ডেইলি খবর ডেস্ক: দাপট আর জিম্মি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নিম্ন পদের কর্মচারী, সিবিএ নেতা মো. সুলতান আহম্মেদের কাছে প্রতিষ্টানের কর্মকর্তা কর্মচারিরা। সরকারি প্রতিষ্ঠানে ছোট পদে থেকে সর্বত্র ক্ষমতা বিস্তার আর বড়দের সঙ্গে চলাফেরা করতে কোনো সমস্যা হয় না-যদি তিনি ভাগ্যগুণে সিবিএ নেতার আসনে বসতে পারেন। এই আসনে একবার বসতে পারলে তার ক্ষমতা, দাপট, প্রভাব এমনিতেই বেড়ে যায়। অবৈধ উপায়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়ার স্বপ্নও পূরণ হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নিম্ন পদের কর্মচারী, সিবিএ নেতা মো: সুলতান আহম্মেদ তারই জ্বলন্ত প্রমাণ। এরই মধ্যে সুলতান আহম্মেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পেশ করা এক অভিযোগ থেকে তার নামে-বেনামের সম্পদের অজানা তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, পাউবো সিবিএর সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহম্মেদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে শূন্য হাত থেকেই বিরাট অঙ্কের সম্পদের মালিক হয়েছেন। প্রভাব খাটিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ পথে নামে-বেনামে অর্জন করেছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ। চলেন সরকারি পাজেরো গাড়িতে। গোটা পাউবো এখন তার কাছে জিম্মি। সহকারী হিসাবরক্ষক পদের তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারী হয়েও দুর্নীতির রুই-কাতলা হওয়া যায়- সুলতান আহম্মেদ তারই উদাহরণ। অনায়াসেই টাকা, জমি, বাড়ি, গাড়ির মালিক হয়েছেন তিনি।
সিবিএ নেতা সুলতান আহম্মেদ বলেন, সিবিএ নির্বাচনে যারা পরাজিত হয়েছেন, তারাই আমার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দিয়েছে। এর আগেও একাধিকবার অভিযোগ দিয়েছে। পাউবোর একটি পক্ষ তার সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন করতে তার বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ দিচ্ছে। টাকা, জমি,বাড়ি,গাড়িসহ নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়া ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। আরও বলেন, পাজেরো গাড়ি ব্যবহারের তথ্য সঠিক নয়।
দুদকে পেশ করা অভিযোগ থেকে জানা গেছে, সুলতান আহম্মেদ নিজের নামে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়নের দেউলপাড়া (দেলপাড়া) মৌজায় ১২.৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন। এই জমির দলিলের কপিও রয়েছে দুদকে পেশ করা অভিযোগের সঙ্গে। স্ত্রী হাজেরা আহম্মেদের নামে একই মৌজায় ৪১৬ অযুতাংশ, বোন শাহানা বেগমের নামে আরও ৪১৬ অযুতাংশ ও ভাই আব্দুস সোবাহানের নামে ৪১৭ অযুতাংশ জমি ক্রয় করেছেন। এসব জমির দলিলও দেওয়া হয়েছে দুদককে। দেউলপাড়া মৌজায় নামে-বেনামে ক্রয় করা ওই জমিতে ১০ তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন এই সিবিএ নেতা। এই বাড়ির নকশা ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদনের কপি দেওয়া হয়েছে দুদককে।
দুদক সূত্র জানায়, সুলতান আহম্মেদের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের বিশাল পার্থক্য রয়েছে। ওইসব সম্পদ তার বৈধ আয়ের সঙ্গে কোনোভাবেই সংগতিপূর্ণ নয়। তার নামে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে মোটা অঙ্কের নগদ টাকা, এফডিআর ও সঞ্চয়পত্র রয়েছে। বেনামে স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, জামাতা এমনকি পিয়নের নামেও সম্পদ করেছেন।
