শুক্রবার, ০৯ মে, ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

ব্যয় সংকোচনে ৫০০ প্রকল্পের অর্থ যাচ্ছে অগ্রাধিকার প্রকল্পে

প্রকাশিত: ০৪:৪২ এএম, জুলাই ১৯, ২০২০

ব্যয় সংকোচনে ৫০০ প্রকল্পের অর্থ যাচ্ছে অগ্রাধিকার প্রকল্পে

করোনাভাইরাস মহামারি সরকারের ব্যয়নীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। কোনোকালেই ‘ব্যয় সংকোচন নীতির’ তোয়াক্কা না করে চলা সরকার এবার সে পথেই হাঁটছে। প্রাথমিকভাবে ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘অপ্রয়োজনীয় ব্যয় সংকোচন নীতি’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে আপাতত স্থগিত করা প্রায় ৫০০ কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প থেকে সরকার ৫২ হাজার কোটি টাকা খরচ করবে অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পে। অর্থনীতি ঘুরে না দাঁড়ালে, রাজস্ব আদায় না বাড়লে অন্যান্য খাত থেকেও টাকা অগ্রাধিকারভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্পে স্থানান্তর করা হবে। পাশাপাশি মধ্যমেয়াদি বাজেটে আসবে বড় ধরনের সংশোধন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ ব্যাপারে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতি হয়নি বিশ্বে এমন কোনো দেশ নেই। তাই আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা বলতে কোনো সংকোচ নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার উন্নয়নের চেয়ে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা, টিকিয়ে রাখাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। সে জন্যই এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে উন্নয়নকাজ করা যাবে।’ বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, অর্থবছরের মাত্র শুরু। এর পরও যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় হওয়ার কথা, তা হচ্ছে না। তাই আপাতত ব্যয় কিছুটা কমিয়ে আনা হচ্ছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত এ নীতি চলবে। এর পরও পরিস্থিতি বদল না হলে অন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, ‘করোনাকালীন পরিস্থিতিতে এ পদ্ধতি ঠিকই আছে। তবে রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি বিদেশি উৎস থেকে বাজেট সহায়তা পাওয়ার ব্যাপারে জোর চেষ্টা চালাতে হবে। নয়তো ঘাটতি বাড়বে।’ তিনি বলছেন, এ মুহূর্তে ব্যয় কমানোর কোনো সুযোগ নেই। তাই আয় যেভাবেই হোক বাড়াতে হবে। ভ্যাট আইন পুরোপুরি সংশোধন করা যায়নি। এটা যত দ্রুত সম্ভব করতে হবে। বিদেশি সাহায্যে বিশেষ নজর দিতে হবে, যেন অন্য দেশ পেয়ে না যায়। না হলে সামনে বিপদ আরো বাড়তে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে পুরো অর্থনীতি বিপর্যস্ত। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে সরকারের আয়ে। গত অর্থবছর সরকারের রাজস্ব আয়ে ঘাটতি হয়েছে ৮৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর সবে শুরু হলেও রাজস্ব আয়ে গতি নেই। তাই পদ্মা সেতু, মেট্রো রেলের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য সরকার দুটি নীতি নিয়ে এগোচ্ছে। প্রথম নীতি হলো অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসবহুল খাতে ব্যয় কমানো। দ্বিতীয় নীতি হচ্ছে সাশ্রয়কৃত অর্থ জনগুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পে স্থানান্তর করা। প্রথম নীতি অনুযায়ী, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে তিন ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বা অগ্রাধিকার প্রকল্প, মধ্যম অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প এবং কম অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এডিপিতে মোট দেড় হাজার প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প, যার সংখ্যা ৫৬২। ৩০ শতাংশ মধ্যম অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প, এর সংখ্যা ৪৬৯। বাকি ৩০ শতাংশ বা ৪৬৯টি প্রকল্প কম গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত। এই কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের অর্থ ছাড় স্থগিত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি সরকারি যানবাহন কেনা বন্ধ, অপ্রয়োজনীয় বিদেশভ্রমণ, আপ্যায়নভাতাসহ বিভিন্ন খাতে অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় হিসাব করে দেখেছে, এতে সরকারের সাশ্রয় হবে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা। মন্ত্রণালয় বলছে, সরকারের রাজস্ব আয় কম। তাই জনগুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নে সমস্যা হতে পারে। সর্বাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ যাতে কোনোভাবেই থেমে না যায় বা সমস্যায় না পড়ে, সে জন্য সাশ্রয়কৃত অর্থ এসব প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হবে। ফলে পদ্মা সেতুর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ করা হবে সাশ্রয়কৃত ৫২ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ে গতি যদি না আসে, তবে ডিসেম্বরের পর আবারও বড় ধরনের ব্যয় কাটছাঁটে যেতে হবে। সুত্র: কালের কণ্ঠ
Link copied!