ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নতুন আইএসপি নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। নতুন নীতিমালার আওতায় বিদ্যমান 'এবিসি ক্যাটাগরি' ভিত্তিক লাইসেন্স ব্যবস্থা তুলে দিয়ে জাতীয়, জেলা এবং উপজেলা ভিত্তিক লাইসেন্স প্রদানের বিষয়টি যুক্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া নতুন নীতিমালায় শুধু ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ব্যান্ডউইথ কেনার বাধ্যবাধকতাও তুলে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে জেলা ও উপজেলা ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো যে কোনো বড় আইএসপির কাছ থেকেও ব্যান্ডউইথ কিনতে পারবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সমকালকে নতুন আইএসপি নীতিমালার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, এই নীতিমালা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। খুব শিগগিরই এ নীতিমালা আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর করার ঘোষণা দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল ইসলাম হাকিম জানিয়েছেন, নতুন নীতিমালায় 'অ্যাকটিভ শেয়ারিং' একাধিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংযোগ লাইন ও অবকাঠামো বিনিময়ের অনুমতি দেওয়ার নীতি অন্তর্ভুক্ত হলে তা ব্রডব্যান্ডের ইন্টারনেটের দ্রুত সম্প্রসারণ এবং আরও মূল্য কমাতে সহায়ক হবে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার নীতিমালা সময়োপযোগী করার দায়িত্ব পালন করেনি বা গ্রাহক সেবার গুণগত মানও নিশ্চিত করতে পারেনি। আইএসপিএবির পক্ষ থেকে বার বার আবেদনের পরও 'অ্যাকটিভ শেয়ারিং' নীতি অনুমোদন করেনি। এমনকি ট্রান্সমিশন সেবার মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া বিটিআরসি ১১ বছর ধরে ঝুলে রাখার ফলে ট্রান্সমিশন সেবা নিয়েও জটিলতার সৃষ্টি হয়। ফলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে গ্রাহকরা অত্যন্ত নিম্নমানের সেবা গ্রহণে বাধ্য হয় এবং বৈধ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী উদ্যোগ নেন এবং তার পরামর্শেই বিটিআরসি শেষ পর্যন্ত একটি নতুন আইএসপি নীতিমালা চূড়ান্ত করে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, আগের নীতিমালায় ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য পাঁচ ধরনের লাইসেন্স দেওয়া হতো। জাতীয় (নেশনওয়াইড), জোনাল (আঞ্চলিক) এবং এ, বি ও সি তিনটি ক্যাটাগরিতে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে লাইসেন্স দেওয়া হতো। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জটিলতার সৃষ্টি হতো এ, বি, সি ক্যাটাগারি নিয়ে। কখনও একটি উপজেলা নিয়ে 'এ' ক্যাটাগরি, আবার কখনও দুটি উপজেলা নিয়েও 'বি' ক্যাটাগরির লাইসেন্স পেত ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। এই ক্যাটাগরি নির্ধারণ নিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো, স্থানীয় মাস্তানদের কাছে গ্রাহক সেবা জিম্মি হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটে আসছিল বছরের পর বছর। ফলে গ্রাহক সেবায় গুণগত মান ও যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও অসম্ভব হয়ে পড়েছিল।
মন্ত্রী জানান, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ডিজিটাল অগ্রযাত্রার মেরুদ। এক্ষেত্রে যথাযথ সেবা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। এ কারণেই আগের নীতিমালার জটিলতা নিরসনের জন্যই নতুন নীতিমালা। এ নীতিমালায় কোনো ধরনের এবিসি ক্যাটাগরি থাকবে না। একটা লাইসেন্স হবে 'জাতীয়' বা নেশনওয়াইড। এই লাইসেন্সপ্রাপ্তরা সারাদেশে সেবা দিতে পারবে। এর বাইরে সরকারি প্রশাসনিক বিভাজন অনুসরণে জেলা ও উপজেলা ভিত্তিক আইএসপি লাইসেন্স দেওয়া হবে। অর্থাৎ জাতীয়, জেলা ও উপজেলা এই তিন স্তরে লাইসেন্স দেওয়া হবে। কেউ নির্দিষ্ট জেলার জন্য, কেউ নির্দিষ্ট উপজেলায় সেবা দেওয়ার জন্য লাইসেন্স নিতে পারবে। পরবর্তী সময়ে প্রয়োজন হলে ইউনিয়ন ভিত্তিক লাইসেন্স দেওয়া যেতে পারে। তবে এ মুহূর্তে সেটার প্রয়োজন দেখা যাচ্ছে না। উপজেলার জন্য যারা লাইসেন্স নেবে তারাই ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সেবা দেবে।
তিনি আরও জানান, বিদ্যমান নীতিমালায় শুধু ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ব্যান্ডউইথ কেনার বিষয়টি বাধ্যতামূলক আছে। নতুন নীতিমালায় এটি তুলে দেওয়া হচ্ছে।
আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল ইসলাম হামিক বলেন, 'নতুন নীতিমালা তৈরির উদ্যোগটি ভালো। তবে ব্যান্ডউইথ কেনার বাধ্যবাধকতা আগের মতোই আইআইজির কাছেই থাকা উচিত। কারণ বড় আইএসপি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ব্যান্ডউইথ কেনার ব্যবস্থা চালু হলে সেটা বর্তমানে ইন্টারনেট মনিটর ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, আবার আইআইজি প্রতিষ্ঠানগুলোও অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে।'