এমপির সঙ্গে শিবিরের সখ্যতা!

প্রকাশিত: ০৩:৪১ এএম, অক্টোবর ১২, ২০২০

আওয়ামী লীগের এমপির সঙ্গে শিবিরের সখ্যতা!

চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনের সরকার দলীয় এমপি মাহফুজুর রহমান মিতার বিরুদ্ধে শিবির-সখ্যতা ও তোষণের অভিযোগ ওঠেছে। কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ফেসবুকে নোংরা ও কুরুচিপূর্ণ পোস্ট দেওয়ার দায়ে শিবির-ছাত্রদল থেকে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী তিন তরুণ গ্রেফতারের পর এমপি মিতার সাথে শিবির-ছাত্রদল সখ্যতার বিষয়টি নতুন করে সামনে চলে এসেছে। শুক্রবার সকাল থেকে শিবিরের দুই নেতার (এমপির কল্যাণে এখন ছাত্রলীগ সমর্থক) সাথে ঘনিষ্ঠ কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে বিভিন্ন মহলে তোলপাড় শুরু হয়। অভিযোগ ওঠে, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অত্যন্ত নোংরা ভাষায় ফেসবুক পোস্ট দিয়ে যে তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের সাথে মিতার ছবি থাকা দুই শিবির নেতার সম্পর্ক রয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তিকারী সাবেক শিবিরকর্মী শাফায়াত হোসেন আয়ানসহ গ্রেপ্তার তিনজনের সাথেও এমপি মিতার সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এর আগে বুধবার (৭ আগস্ট) শাফায়াত হোসেন আয়ান নামের সাবেক শিবিরকর্মী তার ফেসবুক আইডি থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে অত্যন্ত নোংরা ও কুরুচিপূর্ণ পোস্ট দেয়। বিশেষ একটি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত ও অনুসন্ধানের ভিত্তিতে পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে শাফায়াত আয়ান ও তার আরেক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শুক্রবার সকালে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করে সন্দ্বীপ থানা পুলিশ। গোয়েন্দা সংস্থাটির তথ্যমতে, গ্রেপ্তারকৃতরা পূর্বে শিবিরের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত থাকলেও বর্তমানে এরা সকলেই ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী সদস্য। তারা তিনজনই সরকারি হাজী এবি কলেজের ছাত্র। এদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে নোংরা ও অশ্রাব্য ভাষায় কটূক্তিকারী শাফায়েত হোসেন আয়ান পূর্বে ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকলেও বর্তমানে ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত। গ্রেপ্তার হওয়া মুসলিম হোসেন শরীফ পূর্বে শিবিরের সাথী ও চিহ্নিত ক্যাডার হিসেবে পরিচিত থাকলেও বর্তমানে ছাত্রলীগ সমর্থনকারী (অনুপ্রবেশকারী) এবং মিজানুর রহমান রবিন পূর্বে ছাত্রদলের রাজনীতি করলেও বর্তমানে ছাত্রলীগ (অনুপ্রবেশকারী) সমর্থনকারী। স্থানীয়দের অভিযোগ, গ্রেপ্তার তিনজনই আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতার আশীর্বাদপুষ্ট। এমপি মিতাই তাদেরকে ছাত্রলীগে পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছিলেন। এসব অভিযোগ তদন্ত নেমে প্রাথমিকভাবে এমপি মিতার শিবির-সখ্যতা ও দহরম-মহরম এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে ওই গোয়েন্দা সংস্থাটি। সংস্থাটির একটি সূত্র বলছে, পাওয়া তথ্যগুলো নিয়ে নিবিড়ভাবে তারা কাজ করছে। অন্যদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যায়, এমপি মাহফুজুর রহমান মিতার সাথে বসে আছেন দুই তরুণ। জানা যায়, মিতার বামপাশে থাকা মঞ্জুর সোহেল শিবিরের সক্রিয় কর্মী এবং ডানপাশে থাকা রেজাউল করিম খসরু দক্ষিণ সন্দ্বীপ উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমানে শিবিরের সাথী। মঞ্জুর সোহেল মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নের মৃত শহীদুল্লাহর ছেলে। বর্তমানে মগধরা স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক। আর রেজাউল করিম খসরু একই ইউনিয়নের ফকির বাড়ির বাসিন্দা। থাকেন চট্টগ্রাম শহর এলাকায়। এদিকে, ফেসবুকে এমপি, শিবির নেতাদের ঘনিষ্ঠ ছবিটি আপলোড হওয়ার পর সমালোচনার ঝড় ওঠেছে নানান মহলে। রাজনীতি-সচেতনদের মতে, আওয়ামী লীগ দলীয় এমপির সাথে শিবির নেতাদের এমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সন্দ্বীপের রাজনীতির জন্য অশনিসংকেত। শিবির নেতাদের সাথে ছবির বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি মাহফুজুর রহমান মিতা একুশে পত্রিকাকে বলেন, প্রতিদিন কত মানুষই তো ছবি তুলে। পরিচিত-অপরিচিত কেউ ছবি তুলতে চাইলে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে আমি কখনো ‘না’ করি না। বরং প্রাণ খুলে পোজ দিই। কারো কপালে কি লেখা থাকে তিনি শিবির কিংবা ছাত্রদল? আমার সরল ছবিগুলো নিয়ে যদি কেউ নোংরা রাজনীতি করে আমার কীবা করার আছে বলুন? স্থানীয় রাজনীতিতে ঈর্ষান্বিত একটি মহল এসব করছে বলে দাবি করেন তিনি। শিবির-ছাত্রদলের কাউকে পুনর্বাসন দূরের কথা, ন্যূনতম সম্পর্ক নেই জানিয়ে মাহফুজুর রহমান মিতা বলেন, একটি ছবি দিয়ে সম্পর্ক নির্ণয় করা যায় না। তাদের সাথে আমার যোগাযোগ, লেনদেন বা কথোপকথন আছে কিনা দেখুন। যদি থাকে তাহলে যে কোনো শাস্তি আমি মেনে নেবো। যারা প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করেছে তাদেরকে তিনিই পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছেন উল্লেখ করে এমপি মিতা বলেন, তিনি তাদের চিনেন না। তাদের সাথে কখনো কোনো যোগাযোগ ছিল না। সূত্র: একুশে পত্রিকা
Link copied!