শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ ঋণ নেওয়ার রেকর্ড

প্রকাশিত: ০৫:১১ এএম, জুলাই ৯, ২০২০

এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ ঋণ নেওয়ার রেকর্ড

বিদায়ি অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছে সরকার। এতে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ ঋণ নেওয়ার রেকর্ড হয়েছে। গত অর্থবছরে সরকারের নিট ব্যাংকঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭২ হাজার ২৪৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এটি মূল বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাড়ে ৫২ শতাংশ বেশি। এক অর্থবছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই ব্যাংক থেকে এত বেশি ঋণ নেয়নি সরকার। রাজস্ব আদায়ে ভাটা ও কড়াকড়ি আরোপে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ায় ব্যয় মেটাতে সরকারকে বাধ্য হয়ে এই পরিমাণ ঋণ নিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে গত অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার। পরে তা বাড়িয়ে ৮৪ হাজার ৪২১ কোটি টাকা করা হয়। তবে অর্থবছরের শেষ সময়ে বড় অঙ্কের বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান পাওয়ায় সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে আটকানো সম্ভব হয়েছে ব্যাংকঋণ। সাধারণত ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। এ কারণে বরাবরই ব্যাংকব্যবস্থা থেকে যতটা সম্ভব কম ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দেন অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি হয়েছে। সঞ্চয়পত্র বিক্রিও তলানিতে নেমেছে। এতে বাধ্য হয়ে ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিতে হয়েছে সরকারকে। এটা মোটেই ভালো লক্ষণ নয়। এর ফলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘নতুন অর্থবছরেও বড় অঙ্কের ব্যাংকঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিন্তু পুরো প্রণোদনা প্যাকেজ ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হওয়ায় কিছুটা চাপে আছে এ খাত। তাই আমি বলব, যদি ব্যাংকঋণ নিতেই হয়, তবে যেন শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া হয়। বেসরকারি বিনিয়োগে গতি আনতে নতুন মুদ্রানীতিতে এমন বার্তাই দেওয়া উচিত।’ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। যদিও এটি সাময়িক হিসাব। চূড়ান্ত হিসাবে ঘাটতি আরো কমতে-বাড়তে পারে। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে মাত্র ১০ হাজার ৫৮০ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৬ শতাংশ কম। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, রাজস্ব আদায়ে বিশাল ঘাটতি এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রি আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ায় গত অর্থবছরে সরকারের ব্যাংকঋণ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের নেওয়া ৭২ হাজার ২৪৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকার ব্যাংকঋণের মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকেই নেওয়া হয়েছে ৬১ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা। আর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া হয়েছে ১০ হাজার ৪৪১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এর আগে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ ব্যাংকঋণ নেওয়ার রেকর্ড ছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা। তবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ায় সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৩০ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। তার পরও সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে সরকারের ব্যাংকঋণ দাঁড়ায় ৩৪ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ১৯ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সরকার নিয়েছিল মাত্র ৯২৬ কোটি টাকা। এদিকে নতুন অর্থবছরেও ব্যাংক থেকে আরো বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার বাজেট ঘাটতি মেটাতে নেওয়া হবে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের মূল লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণের বেশি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, করোনাজনিত অর্থনৈতিক মন্দায় এবার সরকারের রাজস্ব আহরণ হতে পারে গত বছরের চেয়েও কম। তাতে বাড়তে পারে বাজেট ঘাটতি, যা সরকারের ব্যাংকঋণের পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। এমনটি হলে বেসরকারি খাত ব্যবসার জন্য ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ প্রাপ্তিতে সমস্যায় পড়তে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে আরো দেখা যায়, এক বছর ধরে টানা কমেছে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি। গত অর্থবছরে ১৮.৮ শতাশ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মে পর্যন্ত ১১ মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৮.৮৬ শতাংশ। সুত্র: কালের কণ্ঠ
Link copied!