শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

টিকিট হাতে, মিলছে না করোনা সনদ

প্রকাশিত: ০৪:৩৪ এএম, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০

টিকিট হাতে, মিলছে না করোনা সনদ

শনিবার দুপুর আড়াইটা। ঝিরঝির বৃষ্টির মধ্যে অর্ধভেজা অবস্থায় মহাখালীর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মার্কেটের গেটে কাগজপত্র হাতে ছোটাছুটি করছিলেন মো. আব্দুস সালাম। পরে গেটে অবস্থানরত সেনাবাহিনীর এক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে ছুটলেন ভেতরে। তাঁর সঙ্গে ভেতরে যান এই প্রতিবেদকও। সালাম বলেন, ‘আজ (গতকাল) রাত ৩টার ফ্লাইটের টিকিট পেয়েছি। এর আগে করোনা টেস্টের ফলাফল নিয়ে রাত ১১টার মধ্যে উপস্থিত হতে হবে বিমানবন্দরে। সাত দিন ধরে এক কাপড়ে আছি। বাসায় যাইনি। বহু চেষ্টার পর টিকিট পেয়েছি, কিন্তু রিপোর্ট ছাড়া তো প্লেনে উঠতে দেবে না। সবাই বলছে সাত-আট ঘণ্টায় রিপোর্ট পাওয়া যায় না। সৌদি যেতে না পারলে পরিবার নিয়ে পথে নামতে হবে।’ পরে সেখানে আসা মো. আলামিন নামের আরেক প্রবাসী বললেন, ‘গত রবিবার থেকে আমি (সৌদি আরব যাওয়ার) টিকিটের জন্য ঘুরছি। আজকে টিকিট পেলাম দুপুর ২টায়। রবিবার সকাল ৭টায় করোনার রিপোর্ট নিয়ে বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকতে হবে। শুনেছি দুপুর ২টার পর আর পরীক্ষা করা যায় না। যেতে না পারলে চাকরি থাকবে না।’ মোহাম্মদ রানা নামের আরেক প্রবাসী বলেন, ‘আমাকে গতকাল দুপুর দেড়টায় টিকিট ধরিয়ে দিয়ে রবিবার সকাল ৭টায় এয়ারপোর্টে করোনার রিপোর্ট নিয়ে থাকতে বলা হয়েছে। এখান থেকে সকাল ৭টার আগে টেস্টের রিপোর্ট দেওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। পরীক্ষা করার জন্য আরো একটু বেশি সময় দিলে এই হয়রানি হতো না।’ আরেক সৌদিপ্রবাসী নান্নু মিয়া বলেন, ‘আমি এক সপ্তাহ ধরে টিকিটের জন্য ঘুরছি। গতকাল দুপুর ২টায় সৌদি এয়ারলাইনসের টিকিট হাতে পেয়েছি। করোনার রিপোর্ট নিয়ে কাল সকাল ৭টার মধ্যে এয়ারপোর্টে থাকতে হবে। এখনে স্যাম্পল দিয়েছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই রিপোর্ট পাওয়ার চান্স নাকি ফিফটি-ফিফটি। এত কষ্টের পরও নিশ্চয়তা পাচ্ছি না।’ শনিবার দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত আব্দুস সালাম, আলামিন, নান্নু মিয়ার মতো দুই শতাধিক প্রবাসীকে মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটে ছুটতে হয়েছে করোনা পরীক্ষার স্যাম্পল দেওয়ার জন্য। প্রায় এক সপ্তাহ অপেক্ষার পর গতকাল টিকিট পেলেও করোনা পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সময় পাননি এঁরা কেউ। গতকাল দুপুর দেড়টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সৌদি এয়ারলাইনসের পক্ষ থেকে এই প্রবাসীদের টিকিট হস্তান্তর করে আজ সকাল ৭টায় এয়ারপোর্টে থাকতে বলা হয়েছে। টিকিট দেওয়ার পর করোনা পরীক্ষার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে মাত্র ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা। এই স্বল্প সময়ে করোনা টেস্টের ফলাফল পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত সৌদি আরব যেতে পারবেন কি না তা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন দুই শতাধিক প্রবাসী শ্রমিক। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সৌদি এয়ারলাইনসকে যাত্রীদের করোনা পরীক্ষার জন্য অন্তত ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়ার কথা বলা হলেও ২৪ ঘণ্টা সময়ও না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন দায়িত্বরত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা। ডিএনসিসি মার্কেটে দায়িত্বরত ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা. মঈনুল আহসান বলেন, ‘আমাদের একটি (করোনার) রিপোর্ট তৈরি করতে সময় লাগে অন্তত ২৪ ঘণ্টা। সৌদি এয়ারলাইনস আমাদের ৪৮ ঘণ্টা সময় দেবে বলেছে। কিন্তু তারা যাত্রার মাত্র সাত থেকে আট ঘণ্টা আগে টিকিট দিচ্ছে। তারা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা সবার স্যাম্পল নিচ্ছি, কাউকে ফেরত পাঠাচ্ছি না।’ বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করায় সিলেট বিভাগের বিদেশগামীদের জন্য করোনা পরীক্ষার আলাদা বুথ স্থাপন করলেও প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় চাপ কমাতে সিলেটে করোনা পরীক্ষার বুথের সংখ্যা আরো বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সিলেটের প্রবাসীরা। সিলেট অফিস জানায়, প্রতিদিন ২০০ থেকে ২২০ জন যাত্রী করোনা পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করেন। কিন্তু একটিমাত্র বুথ থাকার কারণে করোনা পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে তাঁদের। এদিকে টিকিট পেয়েও সৌদি আরবে যেতে পারেননি ৩২ জন প্রবাসী কর্মী। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের করোনা পরীক্ষার সনদ জমা দেওয়ায় তাঁদের বোর্ডিং কার্ড ইস্যু করা হয়নি। সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনসের এসভি ৩৮০৭ ফ্লাইটে এই ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাঁদের রেখেই ছেড়ে যায় ফ্লাইটটি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কেরানীগঞ্জের প্রবাসী নূর ইসলামের চাচা আলমগীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘নূর ইসলামের করোনা টেস্ট ধানমণ্ডি ইবনে সিনা হাসপাতালে করানো হয়েছে। সেই নেগেটিভ সনদ নিয়ে বিমানবন্দরে আসছি, কিন্তু আমার ভাতিজাকে বোর্ডিং কার্ড দেয়নি।’ এ বিষয়ে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনসের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরবর্তী সময়ে এই যাত্রীদের অন্য ফ্লাইটে যাওয়ার ব্যবস্থা হবে কি না তা-ও জানানো হয়নি। সৌদি আরব যেতে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক। নমুনা সংগ্রহের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সৌদি আরব পৌঁছাতে হবে। এ জন্য সব যাত্রীকে ঢাকায় সরকার নির্ধারিত সেন্টার থেকে কভিড পরীক্ষা করাতে হবে।
Link copied!