শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

এক টাকাও বিতরণ করেনি ২২ ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৪:১৬ এএম, অক্টোবর ৬, ২০২০

এক টাকাও বিতরণ করেনি ২২ ব্যাংক

প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় নিম্ন আয়ের পেশাজীবী, কৃষক ও ক্ষুদ্র বা প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের জন্য গঠিত ৩ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে ঋণ দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না অনেক ব্যাংক। ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও তহবিল থেকে এখন পর্যন্ত এক টাকাও বিতরণ করেনি সরকারি-বেসরকারি ২২ ব্যাংক। অথচ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এসব ব্যাংকের বিতরণ করার কথা ছিল ৯৩৮ কোটি টাকা বা মোট তহবিলের ৩০ দশমিক ২৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ঋণ দিতে চুক্তিভুক্ত হওয়া ৪২টি ব্যাংকের মধ্যে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি খাতের ৫টি, বিশেষায়িত দুটি এবং বেসরকারি খাতের ১৫টি ব্যাংক এক টাকাও ঋণ অনুমোদন করেনি। তবে অন্য ব্যাংকগুলো এতদিনে বিতরণ করেছে ৫৫৪ কোটি টাকা, যা প্রক্ষেপিত লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১৮ শতাংশ। ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ব্র্যাক ও সিটি ব্যাংক। এখন পর্যন্ত ১২০ কোটি টাকা করে বিতরণ করেছে ব্যাংক দু’টি। ঋণ প্রাপ্তিতে সবচেয়ে এগিয়ে আছে টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও পিরোজপুরের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। অন্যদিকে পিছিয়ে পড়েছে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, সুনামগঞ্জ, নড়াইল ও সাতক্ষীরা। এদিকে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণে ব্যাংকের মাধ্যমে গঠিত তহবিল থেকে এনজিও বা ক্ষুদ্র ঋণ দান প্রতিষ্ঠানগুলোকে (এমএফআই) অর্থ সরবরাহের সীমা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগের নির্দেশনা অনুযায়ী এনজিওর একটি বড় প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ ৬০ কোটি টাকার তহবিল নিতে পারত। নতুন নির্দেশনার পর নিতে পারবে সর্বোচ্চ ১৫০ কোটি টাকা। গত ২৭ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত এক সার্কুলারে বলা হয়, ‘কোনো ব্যাংক কর্তৃক কোনো একটি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ অর্থায়নের পরিমাণ হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের গত তিন বছরের বিতরণ করা গড় ঋণের ৩০ শতাংশ বা পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের (৩ হাজার কোটি টাকা) ৫ শতাংশ।’ আগের নির্দেশনায় যা ছিল ২ শতাংশ। ব্যাংক সূত্র জানায়, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলমান রাখা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি আবর্তনশীল পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকের অনুকূলে দেয়া পুনঃঅর্থায়নের বিপরীতে সুদহার হবে বার্ষিক ১ শতাংশ। অর্থায়নকারী ব্যাংক থেকে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে দেয়া অর্থায়নের বিপরীতে সুদ হার হবে বার্ষিক ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। আর গ্রাহক পর্যায়ে সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। এর বাইরে কোনো ধরনের চার্জ বা ফি নেয়া যাবে না। কেবল ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের সমিতিভুক্ত সদস্যরা এ ঋণ পাবেন। করোনাভাইরাস মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এমন গ্রাহকরা অগ্রাধিকার পাবেন। একক গ্রাহকের ক্ষেত্রে ঋণের সর্বোচ্চ পরিমাণ হবে ৭৫ হাজার টাকা। আয় উৎসারী কর্মকাণ্ডে অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত গ্রুপভিত্তিক অর্থায়নের ক্ষেত্রে ন্যূনতম পাঁচ সদস্যের গ্রুপের অনুকূলে ঋণের পরিমাণ হবে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের প্রায় ৫৪ শতাংশ বা ৪৬ হাজার ২৫২ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। এই প্যাকেজের আওতায় ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি (সিএমএসএমই) এবং প্রাক্-জাহাজীকরণ পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচি খাতে ঋণ বিতরণে খুব বেশি আগ্রহ নেই ব্যাংকগুলোর। চিঠি, নোটিশ, শোকজ ও তদারকি বাড়িয়েও এসব খাতে ঋণ বিতরণে গতি বাড়াতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবেলায় সরকার ৫ এপ্রিল প্রায় ৮৬ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। এর অধীনে দেয়া ঋণের সুদহার ২ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত। শ্রমিকদের বেতন ও সব গ্রাহকের দুই মাসের সুদ ভর্তুকি প্রদান এবং কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা-এসবই ছিল প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে। এছাড়া গত জানুয়ারি থেকে ঋণের কিস্তি না দিলেও কেউ খেলাপি হবেন না, এমন সুবিধাও ঘোষণা করা হয়েছে।
Link copied!