মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

লোভী উপাচার্যের অনিয়মের যতকথা

প্রকাশিত: ০৫:৩৫ এএম, অক্টোবর ২৩, ২০২০

লোভী উপাচার্যের অনিয়মের যতকথা

ডেইলি খবর ডেস্ক: উচ্চশিক্ষিত হলে সবকাজ করা যায় না তা হয়ত রাজশাহী বিশ্ববিদালয়ের ভিসি জানতেন না। তার নানা অনিয়ম স্বজনপ্রিতি দীর্ঘ তদন্ত ও গণশুনানি শেষে উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান ও তাঁর নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের নানা অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে গঠিত তদন্ত কমিটি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও ইউজিসি সদস্য (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড.দিল আফরোজা বেগম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন,‘আমরা এরই মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। তবে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, তদন্তে উপাচার্যের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ, স্বজনপ্রীতি,টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এ ধরনের কর্মকান্ডে উপাচার্যের মতো সর্বোচ্চ মর্যাদাশীল পদের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন করেছে। এ কারণে উপাচার্যের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। তারা বলেছে,উপাচার্যের নৈতিকতাবিবর্জিত এ ধরনের কর্মকান্ড জরুরি ভিত্তিতে বন্ধে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। যাতে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা ও গবেষণার সার্বিক পরিবেশের উন্নয়ন সাধিত হয়। এ ছাড়া নীতিমালা পরিবর্তনের সুযোগে নিয়োগ পাওয়া ৩৪ জনের নিয়োগ বাতিলের সুপারিশও করা হয়েছে। সূত্র জানায়, শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা উদ্দেশ্যমূলকভাবে পরিবর্তন করে যোগ্যতা কমিয়ে দেয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আবদুস সোবহান ও তাঁর নেতৃত্বাধীন প্রশাসন। এর ফলে কম যোগ্যতায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষক হন উপাচার্যের মেয়ে ও জামাতা। এ রকমভাবে যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্য ৩৪ জনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আগের নীতিমালা অনুযায়ী যাঁদের আবেদনের যোগ্যতা ছিল না। ইউজিসির তদন্তে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এ রকম আরো কিছু অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। গণশুনানিসহ বিভিন্নভাবে তদন্ত কাজটি করে ইউজিসির তদন্ত কমিটি। তবে উপাচার্য গণশুনানিতে হাজির হননি, বরং ইউজিসি চেয়ারম্যানকে লেখা চিঠিতে উপাচার্য তাঁর বিরুদ্ধে ইউজিসির তদন্ত কমিটি গঠনের এখতিয়ার নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন। আবদুস সোবহান ২০১৭ সালের মে থেকে দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন। প্রথম মেয়াদেও (২০০৯-২০১৩) তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। উপাচার্য ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তন করে যোগ্যতা কমান। আগের নীতিমালায় আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা ছিল এসএসসি থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত চারটি স্তরেই প্রথম শ্রেণি বা সমমানের গ্রেড। এ ছাড়া স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তরে সংশ্লিষ্ট বিভাগের মেধাক্রম প্রথম থেকে সপ্তমের মধ্যে অবস্থান। পরিবর্তিত নীতিমালায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে সিজিপিএ ৩.২৫-এ নামিয়ে আনা হয় এবং মেধাক্রমে থাকার শর্তও তুলে দেওয়া হয়। তদন্ত কমিটি বলেছে, নীতিমালা পরিবর্তন করায় ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশে চলা চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা এখন সর্বনিম্ন। যোগ্যতা কমানোর একটাই উদ্দেশ্য, ২০১৭ সালের আগে যাঁদের আবেদন করার যোগ্যতা ছিল না, তাঁদের নিয়োগের পথ উন্মুক্ত করা। এই সুযোগে মার্কেটিং বিভাগ থেকে পাস করা উপাচার্যের মেয়ে সানজানা সোবহান নিয়োগ পান ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে এবং জামাতা এ টি এম শাহেদ পারভেজ নিয়োগ পান ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ)। এ ছাড়া নতুন প্রতিষ্ঠিত ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে সাধারণত প্রথমে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিষয় থেকে পাস করা প্রার্থী নেওয়ার কথা। কিন্তু সেটি না করে মার্কেটিং ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে উপাচার্যের মেয়েকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন অনুষদে প্রথম হওয়া, প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক পাওয়া, এসএসসি থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত প্রথম বিভাগ বা শ্রেণি থাকা আবেদনকারীকে বাদ দিয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন দুজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। উপাচার্যের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ, তাঁর জন্য নির্ধারিত বাসভবনে ওঠার পর তিনি আগের বরাদ্দ করা বাড়িটি কাগজপত্রে ছেড়ে দিলেও আসবাব রাখার জন্য প্রায় দেড় বছর নিজের দখলে রেখেছিলেন। এরও সত্যতা পেয়েছে কমিটি।
Link copied!