শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

ভিন্নমত দমনে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ব্যবহার করছে চীন!

প্রকাশিত: ০৫:৩২ এএম, ডিসেম্বর ২৩, ২০২০

ভিন্নমত দমনে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ব্যবহার করছে চীন!

চীনের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি 'ডিবাও' দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দেওয়ার অবস্থান থেকে সরে এসেছে। বর্তমানে সামাজিক এই কর্মসূচিকে চীন সরকারের ভিন্নমত দমনে ব্যবহার করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একজন সমাজ বিজ্ঞানী তার গবেষণায় এ দাবি করেছেন। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার ন্যূনতম মান নিশ্চিত করতে এবং রোজগারের বৈষম্য কমাতে 'ডিবাও' চীনের একমাত্র সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি। এই কর্মসূচির অধীনে স্থানীয় সরকার দ্বারা নির্ধারিত সীমার আওতায় থাকা ব্যক্তিদের সুবিধা দেওয়া হয়। তবে 'ডিবাও' কর্মসূচির আওতায় আসার জন্য আবেদনকারী এবং সুবিধাপ্রাপ্তদের অনেকেই বলছেন, এর প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ এবং এর মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্সেস ২০১২ সালের এক গবেষণায় দেখেছে, ডিবাও কর্মসূচির বদৌলতে মাত্র ২০-৩০ শতাংশ পরিবার সুবিধা পেয়েছে। লেখক জেনিফার প্যান সম্প্রতি একটি বই লিখেছেন। ওয়েলফেয়ার ফর অটোক্র্যাটস নামকে সেই বইয়ে চীনের দমনমূলক সাহায্যের ধারণা ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। অথচ, ১৯৯০ এর দশক থেকে দরিদ্র জরগোষ্ঠীর অবস্থান পরিবর্তনের জন্য ডিবাও কর্মসূচি ব্যবহার হতো। কিন্তু শূন্য দশকে এসে এই সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ভিন্নখাতে প্রবাহিত হতে শুরু করে। রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত করা হয় সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি। ভিন্নমত দমনের ক্ষেত্রেও কাজে লাগানো শুরু হয়। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক প্যান বলেন, সময় বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে, বিশেষ করে ১৯৯৯ সালে ফালুন গং বিক্ষোভের পর একটি পরিবর্তন আপনি দেখতে পাবেন। চীন সরকার দেশের স্থিতিশীলতা নিয়ে কী চিন্তা করছে, তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে তার সম্পর্ক কী এবং কিভাবে তা অনুসরণ করা যায়। তিনি আরো বলেন, সুতরায় সেখানে জনগণের নিরাপত্তার ব্যাপক ব্যবস্থা রয়েছে এবং এই পরিবর্তনের ফলে ডিবাও কর্মসূচিকে সাধারণ কোনো ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়। ২০১২-১৩ সালে গবেষণার জন্য মাঠপর্যায়ের কাজে কয়েক ডজন সরকারি কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নেন প্যান। এমনকি ডিবাও কর্মসূচির আওতায় পড়ার জন্য আবেদনকারী এবং সুবিধাভোগীরও সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তিনি। প্যান বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষের কাছে এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে, নিরাপত্তা শুধু রাজনৈতিক শৃঙ্খলার নিশ্চয়তা দিতে পারে না। তখন বেইজিং নির্দিষ্ট নাগরিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে ডিবাও কর্মসূচি ব্যবহার শুরু করে। প্যান আরো বলেন, ২০১৩ সালে আমি যখন মাঠপর্যায়ের কাজ করছিলাম, তখন স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি যা বুঝেছি তা হলো- এই কর্মসূচি আদৌ মৌলিক অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়নি। আর এটি গবেষণার ভিত্তিতেই বলেছেন প্যান। কারণ, এ ব্যাপারে তিনি জরিপ চালিয়েছেন। তাতে দেখেছেন, ডিবাও কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কী ধরনের। মাঠপর্যায়ের সেই গবেষণার ভিত্তিতেই গবেষণার ফলাফল তৈরি করেছেন প্যান। প্যান বলেন, ২০১৩ সালে যখন আমি মাঠপর্যায়ের গবেষণাকর্ম সম্পাদন করি। তখন আমি স্থানীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলেছি। তাতে জানতে পেরেছি, অর্থনৈকিক অবস্থার ভিত্তিতে ডিবাও কর্মসূচির আওতায় নেওয়া হচ্ছে না। ২০১৯ সালে এসে প্যান দেখতে পান, তার অনেকগুলো নথি ইন্টারনেট থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ডিবাও কর্মসূচির আওতায় তারাই আসে, যারা সরকারের পক্ষের বলে চিহ্নিত হয়। আর তারা নতুনভাবে কোনোকিছু করার ঝুঁকি নেবে না; কারণ এরই মধ্যে তাদের অনেকেই আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেছে। সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট
Link copied!