শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে ব্যাংকিং লেনদেনে গতি ফিরছে

প্রকাশিত: ০৫:২২ এএম, জুলাই ২১, ২০২০

স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে ব্যাংকিং লেনদেনে গতি ফিরছে

করোনা দুর্যোগের মধ্যেই মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকিং লেনদেনেও গতি আসছে। বর্তমানে লকডাউন এলাকা ছাড়া সারা দেশে পুরোদমে ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ব্যাংকগুলোতে দেওয়া হচ্ছে সেবা। এ ছাড়া সংক্রমণ রোধে গ্রাহকদের জন্য সশরীরে ব্যাংকে না এসে বিকল্প ডিজিটাল চ্যানেলে সেবার পরিধি বাড়িয়েছে ব্যাংকগুলো। এতে ব্যাংকিং লেনদেন বাড়তে শুরু করেছে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ব্যাংকিং লেনদেন আগের চেয়ে প্রায় ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ বেড়েছে। ঈদের আগে লেনদেনে আরো গতি পাবে। তবে স্বাভাবিক সময়ের মতো শতভাগ লেনদেনে যেতে আরো সময় লাগবে। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটির মধ্যেও সীমিত পরিসরে খোলা ছিল ব্যাংকিং কার্যক্রম। আর সাধারণ ছুটি শেষে গত ৩১ মে থেকে পুরোদমে ব্যাংকিং লেনদেন চালু রয়েছে। ফলে করোনার সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই ব্যাংকিং খাতে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টিতে বেশ গুরুত্ব দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য একাধিক সার্কুলার জারি করা হয়। এতে ব্যাংকের শাখা, এটিএম এবং এজেন্ট পয়েন্টগুলোতে নিয়মিতভাবে জীবাণুমুক্ত ও তদস্থলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখার ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়। সেই সঙ্গে ব্যাংকের নিজস্ব কর্মী ও গ্রাহকদের জন্য সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করার ওপরও জোর দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার পরই ব্যাংকগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যাংকিং সেবা দিয়ে আসছে। গত রবিবার ও সোমবার মতিঝিল, দিলকুশা, হাটখোলা, শান্তিনগর, মালিবাগের বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের শাখা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি ব্যাংকের শাখায়ই তিন ফুট দূরত্ব নিশ্চিত করতে গ্রাহকদের দাঁড়ানোর স্থান চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। ওই চিহ্নিত স্থানে দাঁড়িয়েই গ্রাহকরা লেনদেন করছেন। ব্যাংকগুলোর প্রবেশ মুখে নিরাপত্তাকর্মীরা গ্রাহকদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করছেন। কিছু কিছু শাখায় গ্রাহকদের প্রবেশকালে শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। আবার কোনো কোনো শাখায় হাত জীবাণুমুক্ত করতে সাবান-পানির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী রেজা ইফতেখার বলেন, সাধারণ ছুটির পর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির সঙ্গে ব্যাংকিং লেনদেনও বাড়ছে। এখন আগের চেয়ে প্রায় ৬০-৬৫ শতাংশ লেনদেন বেড়েছে। তবে স্বাভাবিক সময়ের মতো শতভাগ লেনদেনে যেতে আরো সময় লাগবে। কারণ আমদানি-রপ্তানিসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুরোদমে শুরু হয়নি। তিনি বলেন, করোনাকালীন গ্রাহকদের বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে ব্যাংকিংয়ে উৎসাহিত করছে ব্যাংকগুলো। যাতে সশরীরে যতটা সম্ভব ব্যাংকে কম আসতে হয়। এতে সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে বেশ ভালো। ব্যাংকিং খাতে স্বাস্থ্যবিধি কতটা মানা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষায় আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। ব্যাংকে প্রবেশের আগে প্রত্যেকটি মানুষের তাপমাত্রা মাপা হয়। কর্মীদের পাশাপাশি গ্রাহকদেরও মাস্ক পরা এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে হাত ধোয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিছুক্ষণ পর পর কাউন্টার ও লিফট জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া ব্যাংকের কর্মীদের মধ্যে কে কে কোন সপ্তাহে বাসায় থেকে কাজ করবেন, আর কে কে সরাসরি অফিসে গিয়ে কাজ করবেন প্রত্যেক ব্যাংক তার কর্মীদের রোস্টার করে দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়েছে। বেসরকারি সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডি এম কামাল হোসেন বলেন, ‘ব্যাংকিং লেনদেন অবশ্যই আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে শতভাগ এখনো হয়নি, ৮০ শতাংশ স্বাভাবিক পর্যায়ে এসেছে।’ স্বাস্থ্যবিধি কেমন মানা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব শাখায়ই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকের কর্মীদের সুরক্ষিত রাখতে প্রয়োজনীয় জীবাণুনাশক উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে। গ্রাহকদেরও ব্যাংকে প্রবেশের সময় মাস্ক পরা এবং হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া লেনদেনকালীন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।’ রূপালী ব্যাংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা এহতেশামুজ্জামান বলেন, ‘দেশে করোনা পরিস্থিতির শুরুর পর থেকেই রূপালী ব্যাংক কর্মকর্তাদের মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ ভাইরাস প্রতিরোধে জীবাণুনাশক দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তাকর্মীদেরও একই সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। গ্রাহকদের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হেক্সিসলের মাধ্যমে হাত পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের প্রবেশমুখে সাবান ও পানি রাখা হয়েছে সবার হাত ধোয়ার জন্য।
Link copied!