শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নতুন দেয়া ব্যাংকে খেলাপি ঋণ

প্রকাশিত: ০৪:২৩ এএম, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২০

পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নতুন দেয়া ব্যাংকে খেলাপি ঋণ

ডেইলিখবর ডেস্ক: নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলোয় চলতি বছরের জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৫০০ কোটি টাকা। এ ধরনের ১০টি ব্যাংকের মধ্যে ৯টি ব্যাংকেরই এই দুর্দশা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী ছয় মাসের ব্যবধানে খেলাপি বেড়েছে ২২৪ কোটি টাকা। আর বছরের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ৪৪৯ কোটি টাকা। বছর শেষে এ ধরনের ১০টি ব্যাংকের মধ্যে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭টির, কমেছে মাত্র ২টির। ১টি এখনও খেলাপিতে পড়েনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনিয়ম, দুর্নীতি এবং আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ের কারণে চতুর্থ প্রজন্মের নতুন ৯ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের বোঝা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক নির্দেশনার পরও কয়েকটি ব্যাংক শৃঙ্খলায় ফেরেনি। ফলে আর্থিক ঝুঁকিতে পড়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব ব্যাংককে লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণেই নিয়মের কোনো তোয়াক্কা করছে না তারা। এসব সমস্যা সমাধানে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও কঠোর হতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ৯ ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৭৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। কিন্তু মাত্র ছয় মাস আগে এই খেলাপির পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। সুতরাং ছয় মাসের ব্যবধানে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২২৪ কোটি টাকার বেশি। অপরদিকে ২০১৯ সালের জুনে এই ৯ ব্যাংকের মোট খেলাপি ছিল ৫ হাজার ২৮ কোটি ২২ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি বেড়েছে ৪৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা।বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নতুন প্রজন্মের ৯ ব্যাংকের মধ্যে খেলাপি ব্যাংকের তালিকায় শীর্ষে পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক)। চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭০৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা, যা গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ছিল ৩ হাজার ৯৮৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছে ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড। জুন শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫৪৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। ডিসেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ২৫৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা। সাউথ-বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩০৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা; গত ডিসেম্বরে ছিল ২৪৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। মেঘনা ব্যাংকের জুন শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৪৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা; ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ছিল ২৪৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের খেলাপি দাঁড়িয়েছে ২০৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা; ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ১২৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৫০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, যা আগের বছর ছিল ১৪৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এনআরবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৪৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা; আগের বছর যা ছিল ৯৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। মধুমতি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ চলতি বছরের জুন শেষে দাঁড়িয়েছে ৮৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা; গত বছরের ডিসেম্বরে ছিল ৭৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা। মিডল্যান্ড ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৭০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা; গত বছরের ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ৫৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। তবে কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ এখনও খেলাপিতে পড়েনি। সঙ্গত, নানা তৎপরতা ও সুযোগ-সুবিধার পরও কমেনি খেলাপি ঋণ। করোনাকালীন সুবিধার মধ্যে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ গ্রাহককে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত না করা ও বিদ্যমান নীতিমালার আওতায় খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলে বিশেষ ছাড় অন্যতম। তারপরও বাড়ছে খেলাপি। গত তিন মাসেই (এপ্রিল-জুন) পুরো ব্যাংকিং খাতে তিন হাজার ৬০৬ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বেড়েছে, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৯ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ। জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণ ৯৬ হাজার ১১৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। সূত্র- যুগান্তর
Link copied!