শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ০৯:৩৫ এএম, এপ্রিল ২০, ২০২০

করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে আওয়ামী লীগ

বিশেষ প্রতিবেদক: করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে আওয়ামী লীগ। করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনে থাকা শহর থেকে গ্রামে একটি লোকও যেন অনাহারে-অর্ধহারে থাকতে না হয় তার জন্য সর্বাত্মক কার্যক্রম নিয়ে প্রস্তুত সরকার ও সরকারি দলের প্রতিটি নেতাকর্মী। যত মানুষ সংকটে পড়বে তত মানুষকে সহায়তার আওতায় আনা হবে। দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানোই হচ্ছে আওয়ামী লীগের কাজ। চলমান সংকটে প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও প্রস্তুত। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে নেতাকর্মীরা এখন মাঠে। এদিকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির উদ্যোগে ৭৫ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে ‘মোবাইল স্বাস্থ্যসেবা’ টিমও চালু করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে মোবাইল ফোনে সার্বক্ষণিক তারা সেবা প্রদান করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাত্রলীগ কৃষকদের ধান কেটে দিচ্ছে। ছাত্রলীগের পাশাপাশি কৃষক লীগ, যুবলীগ শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। ১৯৭১ সালে পুরো জাতি এক হয়ে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছি। এখনও সেভাবে সবাইকে মনে সাহস নিয়ে এক হয়ে এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। তিনি বলেন, জনকল্যাণ বিবেচনায় বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্যও বন্ধ রয়েছে। কিন্তু জীবন থেমে থাকবে না। যারা বাজারে যাবেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাজার করবেন। এ ভাইরাসের কারণে দুর্ভিক্ষ আসতে পারে বলে যে আশঙ্কা করা হচ্ছে তা মোকাবিলায় সবাইকে কৃষিতে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। দলীয় সূত্রগুলো জানায়, করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসা সেবার জন্য দলের নেতাকর্মীরা সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। গাইনী, ইউরোলজি এবং কিডনি, কার্ডিওলজি, শিশু বিশেষজ্ঞ, জেনারেল সার্জন, ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন ও আইসিইউ বিশেষজ্ঞ, অর্থোপেডিক সার্জন, ইএনটি অনকোলজিস্ট, চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ, নাক, কান ও গলা রোগ বিশেষজ্ঞ, নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে এ টিম গঠন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ও উপকমিটির সদস্য সচিব সুজিত রায় নন্দী বলেন, দলীয় সভানেত্রীর পক্ষ থেকে ও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশনায় ৭৫ সদস্য বিশেষজ্ঞ এই টিমে আমি এবং দলের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা তত্ত্বাবধায়ন করছি। করোনা ভাইরাস সংকটজনিত পরিস্থিতিতে মোবাইল ফোনে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ৭৫ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে একটি চিকিৎসা সেবা প্রদান টিম গঠন করা হয়েছে। দলের উপ কমিটির সূত্র জানায়, উক্ত টিমে উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এর সহযোগী অধ্যাপক (ইউরোলজি এবং কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন) ডা. তৌহিদ মোহাম্মদ সাইফুল হোসেন এবং সহকারী অধ্যাপক (কার্ডিওলজি) ডা. আরিফুল ইসলাম জোয়ারদার (টিটো)। প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. শেখ ফয়েজ আহমেদ। এছাড়াও সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট হাসপাতালের রেজিস্ট্রার (কার্ডিওলজি) ডা. মাহমুদুল হাসান মাসুম, ডা. মো. মোতাহার হোসেন চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. সানজিদা আহমেদ এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেন্টাল সার্জন ডা. মো. হেলাল উদ্দিন। উক্ত টিমে ইউরোলজি এবং কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু বিশেষজ্ঞ, ডেন্টাল সার্জন, গাইনী বিশেষজ্ঞ, কলোরেক্টাল সার্জন, বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজি বিশেষজ্ঞ, শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ, ফারমাকোলজিস্ট, ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ইন্টারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, জেনারেল