শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

বেতন অল্প কিন্তু ব্যাংক হিসাবে কোটি টাকা লেনদেন

প্রকাশিত: ০৪:০২ এএম, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২০

বেতন অল্প কিন্তু ব্যাংক হিসাবে কোটি টাকা লেনদেন

ডেইলিখবর ডেস্ক: বেতন অল্প হলে কি হবে ব্যাংকে লেনদেন কোটি টাকা। আলাদিনের চেরাগ এখন ইচ্ছে করলেই কি পাওয়া যায়? লিবিয়ায় মানব পাচারের ঘটনায় জড়িত ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অফিস সহকারী নূরজাহান আক্তার ও তার স্বামীর আবদুস সাত্তারের ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এ দম্পতির নামে ১২টি ব্যাংকে ৪৪টি হিসাব রয়েছে। সব হিসাবেই নগদ অর্থ জমা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সুত্রগুলো থেকে জানা গেছে তারা স্বামী-স্ত্রী ৩ ব্যাংকের ৯টি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতেন। অল্প বেতনের একজন সরকারি কর্মচারীর ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের তথ্যে হতবাক বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কর্মকর্তারা। তরা আশঙ্কা করছেন, ওই দম্পতি বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন। বিএফআইইউর দেয়া প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ২৭ জুলাই পর্যন্ত নূরজাহান আক্তারের নামে ১৮টি ব্যক্তি হিসাব রয়েছে। এসব হিসাবে ২ কাটি ২৪ লাখ টাকা জমা হয়েছে। যার অধিকাংশই নগদ জমা করা হয়েছে। এছাড়া একই সময়ে স্বামী আবদুস সাত্তারের ৭টি ব্যক্তি হিসাবে ৫৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা জমা হয়েছ। এগুলো নগদ জমা। এর বাইরে আবদুস সাত্তারের পরিচালিত জাহান ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের ৩টি ও টি-২০ ওভারসিজের একক ব্যক্তি হিসাবে ২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা জমা হয়েছে। এত বিপুল অর্থ নগদ জমা হওয়ার বিষয়টি ওই ব্যক্তিদের পেশার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। মানব পাচার ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে। এছাড়া ব্যক্তি হিসেবে বিপুল পরিমাণ অর্থ নগদে জমা হওয়ায় কর ফাঁকির ঘটনা থাকতে পারে। প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, এবি ব্যাংকে নূরজাহান আক্তারের নামে দুটি ব্যাংক হিসাবের মধ্যে ডিপোজিট স্কিমে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৩৫৩ টাকা ও সঞ্চয়ী হিসাবে ৩৮ লাখ ২৭ হাজার ৩১১ টাকা জমা হয়েছে। পরে এ টাকা উত্তোলন করা হয়। সঞ্চয়ী হিসাবে রয়েছে ১ হাজার ৩২৪ টাকা। ব্র্যাক ব্যাংকে আবদুস সাত্তারের নামে ঋণ রয়েছে ২৯ লাখ ৫ হাজার ২৩ টাকা। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে আবদুস সাত্তারের নামে সঞ্চয়ী হিসাবে রয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৭৫০ টাকা। জাহান ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের চলতি হিসাবে আছে ৩ হাজার ২৫৭ টাকা। টি-২০ ওভারসিজের চলতি হিসাবে রয়েছে ১১ হাজার ১৮৮ টাকা। ইসলামী ব্যাংকের আবদুস সাত্তারের নামে মুদারাবা সঞ্চয়ী হিসাবে আছে ৫ লাখ ৫৯ হাজার ৪৭ টাকা। ন্যাশনাল ব্যাংকে নূরজাহান আক্তারের নামে সঞ্চয়ী হিসাবে আছে ১ হাজার ২৩০ টাকা। এছাড়া ওয়ান ব্যাংকে নূরজাহানের নামে ঋণ হিসাবে আছে ২৬ লাখ ৪১ হাজার ৮৩৭ টাকা। ৮৮ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট থাকলেও তা উত্তোলন করা হয়। বিশেষ ডিপোজিট স্কিমে আছে ২ লাখ ২৩ হাজার ১৪৫ টাকা। চলতি হিসাবে আছে ৩ লাখ ৫ হাজার ৮৪৫ টাকা। জাহান ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের চলতি হিসাবে আছে ১ হাজার ৩৫৭ টাকা। প্রাইম ব্যাংকে আবদুস সাত্তারের নামে সঞ্চয়ী হিসাবে আছে ৪৭ হাজার ৬৭২ টাকা। শাহজালাল ব্যাংকে নূরজাহানের অ্যাকাউন্ট থাকলেও তাতে লেনদেনের তথ্য নেই। সাউথইস্ট ব্যাংকে আবদুস সাত্তারের নামে সঞ্চয়ী হিসাবে আছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৭৫ টাকা। উত্তরা ব্যাংকে নূরজাহানের নামে ৭টি হিসাবের খোঁজ মিলেছে। চলতি হিসাবে আছে ২৯ হাজার ৬২ টাকা। দুটি সঞ্চয়ী হিসাবে আছে যথাক্রমে ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৯৬১ টাকা এবং ৫৫ হাজার ২৭৮ টাকা। মাসিক ডিপোজিট স্কিমে আছে ৭ লাখ ৩৭ হাজার ৭০৪ টাকা। উত্তরণ স্বপ্ন পূরণ সঞ্চয় প্রকল্পের স্কিমে আছে ৮ লাখ ৮৮ হাজার ২২৬ টাকা। স্ট্যান্ডার্ড চার্টাড ব্যাংকে মোহাম্মদ হাবিব উল ফিরোজ নামে দুটি সঞ্চয়ী হিসাবে আছে যথাক্রমে ২২ টাকা ও ৪ লাখ ৩ হাজার ৪০৪ টাকা। এছাড়া স্ট্যান্ডার্ড চার্টাড ব্যাংকে নূরজাহান আক্তার, আবদুস সাত্তার ও মোহাম্মদ হাবিব উল ফিরোজের দুটি করে ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। প্রাইম ব্যাংকে আবদুস সাত্তারের দুটি, ব্র্যাক ব্যাংকের ১টি ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। আর নূরজাহান আক্তারের নামে ব্র্যাক ব্যাংকের ২টি ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। ৫ জুন মানব পাচার আইনে নূরজাহান আক্তার ও তার স্বামী আবদুস সাত্তারের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় মামলা করে সিআইডি। মামলায় আরও ৩৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়। ২৩ আগস্ট অন্তবর্তীকালীন জামিন পান নূরজাহান আক্তার। বর্তমানে তিনি পলাতক রয়েছেন।
Link copied!