দক্ষিণ আফ্রিকায় এক বাংলাদেশি ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে জোহান্সবার্গে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহত ইব্রাহিম খলিল সোহেলের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ পৌরসভার টিএন্ডটি এলাকায়। কাঠ ও করাত কল ব্যবসায়ী গোলাপ সর্দারের ৮ সন্তানের মধ্যে নিহত ইব্রাহিম খলিল সোহেল ছিলেন সবার ছোট। অপর এক বাংলাদেশির সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে- এমন অভিযোগ করেছেন নিহতের স্বজনরা। এমন পরিস্থিতিতে পরিবারের সদস্য এবং এলাকাবাসী হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন।
প্রবাসে স্বজনকে হারিয়ে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী গোলাপ সর্দারের পরিবারে এখন চলছে আহাজারি আর শোকের মাতম। দেখতে আসা প্রতিবেশীরা সমবেদনা জানাচ্ছেন তাদের। তবে কারো শান্ত্বনাই তাদের মন মানছে না।
গত সাত বছর আগে এই পরিবারের সদস্য ইব্রাহিম খলিল সোহেল (২৭) দক্ষিণ আফ্রিকা পাড়ি জমান। সেখানে জোহান্সেবার্গের গুয়েটেং শহরে ব্যবসা করতেন তিনি। থাকতেন ৭৩ নম্বর অগেস্টা সড়কে। প্রবাসে বেশ ভালোই কাটছিল সোহেলের দিনকাল। দেশে ফিরে বিয়ে করার কথা ছিল তার।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর স্বজনদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন ইব্রাহিম খলিল সোহেল। এ সময় তার কিছু কষ্টের কথাও জানান তাদের। এমন তথ্য জানিয়েছেন, সোহেলের ছোটবোন নিপা আক্তার।
তিনি জানান, তার ভাইয়ের দামি একটি মুঠোফোন ছিল। কেউ একজন তা ভেঙে ফেলে। পরে নতুন মুঠোফোন সংগ্রহ করে তা দিয়ে হোয়াটস অ্যাপে বাংলাদেশে শেষবারের মতো স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন সোহেল। এ সময় সেখানে কিছু ঝামেলা হচ্ছে, এমন কথাও জানান বোনকে। কিন্তু সেই সুখ টিকতে দেয়নি আরেক বাংলাদেশি। এমন কথা বলে, কান্নায় ভেঙে পড়েন নিপা আক্তার।
নিহতের বড়ভাই মামুন সর্দার জানান, গত কিছুদিন ধরে রুবেল নামে অপর বাংলাদেশির সঙ্গে আর্থিক লেনদেন নিয়ে বিরোধ চলছিল সোহেলের। তিনি দাবি করেন, সেই রুবেল গতকাল রাতে সোহেলকে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে। নিহতের বাবা গোলাপ সর্দার অভিযোগ করেন, তাদের পাশের গ্রাম সন্তোষপুরের সাত্তার মিজির ছেলে রুবেলও দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকে। তার কাছে আমার ছেলে প্রায় দেড় কোটি টাকা পাবে। সেই টাকার জন্য চাপ দেওয়া হলে রুবেল তার বাসায় ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের কাছে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে, মামুনুর রশিদ পাঠান, মাহবুবুর রহমান সোহাগ নামে বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশিদের মধ্যে বিরোধে এমন হত্যাকাণ্ড দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে যারা অপকর্ম করছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।