সার্জন, ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন ও আইসিইউ বিশেষজ্ঞ, অর্থোপেডিক সার্জন, ইএনটি অনকোলজিস্ট, চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ, কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ, নাক, কান ও গলা রোগ বিশেষজ্ঞ, নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন বিষয়ের জেনারেল প্রাকটিশনারসহ একদল অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয় করা হয়েছে। চিকিৎসকবৃন্দ নির্ধারিত সময়ানুযায়ী মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা প্রদান করবেন। প্রধান সমন্বয়ক ডা. শেখ ফয়েজ আহমেদ-এর (০১৭১৬৬০৬৯৯৬) মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলেই যেকোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন। করোনা ভাইরাস সংকট চলাকালীন সার্বক্ষণিক এ চিকিৎসা সুবিধা প্রদান অব্যাহত রাখা হবে বলে জানা গেছে। যতদিন প্রয়োজন ততদিন এই কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও দিনাজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ ভোলার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, অসহায় দরিদ্র মানুষের কোন দল নেই। দলীয় চিন্তা করে কেউ যেন রিলিফ বণ্টন না করে। যারা দুঃস্থ, যাদের কিছু নেই; দল মত নির্বিশেষে তাদের ত্রাণ বিতরণ করতে হবে। তোফায়েল আহমেদ আরো বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রত্যেকটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ত্রাণ কমিটি গঠন করতে হবে। দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানোই হচ্ছে আওয়ামী লীগের কাজ। করোনার ভাইরাস মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একগুচ্ছ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এই পদক্ষেপগুলো যদি আমরা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারি তা হলে আল্লাহর রহমতে হয়তো বা আমরা এই দুর্যোগ থেকে মুক্তি পাবো- যোগ করেন তিনি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, করোনাভাইরাসের মহামারি দুর্যোগে জাতি হিসেবে বিভক্তি কোনোভাবেই কাম্য নয়। ঘরে ঘরে সচেতনতার দুর্গ গড়ে তুলে ঐক্যবদ্ধভাবে ঘরে বসেই এর মোকাবিলা করতে হবে। তিনি বলেন, তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশ ইউরোপের দেশগুলোর চেয়েও ভালো অবস্থানে রয়েছে। মনে রাখতে হবে, এ লড়াই সবার বাঁচার লড়াই। এ লড়াইয়ে পরস্পর পরস্পরকে সুরক্ষা না দিলে নিজেদের সুরক্ষাই হুমকির মুখে পড়বে। এদিকে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে তিন দফা পৃথক ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট এবং বরিশাল বিভাগের ৪০টি জেলার সঙ্গে নিয়মিত মতবিনিময় করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সারাদেশের সর্বশেষ পরিস্থিতির খোঁজ-খবর রাখছেন তিনি। ভিডিও কনফারেন্সে জনগণকে স্বাস্থ্যবিধিসমূহ মেনে চলার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সংকট উত্তরণের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজেরও ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশগুলোর তুলনায় এখনও বাংলাদেশের অবস্থা ভালো। আমরা করোনার প্রাদুর্ভাব অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। বিশ্বে যেখানে হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মারা যাচ্ছেন সে তুলনায় বাংলাদেশের আক্রান্ত ও মৃত্যু এখনও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আর এই নিয়ন্ত্রণ বহাল রাখতে সবাইকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে ত্রাণ বিতরণে যেকোনো অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না বলে কঠোর হুঁশিয়ারি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের যেকোনো পর্যায়ের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ত্রাণ বিতরণের অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তা প্রমাণ হলেই দল থেকে বহিষ্কার করাসহ প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথাও মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক সহযোগতিার জন্য দলের প্রতিটি নেতাকর্মীকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নানারকম দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী দিনগুলোতে ঐক্যবদ্ধভাবেই করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করার কার্যক্রম আরো জোরদার করবে আওয়ামী লীগ। ডেইলি খবর/এ্ইচ
Link copied!