শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

করোনা শনাক্ত বা মৃত্যু : ক্ষতিপূরণের বড় চাপ আসছে

প্রকাশিত: ০৫:২৩ এএম, জুন ২১, ২০২০

করোনা শনাক্ত বা মৃত্যু : ক্ষতিপূরণের বড় চাপ আসছে

করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ঘোষিত ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে অর্থ বিভাগে আবেদন জমা পড়তে শুরু করেছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২০টি আবেদন জমা পড়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পাঠানো সহস্রাধিক আবেদন অর্থ বিভাগে পাঠানোর অপেক্ষায় আছে। এখন পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। মৃতের সংখ্যাও ক্রমশ বড় হচ্ছে। পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে ক্ষতিপূরণ তহবিলে চাপ পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে সরকারকে অন্য খাত থেকে এ খাতে অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। আবেদন জমা পড়লেই নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগসহ তিন জায়গায় যাচাই-বাছাই করে ক্ষতিগ্রস্তদের অনুকূলে অর্থ ছাড় করবে সরকার। গত ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রেডভেদে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য স্বাস্থ্য বীমার ঘোষণা দেন। এরপর ২৩ এপ্রিল স্বাস্থ্য বীমার বদলে সরাসরি আর্থিক ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দিয়ে পরিপত্র জারি করে অর্থ বিভাগ। পরিপত্র অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সরকারি চাকরিজীবীরা মারা গেলে গ্রেডভেদে ২৫-৫০ লাখ টাকা পাবেন। আর করোনা আক্রান্ত হলে গ্রেডভেদে পাবেন ৫-১০ লাখ টাকা। আর এর জন্য ৮৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দেশে সব মিলিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ২০ লাখ। কর্মরত আছে ১৭ লাখের মতো। করোনা মোকাবেলা করতে গিয়ে সরকারি চাকরিজীবী ও সম্মুখযোদ্ধাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত পুলিশ। তাদের তরফ থেকে এখনো কোনো আবেদন অর্থ বিভাগে জমা পড়েনি। গতকাল শনিবার পর্যন্ত পুলিশের আট হাজার ৪৯৬ জন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ৩২ জন। জানা গেছে, করোনায় মৃত্যুবরণ করা সাতজন এবং আক্রান্ত এক হাজার ৩০০ জনের আবেদন কিছুদিন আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে পুলিশ অধিদপ্তর। এক মাস হয়ে গেলেও সেই আবেদন অর্থ মন্ত্রণালয়ে যায়নি। জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা কালের কণ্ঠ’কে বলেন, ‘যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হচ্ছে। বাকিদের ক্ষেত্রেও করা হবে।’ সশস্ত্র বাহিনী ও তাদের পরিবারের চার হাজার ২৫৩ জন সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তাঁদের মধ্যে কতজন কর্মরত ও কতজন অবসরপ্রাপ্ত ছিলেন সে তথ্য আইএসপিআর জানায়নি। আইএসপিআর জানায়, শুধু গত সপ্তাহেই সশস্ত্র বাহিনী ও তাদের পরিবারের ৭১৩ জন সদস্য কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন আটজন। তাঁদের সবাই সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য। এ ছাড়া গত বুধবার পর্যন্ত আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৫৩৮ সদস্য আক্রান্ত এবং তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের ১৬৫ এবং কারা অধিদপ্তরের ৫০ কর্মীও করোনায় আক্রান্ত। সারা দেশে এক হাজার ৩৫ জন চিকিৎসকের করোনা শনাক্তের খবর জানা গেছে। নার্সদের মধ্যে ৮৮৫ জন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে এক হাজার ৩৫৪ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। গত শুক্রবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩৮ জন চিকিৎসক। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন মারা গেছেন করোনার লক্ষণ নিয়ে। আর করোনা আক্রান্ত হয়ে নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে মারা গেছেন যথাক্রমে দুজন ও একজন। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বাসা) সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসন ক্যাডারে এ পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্ত প্রায় ২০০। কর্মরতদের মধ্যে মারা গেছেন তিন কর্মকর্তা। এর বাইরে প্রশাসনের নিম্নস্তরের শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) খলিলুর রহমান গত শুক্রবার বলেন, তাঁরা এখনো ক্ষতিপূরণের কোনো আবেদন পাননি। পেলে যাচাই করে অর্থ বিভাগে পাঠাবেন। এদিকে সরকারের অনেকেরই ধারণা, টাকা পাওয়ার জন্য কেউ কেউ ভুয়া করোনা আক্রান্তের সনদ জোগাড় করতে পারেন। এ বিষয়ে কড়া নজর রাখার প্রয়োজন বলে মনে করেন তাঁরা। এরই মধ্যে গত ১৫ জুন রাজধানীর মুগদা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভুয়া করোনা সনদ তৈরির অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব)। পাঁচ-সাত হাজার টাকায় করোনা পজিটিভ ও নেগেটিভ সনদ বিক্রি করছিল অভিযুক্ত চক্রটি। দেড় থেকে দুই শ সনদ বিক্রির কথা তারা স্বীকার করেছে। এসব সনদ কারা কিনেছেন, কিনে কী কাজে লাগিয়েছেন, তার কোনো হদিস অবশ্য মেলেনি। এ ধরনের ঘটনা মোকাবেলা করতেই যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দাবি করে টাকার জন্য আবেদন করবেন, প্রথমেই তাঁদের বিষয়টি যাচাই করবে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ। এরপর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যাচাই করে অর্থ বিভাগে পাঠাবে। অর্থ বিভাগ আবারও যাচাই করে টাকা ছাড় করবে। বরাদ্দ ৮৫০ কোটি ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দিয়ে জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী, করোনা রোগীদের সরাসরি চিকিৎসা কাজে সম্পৃক্ত এবং করোনাসংক্রান্ত প্রত্যক্ষ সরকারি নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে আক্রান্ত বা মৃত্যুবরণ করলে ক্ষতিপূরণ পাবেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর জন্য পৃথকভাবে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৫০ কোটি টাকা বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছর করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এ অর্থ বরাদ্দ দিলেও প্রয়োজনে বাড়তে পারে। আগামী অর্থবছরের (২০২০-২১) প্রস্তাবিত বাজেটে অপ্রত্যাশিত খাতে তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সেখান থেকেও প্রয়োজনে ক্ষতিপূরণের জন্য অর্থ দেওয়া যাবে। এ ছাড়া করোনা মোকাবেলায় ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকেও সরকার ক্ষতিপূরণের জন্য অর্থ দিতে পারে। করোনার কারণে মারা যাওয়া সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য অর্থ বিভাগ যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে তাতে বলা হয়েছে, ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। পদ্ধতি অনুসরণ করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ফাইল নিজ নিজ মন্ত্রণালয় থেকে ধীরগতিতে আসছে বলে মনে করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব সিরাজুন নূর চৌধুরী বলেন, ‘কিছু দাবি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এসেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করার পর অর্থ ছাড় করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘এসংক্রান্ত অর্থ প্রাপ্তিতে যেন কোনো সমস্যা না হয় সে জন্য পৃথক বরাদ্দ রাখা হয়েছে।’ সূত্র: কালের কণ্ঠ
Link copied!