শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

করোনার ধাক্কা সামলে এগোতে চায় বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:৫৮ এএম, মে ২৯, ২০২১

করোনার ধাক্কা সামলে এগোতে চায় বিএনপি

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় গত ১১ এপ্রিল। এর ২৭ দিন পর ৯ মে তিনি করোনামুক্ত হলেও এখনো করোনা-পরবর্তী জটিলতায় ভুগছেন। তাঁর মতো করোনা-পরবর্তী নানা জটিলতায় ভুগছেন দলটির আরো অনেকে। তবে এরই মধ্যে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী করোনা জয় করে মাঠের রাজনীতিতে ফিরেছেন। আর মারণ এই ভাইরাসে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাসহ দলের প্রায় সাড়ে ৪০০ জনকে হারিয়েছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, এত নেতাকর্মী হারানো দলের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তবে এ সমস্যা তো শুধু বিএনপি বা দেশের নয়, সারা বিশ্বের। তাই করোনার বিরুদ্ধে লড়াই সবার সম্মিলিত লড়াই। বিএনপিও এ লড়াইয়ে শামিল। দলের পক্ষ থেকে করোনায় আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানো হচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সমস্যা পৃথিবীজুড়ে। এর জন্য তো আর পৃথিবী থেমে থাকবে না। একে সঙ্গী করে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের জীবনযাত্রাকে এগিয়ে নিতে হবে।’ বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ও দলটির কারোনা সেলের সদস্য ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত মাসের (এপ্রিল) হিসাব অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ৪০০ দলীয় নেতাকর্মীর জীবন গেছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। এর মধ্যেও আমরা কাজ করছি।’ বিএনপির কারোনা সেলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নানা সমস্যায় হাসপাতালে ভর্তি হলেও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মৃত্যুতে করোনার প্রভাব ছিল। তবে সরাসরি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক সামরিক কর্মকর্তা রুহুল আলম চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী ও ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন। এ ছাড়া ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে যে তরুণরা আশার সঞ্চার করছিলেন, তাঁদের অন্যতম স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, দলের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল খান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসানউল্যাহ প্রমুখ করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন। মৃতের তালিকায় আরো আছেন সাবেক মন্ত্রী টি এম গিয়াস উদ্দিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ হক প্রমুখ। এদিকে করোনাকে জয় করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ফিরেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব হাবীব-উন-নবী খান সোহেল, চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত সহকারী শিমুল বিশ্বাস, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী প্রমুখ। ‘জটিলতা কাটেনি খালেদা জিয়ার’ : বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনায় গত বুধবার মেডিক্যাল বোর্ড বসেছিল রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে। পর্যালোচনা শেষে বোর্ড জানায়, তাঁর কিডনি, হার্ট ও লিভার সমস্যা কাটেনি। তাঁকে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিতে হবে। মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, খালেদা জিয়া এখনো পোস্ট-কভিড জটিলতা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তাই কিছুদিন সিসিইউতে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিকে ৫২ দিন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গত ৯ মে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। তবে এখনো পুরোপুরি সুস্থ হননি তিনি। ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, চিকিৎসকদের পরমর্শে আরো এক-দুই মাস তাঁকে থাকতে হবে নিবিড় পর্যবেক্ষণে। টেলিফোনে সংক্ষিপ্ত কথাবার্তায় রিজভী তাঁর শারীরিক দুর্বলতা, হার্ট ও ডায়াবেটিসের সমস্যার কথা জানান। তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চান। গত ১৭ মার্চ তাঁর করোনা শনাক্ত হয়। জানতে চাইলে করোনা জয় করে রাজনীতিতে ফেরা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু গতকাল শুক্রবার বলেন, ‘এত নেতাকর্মীর মৃত্যুর ক্ষতি দলের পক্ষে কাটিয়ে ওঠা কঠিন। অসময়ের এসব মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।’ করোনা মহামারি মোকাবেলায় সরকারের নানা পদক্ষেপের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব দেশবাসীকে টিকা দিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে। সরকারকে এ ব্যাপারে আরো মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
Link copied!