শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

নেহার টার্গেট ছিল কোটিপতির সন্তানরা

প্রকাশিত: ০৫:০৭ এএম, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২১

নেহার টার্গেট ছিল কোটিপতির সন্তানরা

রাজধানীতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার ভিকটিমের বান্ধবী ফারজানা জামান ওরফে ডিজে নেহা রিমান্ডে পুলিশকে ‘ধনীর দুলালদের’ অন্ধকার জগতের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। পুলিশ নেহাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে শুক্রবার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। তার দেওয়া তথ্য অনেকটাই ভাবিয়ে তুলেছে তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। নগরীতের রাতের পর রাত উঠতি তরুণ-তরুণীদের এমন কার্যকলাপ চললেও তা যেন অনেকটা ছিল নজরের বাইরেই। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এসব কর্মকাণ্ডের লাগাম না টানা গেলে সমাজে বাড়বে বিশৃঙ্খলা। গ্রেফতার নেহা রাতের ঢাকার বিভিন্ন পার্টিতে অংশগ্রহণকারী ধনীর দুলালদের কাছে পরিচিত মুখ। বিভিন্ন বার, রেস্টুরেন্টে কখনো ঠোঁটে সিসার পাইপ আবার কখনো হাতে দামি বিদেশি মদের বোতল নিয়েও দেখা যেত তাকে। ব্যবহার করতেন দামি ব্র্যান্ডের ড্রেস-মেকআপ। পুলিশ বলছে, বিভিন্ন হোটেল, সিসা বারে এবং অভিজাত ফ্ল্যাটে নেহা প্রতিরাতেই আয়োজন করত ডিজে পার্টির। টার্গেট করে এসব পার্টিতে ডেকে আনত কোটিপতির সন্তানদের। তার সঙ্গে যুক্ত ছিল আরেক বন্ধু আরাফাত। এসব পার্টিতে সুন্দরী তরুণী এবং মদের জোগান দেওয়া হতো। নেহা পুলিশকে জানিয়েছে, মদ এবং তরুণীদের জোগান দিয়ে সে বিত্তশালীদের সন্তানদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিত। এটাই ছিল তার উপার্জনের উৎস। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যেসব তরুণীকে এসব পার্টিতে নিয়ে যাওয়া হয়, তাদের অধিকাংশই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া। অনেকে এসব পার্টিতে যোগ দেয় অর্থের বিনিময়ে, আর কেউ কেউ মানসিক প্রশান্তি খুঁজতে। মধ্যরাতে পার্টি শেষে তাদের অনেকে লং-ড্রাইভে যায় ছেলে বন্ধুর সঙ্গে। রিমান্ডে আরও বেশকিছু তথ্য নেহার কাছ থেকে পেয়েছে পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। পুলিশ বলছে, নেহা উত্তরার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও পড়াশোনা শেষ করেননি। বছর খানেক আগে এক লন্ডন প্রবাসীকে বিয়ে করেন। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশিদ বলেন, নেহাকে জিজ্ঞাসাবাদে বড়লোকের সন্তানদের কারও কারও অন্ধকার জগতের চাঞ্চল্যকর বেশকিছু তথ্য পেয়েছি। নেহা ও আরাফাত এ ধরনের পার্টির আয়োজন করত। নেহার টার্গেট ছিল বড়লোকদের সন্তান। তাদের পেছনে রয়েছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী, লাইসেন্স না থাকলেও যারা মদের জোগান দিত, আবার কেউ কেউ বারের লাইসেন্স না থাকলেও মদ খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিত। তিনি বলেন, সন্তানদের এমন অবস্থার জন্য দায়ী তাদের পরিবার। ডিসি হারুন বলেন, যাদের নামে মামলা হয়েছে, তাদের পরিবারের হয় বাবার সঙ্গে মার সম্পর্ক নেই অথবা মা-বাবার সঙ্গে ছেলে-মেয়ের মিল নেই। অথবা তারা মা-বাবার অবাধ্য সন্তান। তারা সারা রাত বাইরে থাকছেন। কারও কথা শুনছেন না। পরিবার বিচ্ছিন্ন বা অবাধ্য তরুণ-তরুণীদের কারণেই সমাজে এসব ঘটনা ঘটছে। ডিজে পার্টিগুলো ও অবৈধ মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতি নজর রাখতে হবে। সন্তানরা সারা রাত বাইরে কোথায় ঘুরছে অভিভাবকরা তা খেয়াল না রাখলে এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ২৮ জানুয়ারি উত্তরার ব্যাম্বো স্যুট রেস্টুরেন্টে এক পার্টিতে অংশ নিয়েছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ তরুণ-তরুণী। সেখানে মদ্যপানের পর অসুস্থ হয়ে পড়লে ফারাহ মাদুরী নামের ওই তরুণীকে মোহাম্মদপুরে বান্ধবী নুহাত আলম তাফসিরের বাসায় নিয়ে যায় মাদুরীর প্রেমিক মর্তুজা রায়হান চৌধুরী। সেখানে রাতে আরিফ ও মাদুরীর মাঝে শারীরিক সম্পর্ক হয়। পরদিন মাদুরী আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে কল্যাণপুরের ইবনে সিনা ও পরে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩১ জানুয়ারি ফারাহ মাদুরি মারা যায়। এ ঘটনায় ভোক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় আরিফসহ পাঁচজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। এদিকে ওই মামলার আসামি আরাফাতও মদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে ৩০ জানুয়ারি ধানমন্ডির সেন্ট্রাল হাসপাতালে মারা যায়। এদিকে ৩১ জানুয়ারি মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ মাদুরীর বন্ধু আরিফ এবং বান্ধবী তাফসিরকে গ্রেফতার করে। তাদের পাঁচদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে দায় স্বীকার করলে শুক্রবার আরিফকে এবং শনিবার তাফসিরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। মামলার অপর আসামি নেহাকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। এর আগে মামলার অপর আসামি শাফায়াত জামিল বিশাল গত বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে আত্মসমর্পণ করে হলফনামা জমা দিয়েছেন। আদালত তাকেও কারাগারে পাঠিয়েছে।
Link copied!