শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

ঘুষ দুর্নীতির লুকানো অর্থ-সম্পর্দ ধরেছে দুদক

প্রকাশিত: ০৩:৫০ এএম, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২০

ঘুষ দুর্নীতির লুকানো অর্থ-সম্পর্দ ধরেছে দুদক

ডেইলি খবর ডেস্ক: নৌপরিবহন অধিদফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার এসএম নাজমুল হক ঘুষের ৫ লাখ টাকাসহ দুদকের হাতে গ্রেফতারের পর সাময়িকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। দুই দফায় জেলও খাটেন ৮ মাস। গুরুতর এই অপরাধে চাকরিতে ফেরা তার অনিশ্চিত। কিন্তু চাকরি গেলেও শেষরক্ষা হচ্ছে না। ইতোমধ্যে দুদকের অনুসন্ধানে তার বিপুল পরিমাণ আয়বহির্ভূত সম্পদেও সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। দীর্ঘ অনুসন্ধানে তার নামে-বেনামে সম্পদের সন্ধান মিলেছে। সূত্র জানায়, আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের চিত্র তুলে ধরে ১৮ ফেব্রæয়ারি এসএম নাজমুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক (অনু. ও তদন্ত) হাফিজুল হক। এজাহারে বলা হয়, এসএম নাজমুল হক ভোগ-দখল, গোপন, তার স্ত্রীর একাধিক ব্যাংক হিসাবে এবং একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ছদ্মনামে বিনিয়োগ করেছেন। এর মধ্যে যৌথ মূলধনি প্রতিষ্ঠান ৩টি। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- ওয়েস্টিন বাংলাদেশ লি., ওশেন মেরিন লি. ও আটলান্টিক মেরিটাইম একাডেমি। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে এসএন এন্টারপ্রাইজ, সওদা শাড়িজ, মৃদুলা শাড়িজ ও জামদানি শাড়িজ। দুদকে দাখিলকৃত সম্পদবিবরণীতে নিজ নামে ১ কোটি ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ২ কোটি ২৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ ঘোষণা দেন। মামলার বাদী দুদকের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম তার সম্পদবিবরণী অনুসন্ধান শুরু করেন। এতে দেখা যায়, রমনার সিদ্ধেশ্বরীতে ডুমনি প্যাসিও অ্যাপার্টমেন্টে এ-১ ফ্ল্যাটের দাম দেখিয়েছেন ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা, খিলক্ষেত থানার ডুমনি মৌজায় ৫ কাঠার প্লটের দাম দেখানো হয়েছে ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা, পূর্বাচল মেরিন সিটিতে দুই দলিলে ১০ কাঠা জমি ৯ লাখ টাকা, তুরাগ থানার ভাটুলিয়া মৌজায় ১৬ দশমিক ৫ শতক জমি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায়, মিরপুরে রাকিন সিটিতে প্রতিটি ১৮৭২ বর্গফুটবিশিষ্ট ২টি ফ্ল্যাটের দাম ২ কোটি ৫২ লাখ ৭ হাজার ২৬১ টাকা। এছাড়া উত্তরা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে আরেকটি দলিলে ৩৩ শতক জমি কিনেন ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায়।সম্পদবিবরণী যাচাইকালে এসএম নাজমুল হক ও সন্তানদের নামে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে ২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা, আলিকোতে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৫৫ টাকা, ভবিষ্যৎ তহবিলে ৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকা, ঢাকা মেট্রো গ-৩৭-৪৪৩৮ প্রাইভেট কারের দাম ২২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ৫০ তোলা অলংকারের দাম ধরেছেন দেড় লাখ টাকা, তিনটি এফডিআর ৩০ লাখ টাকা, সোনালী ব্যাংক দিলকুশা শাখায় ১ কোটি ২১ লাখ ৪ হাজার ৮৭৯ টাকা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক মতিঝিল শাখায় ৩৬ লাখ ২৯ হাজার ১০৯ টাকা, ফারমার্স ব্যাংক মতিঝিল শাখায় ১৪ লাখ ২৯ হাজার ৪৫৬ টাকা, নাজমুল হকের নামে শেয়ার আছে ২৩ হাজার ৪০২টি। মেয়ে মনতাহা নাজমুলের নামে ইসলামী ব্যাংক পান্থপথ শাখায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা, আরেক মেয়ে আরুশা নাজমুলের নামে একই ব্যাংক ও শাখায় ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৭১৮ টাকা। এমনকি লিমরা জেনারেল ট্রেডিং নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ী পার্টনারের মালিক আব্দুল হান্নানের দেয়া চেক ডিজওনারের দেড় কোটি টাকাও তার সম্পদে যোগ হয়েছে। বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন, এসএম নাজমুল হক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রদানের মাধ্যমে ৩ কোটি ৪০ লাখ ৫৪ হাজার ৫৬২ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য গোপন করেন। উক্ত সম্পদ গোপন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ধারার অপরাধ সংগঠন করেছেন এসএম নাজমুল হক। সম্পদবিবরণী যাচাইকালে বাদী ৭ কোটি ২২ লাখ ৭৭ হাজার ২৪০ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া যায়। আয়কর নথি অনুযায়ী এ সময় তিনি ব্যয় করেছেন ৫৫ লাখ ৭ হাজার ৫৮৩ টাকা। এতে দেখা যায়, ব্যয় যোগ করে এই সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ কোটি ৭৭ লাখ ৮৪ হাজার ৮২৩ টাকা। এর মধ্যে তার নামে ৩ কোটি ৪৯ লাখ ১৮ হাজার ৭৭২ টাকা আয়ের বৈধতা পাওয়া যায়। এভাবে এসএম নাজমুল হকের দখলে থাকা ৭ কোটি ৭৭ লাখ ৮৪ হাজার ৮২৩ টাকা থেকে ৩ কোটি ৪৯ লাখ ১৮ হাজার ৭৭২ টাকা বাদ দিয়ে ৪ কোটি ২৮ লাখ ৬৬ হাজার টাকা আয়বহির্ভূত সম্পদ হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছে। দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়। এছাড়া নাজমুল হকের ২০০৪-২০০৫ অর্থবছর থেকে ২০১৭-২০১৮ বছর সময়ে খাতওয়ারি বৈধ আয় ও সম্পদ অর্জনভিত্তিক হিসাব অনুযায়ী ৯ কোটি ৯৯ লাখ ৬১ হাজার টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ করে তা গোপন করতে নিজের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবসহ স্ত্রীর একাধিক ব্যাংক হিসাব ছাড়াও উল্লিখিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ছদ্মবেশে বিনিয়োগ করেছেন। এ কারণে নাজমুল হকের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অপরাধ করার অভিযোগ করেছে দুদক। সূত্র-যুগান্তর
Link copied!