ক্ষমতার অপব্যবহার: অভিযোগে বলা হয়, সিবিএ নেতা হয়ে প্রভাব খাটিয়ে পাউবোর কোটি টাকার বেশি মূল্যের টয়োটা প্রাডো ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-২৬০৬নং গাড়িটি চার বছর ধরে ব্যবহার করেছেন। ফ্লাগ স্ট্যান্ড বিশিষ্ট ওই গাড়িটিতে সুলতান আহম্মেদ ও তার পরিবারের সদস্যরা নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতেন। সম্প্রতি সুলতান আহম্মেদের ছেলে গাড়িটি ব্যবহারের সময় ঢাকার লালবাগ এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় এর ব্যাপক ক্ষতি হয়। সড়ক দুর্ঘটনার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পরে অজ্ঞাত কারণে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। সড়ক দুর্ঘটনার এ ঘটনাটি পাউবোর শৃঙ্খলা পরিদপ্তরে নথিবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে।
পরে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িটি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট করা কেন্দ্রীয় যানবাহন পুলের একটি অত্যাধুনিক টয়োটা জিপ ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-২৪০২ গাড়ি জোরপূর্বক নিয়ে পাঁচ বছর ধরে সার্বক্ষণিক ব্যবহার করছেন। যানবাহন পরিদপ্তরে থাকা গাড়ির নথিতে গাড়িটি জোরপূর্বক নেওয়া ও বেআইনিভাবে সার্বক্ষণিক ব্যবহারের বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে। সুলতান আহম্মেদের দাপটের কারণে পাউবো প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
সুলতানের অনুসারী খবিরের স্বেচ্ছাচারিতা: অভিযোগে আরও বলা হয়, সিবিএ নেতা সুলতান আহম্মেদের অনুসারী পাউবোর গাড়িচালক মো. খবির উদ্দিন ১২ বছর ধরে অফিসে হাজির হন না। গাড়িও চালান না। নিয়মিত বেতন-ভাতা নিচ্ছেন ঠিকই। পাউবো (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকরি প্রবিধানমালা-২০১৩ অনুযায়ী, কেউ একটানা পাঁচ বছর অনুপস্থিত থাকলে তার চাকরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিসমিস হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে ওই গাড়িচালক এখনও বহাল তবিয়তে। তার অনুপস্থিতি ও বেতন-ভাতার নথি দুদকে জমা দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, খবির উদ্দিন ১২ বছরে মাসিক বেতন-ভাতা বাবদ ৪৩ লাখ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। এর বিনিময়ে খবির উদ্দিন প্রতি মাসে সুলতান আহম্মেদকে পাঁচ হাজার টাকা করে দিয়েছেন। ১২ বছরে দিয়েছেন ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। সুলতানের আশীর্বাদপুষ্ট খোরশেদের কান্ড: সুলতান আহম্মেদের আশীর্বাদপুষ্ট পাউবো সিবিএর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ আলমের কর্মস্থল রাজধানীর ৭২নং গ্রিন রোডের পানি বিজ্ঞান অঙ্গনে। পানি বিজ্ঞান অঙ্গনে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ৩০টি পাকা, সেমি পাকা বাড়ি নির্মাণ করেছেন তিনি। ১২ বছর ধরে পাউবো ও বহিরাগত লোকেরা বাস করছে ওইসব বাড়িতে। প্রতিটি বাড়িতে পানির লাইন ও বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া হয়েছে পাউবোর পার্শ্ববর্তী দপ্তর ভবন থেকে। এতে পানি ও বিদ্যুৎ বিল বাবদ প্রতি মাসে সরকারের প্রায় দেড় লাখ টাকা অপচয় হচ্ছে। এই বিল পাউবোর হাইড্রোলজি দপ্তর থেকে পরিশোধ করা হচ্ছে। বাড়িগুলো নির্মাণের সময় বসবাসকারীদের প্রতি জনের কাছ থেকে এককালীন কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে প্রতি মাসে কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা করে উত্তোলন করা হচ্ছে। এই হিসাব অনুযায়ী ৩০টি বাড়ি থেকে গত ১২ বছরে ১৩ লাখ টাকার বেশি আদায় করা হয়েছে। এই টাকার ভাগের অর্ধেক গেছে সিবিএ নেতা সুলতানের পকেটে। গত ১২ বছরে ৩০টি বাড়ির পানি ও বিদ্যুৎ বিল বাবদ সরকারের ক্ষতি হয়েছে দুই কোটি ১৬ লাখ টাকা। জানা গেছে,ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ৯ সেপ্টেম্বর দুদকের উপপরিচালক সেলিনা আখতার মনি সিবিএ নেতা সুলতান আহম্মেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।