শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

মানব পাচারের টাকা নিজের ও ভাইয়ের অ্যাকাউন্টে

প্রকাশিত: ০৫:২৬ এএম, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০

মানব পাচারের টাকা নিজের ও ভাইয়ের অ্যাকাউন্টে

ডেইলি খবর ডেস্ক: পাপলুর এমপি হওয়ার উদেশ্যই ছিলো বড় ধরনের মানব পাচারের মুল লাইসেন্স। কিন্তু বিধিবাম তার সেই স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেলো। ভোটাররা ভোট কেড়ে নেয়ার কথা বললেও উপায় নেই, তাই পাপলু এমপির জঘন্য-ঘৃণ্য অপরাধ মুখ বুঝে সহ্য করছে। কুয়েতে গ্রেপ্তার হওয়া লক্ষীপুর-২ আসনের এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল তার ভাই কাজী বদরুল আলমের মালিকানাধীন 'জব ব্যাংক ট্রাভেল এজেন্সি'র মাধ্যমে মানব পাচার করতেন। কুয়েতে পাঠিয়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে এ দুই ভাই প্রতিজনের কাছে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা পেতেন। এসব টাকা তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হতো। দেশজুড়েই তাদের দালালচক্র ছিল। জব ব্যাংক ট্রাভেল এজেন্সির ম্যানেজার গোলাম মোস্তফার জবানবন্দিতে এসব তথ্য উঠে এসেছে। মতিঝিল থানায় পাপুলসহ চারজনের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীদের দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার মোস্তফা সম্প্রতি আদালতে জবানবন্দি দেন। মানব পাচারসহ নানা অভিযোগে গত ৭ জুন পাপুলকে কুয়েতের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) গ্রেপ্তার করে। এর পর থেকেই তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, পাপুল মানব পাচারে জড়িত নন। বাংলাদেশের সিআইডি কর্মকর্তারা বলছেন, আসামি গোলাম মোস্তফার জবানবন্দিতে উঠে এসেছে, পাপুল মানব পাচারে জড়িত ছিলেন। তার ভাই কাজী বদরুল আলমের মাধ্যমে তিনি এই মানব পাচার করতেন। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। সিআইডি জানায়, মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে গত ৭ জুলাই মতিঝিল থানায় পাপুলসহ চারজনের বিরুদ্ধে এক ভুক্তভোগী মামলা করেন। ওই মামলা সিআইডি তদন্ত করছে। এখন পর্যন্ত গোলাম মোস্তফাসহ দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও মোস্তফা এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন না। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির এক কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেন,এখন পর্যন্ত পাপুল ও তার ভাই বদরুল শুধু জব ব্যাংক ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে অন্তত দেড় হাজার ব্যক্তিকে কুয়েতে পাচার করেছেন বলে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কত ব্যক্তিকে তারা পাচার করেছেন, তার সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আসামি গোলাম মোস্তফা আদালতে দেওয়া জবানবন্দি ও সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, মানব পাচারের টাকা পাপুল ও তার ভাইয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠাতেন তিনি। তারা নগদ টাকাও নিতেন। তবে ওই দুই আসামি এসব টাকা বিদেশে পাচার করেছেন কিনা, তা যাচাই করা হচ্ছে। সে ধরনের তথ্য মিললে আলাদা মামলা হবে। সিআইডি ও আদালত সূত্র জানায়, গত ২৪ আগস্ট জব ব্যাংক ট্রাভেল এজেন্সির ম্যানেজার গোলাম মোস্তফা আদালতে জবানবন্দি দেন। এতে তিনি বলেন, রাজধানীর মগবাজারে অবস্থিত জব ব্যাংক ট্রাভেল এজেন্সিতে তিনি ২০১২ সাল থেকে ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এর মালিক কাজী বদরুল আলম। তিনি এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলের আপন ছোট ভাই। পাপুলের মাধ্যমেই বদরুল ওই এজেন্সি ব্যবসা করতেন। মোস্তফা বলেন, তিনি বদরুলের নির্দেশে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দালালের মাধ্যমে লোক সংগ্রহ করতেন। এরপর জব ব্যাংক ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে প্রত্যেকের কাছ থেকে পাঁচ-সাত লাখ টাকা নিয়ে কুয়েতে পাঠানোর ব্যবস্থা করতেন। এই কাজের দেখভাল করতেন আইয়ুব নামের এক ব্যক্তি। তবে তিনি বিদেশগামীদের সামনে যেতেন না। নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি (গোলাম মোস্তফা) ফকিরাপুলে বেস্ট ট্রাভেলের মাসুদের মাধ্যমে টিকিট করতেন। জব ব্যাংক ট্রাভেল এজেন্সি থেকে নগদ কিংবা অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে মালিক কাজী বদরুল ও কাজী পাপুলের ব্যাংক হিসাবে টাকা পাঠাতেন। আসামি গোলাম মোস্তফার জবানবন্দিতে উঠে আসে-রুবেল নামের একজনকে কুয়েতে পাঠানোর কথা বলে তার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা নেওয়া হয়। তাকে মনির নামের একজনের সহায়তায় কুয়েত পাঠানো হয়। এমপি পাপুলের কুয়েতি প্রতিষ্ঠান 'মারাফি কুয়েতি'র পক্ষে মাসুদ ও মনিরের সহায়তায় যেসব লোককে কুয়েত নেওয়া হয়েছিল, তাদের শর্তানুযায়ী চাকরি না দেওয়ায় কুয়েতি পুলিশ ওই প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায়। এর পর থেকেই ঢাকায় জব ব্যাংক ট্রাভেল এজেন্সি বন্ধ করে কাজী বদরুল আলমসহ তারা আত্মগোপনে চলে যান। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের সাবেক ডিআইজি ও বর্তমানে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ সমকালকে বলেন,আসামি গোলাম মোস্তফার স্বীকারোক্তি তদন্ত সংস্থার কাছে অত্যন্ত গুরত্বিপূর্ণ। তার স্বীকারোক্তিতে অনেক বিষয় এবং অনেক আসামির নাম বেরিয়ে এসেছে,যারা এজাহারভুক্ত আসামি নন। এখন যাচাই করে এসব আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তিনি আরও বলেন, কাজী পাপুল ও তার ভাই কাজী বদরুল হাজার হাজার মানুষকে বিদেশে পাঠিয়েছেন বলে তথ্য মিলেছে। আসামি তার জবানবন্দিতে বলেছেন, বিদেশে লোক পাঠানোর টাকা ওই দু'জনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। এসব টাকা কোথায় আছে, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা বলেন, তারা পাপুলের ভাই কাজী বদরুল আলমকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাকে গ্রেপ্তার করা গেলে মানব পাচারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসবে। এদিকে লক্ষীপুর-২ নির্বাচনী এলাকার স্থানীয় জনগনের সাথে আলাপ করে জানা গেছে পাপলুদের আর সংসদে দেখতে চায় না।
Link copied!