মালয়েশিয়ার বিমানবন্দর থেকেই ফিরতে হলো ১৯ বাংলাদেশিকে
প্রকাশিত: ০৩:০৫ পিএম, মার্চ ৩১, ২০২৩
৪ লাখ ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার ভিসা পেয়ে উড়োজাহাজে উঠেছিলেন জামালপুরের ফারুক হোসেন। গত ৩০ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার বিমানবন্দরে নামেনও তিনি। কিন্তু ঠিক সেদিনই ছিল তার তিন মাসের ভিসার মেয়াদের শেষ দিন। ফলে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে পারেননি ফারুক। শুধু ফারুক নন, তিনিসহ ১৯ জন বাংলাদেশি কর্মীর ক্ষেত্রেই একই ঘটনা ঘটেছে। মালয়েশিয়ার বিমানবন্দর থেকেই তাদের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়।
এর জন্য রিক্রুটিং এজেন্সি ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনালের কাণ্ডজ্ঞানহীনতাকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা। নিয়মানুযায়ী, তিন মাসের ই-ভিসা নিয়ে কর্মীরা মালয়েশিয়া প্রবেশ করার পর সেখানে তাদের মেডিকেল চেকআপ করা হয়। এরপর নিয়োগকর্তা বা সংশ্লিষ্ট কোম্পানি তাদের দীর্ঘমেয়াদি ভিসা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তাদের ২৫ জানুয়ারি জনশক্তি ব্যুরোর ছাড়পত্র দেয়া হয়। কিন্তু ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয়টি রিক্রুটিং এজেন্সি জানার পরও তাদের মালয়েশিয়া পাঠানো হয়। এরপর বিমানবন্দর থেকেই দেশে ফেরত আসা এসব কর্মীকে পরে রিক্রুটিং এজেন্সি জানিয়েছিল, তাদের ১৫ দিনের মধ্যে আবার মালয়েশিয়া পাঠানো হবে। কিন্তু প্রায় দুই মাস কেটে গেলেও ওই কর্মীরা এখনো মালয়েশিয়া যেতে পারেননি। ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল তাদের নতুন ভিসা দিয়েছে। কিন্তু তারও প্রায় দেড় মাস পেরিয়ে গেছে। আবারও ভিসার মেয়াদের শেষ দিকে পাঠানো হলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছেন তারা।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ফারুক হোসেন বলেন, ‘৪ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে অনেক অপেক্ষার পর ভিসা পেয়েছি। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার দুদিন আগে ২৮ জানুয়ারি আমাদের ফ্লাইটের তারিখ পড়ে। কিন্তু শিডিউল জটিলতার কারণে ঢাকায় আমাদের দুদিন হোটেলে রাখা হয়। ভিসার মেয়াদ শেষ জেনেও ৩০ জানুয়ারি আমাদের মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। যার ফলে আমাদের ফিরে আসতে হয়েছে। এই নিয়মকানুন আমাদের জানার কথা নয়। কিন্তু রিক্রুটিং এজেন্সির তো জানার কথা। তাদের কাণ্ডজ্ঞানহীনতার কারণেই এই দশা।’
ফারুক বলেন, ফেরত আসা ১৯ জনের মধ্যে তিনিসহ ১৭ জনই মালয়েশিয়ার একটি কোম্পানিতে কাজের জন্য যাচ্ছিলেন। অপর দুজন অন্য একটি কোম্পানিতে কাজ পেয়েছিলেন। তাদের ১৭ জনকে নতুন করে ভিসা দেয়া হলেও একজনের ভিসা এখনো আসেনি।
আরেকজন ভুক্তভোগী আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘সারাক্ষণ একটা আশঙ্কার মধ্যে আছি। এজেন্সি আমাদের মোবাইলে নতুন ভিসার ছবি পাঠিয়েছে। কিন্তু কবে ফ্লাইট হবে সেই খবর তো দিচ্ছে না।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘টাকা দিতে কম করিনি। আমরা যে কয়জন ফেরত এসেছি, সবাই ৪ লাখ টাকার বেশি করে দিয়েছি। কেউ ৪ লাখ ১০ হাজার, কেউ কেউ ৪ লাখ ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়েছি। তার পরও এই সমস্যায় পড়লাম। রিক্রুটিং এজেন্সি আন্তরিক হলে এই সমস্যা হতো না। জানি না আবারও একই বিপদে ফেলতে যাচ্ছে কি না।’
তবে ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃপক্ষ দুষছে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনস এয়ার এশিয়াকে। ১৫ এপ্রিলের মধ্যেই ওই ১৯ জনকে মালয়েশিয়া পাঠানো হবে বলে জানান রিক্রুটিং এজেন্সিটির মার্কেটিং ম্যানেজার মো. গিয়াসউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘দেখুন ক্ষতিটা কিন্তু আমাদের হয়েছে। নতুন করে ভিসা করাতে আমাদের খরচ করতে হয়েছে। ইচ্ছে করে ক্ষতিটা আমরা করিনি। আসলে দোষটা এয়ার এশিয়া কর্তৃপক্ষের। ফ্লাইট ছিল ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই দিন আগে। তাদের শিডিউল জটিলতার কারণে শেষ দিনে এই লোকগুলোকে মালয়েশিয়া নিয়ে যায় তারা।’
তবে ভুক্তভোগীরা জানান, নতুন করে ভিসা নেয়ার জন্য অতিরিক্ত খরচ লাগতে পারে বলে রিক্রুটিং এজেন্সির পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয়েছে। তবে ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনালের কর্মকর্তা গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘এই খরচ কে দেবে সেটা এখনো আমরা জানি না।’
আর জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর লাইসেন্স মন্ত্রণালয় দিয়ে থাকে। এ ধরনের ত্রুটির ক্ষেত্রে অভিযোগের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এনফোর্সমেন্ট শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাইনি। সাধারণত এসব বিষয়ে অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’