শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

একজন মিটার রিডারের এত সম্পদ! বাকিদের কি অবস্থা?

প্রকাশিত: ১০:২২ এএম, জানুয়ারি ১৭, ২০২৩

একজন মিটার রিডারের এত সম্পদ! বাকিদের কি অবস্থা?

ডেইলি খবর ডেস্ক: শশুর মহাশয় দিয়েছেন কোটি কোটি টাকা,তাই মিটার রিডার মেয়ের জামাইয়ের এত সম্পাদ! প্রশ্ন হচ্ছে,রাজধানীতে একজন মিটার রিডারের এত সম্পদ এলো কোথা থেকে! তাহলে বাকিদের কি অবস্থা? খবর হচ্ছে,পেশায় তিনি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) মিটার রিডার। ডিপিডিসির তালিকায় যার অবস্থান তৃতীয় শ্রোণর কর্মচারী। বেতনের অঙ্কে রাজধানী ঢাকায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে সংসার চালানোই দায় হওয়ার কথা। কিন্তু ঘটেছে উল্টো। জীবনযাপনে আভিজাত্যের পাশাপাশি অন্যতম শখ হিসেবে বেছে নিয়েছেন ফ্ল্যাট ও বাড়ি কেনা। শুধু মোহাম্মদপুর এলাকায়ই তার নামে বাড়ি রয়েছে দুটি। এর বাইরে কয়েকটি ফ্ল্যাট,প্লটও রয়েছে। চলাচলের জন্য রয়েছে ব্যক্তিগত গাড়িও। আর বেনামে সম্পদের পরিমাণ অনেক বেশি। আলোচিত এ মিটার রিডারের নাম একেএম রফিকুল ইসলাম। বিদ্যুৎ বিভাগে চাকরি করলেও তিনি তার নিজের বাড়িতে ব্যবহার করেন অবৈধ বিদ্যুতের লাইন। রফিকুল ইসলাম বর্তমানে রাজধানীর লালমাটিয়া ডিপিডিসি অফিসের আওতাধীন শ্যামলী নেটওয়ার্ক অপারেশনস অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস অফিসে কর্মরত। এর আগে তিনি মোহাম্মদপুরের সাতমসজিদ সড়কে কর্মরত ছিলেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান রোডে দুটি বাড়ির মালিক রফিকুল। এক নম্বর সড়কে চার নম্বর বাড়িটি দোতলা। বাড়িটিতে নির্মাণকাজ এখনো চলছে। ২০১৮ সালে কেনা হয় বাড়িটি। এই সড়কের সাত নম্বর বাড়িটিও রফিকুলের। ২০০৭ সালে কেনা সাদ বিশ্বাস ম্যানশন নামের এ বাড়িটি চারতলা। দুটি বাড়ির নিচেই রয়েছে দোকান। সব মিলিয়ে এই দুই বাড়ি থেকেই রফিকুলের হিসাবে আয়ের পরিমাণ ৩ লাখ টাকা। এ ছাড়া দুই বাড়ির সামনে খালি আছে তার মালিকানাধীন ছয় কাঠার একটি প্লট। চাঁদ উদ্যানেই ১০ কাঠার আরও একটি প্লট কেনার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তিনি। মোহাম্মদপুরের কাটাসুরে ১ নম্বর রোডের হুরজাহান ভিলার দ্বিতীয় তলায় এক রাস্তাামুখী ফ্ল্যাট কিনেছেন রফিকুল। লালমাটিয়া পানির ট্যাঙ্কের পাশেই আরেকটি ভবনে কিনেছেন ফ্ল্যাট। কাদেরাবাদ হাউজিং এলাকায়ও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। রফিকুলের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য দুটি মোটরসাইকেল ও দুটি মাইক্রোবাস রয়েছে। এ ছাড়া ১০ লাখ টাকা ধারও দেন পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বোয়ালমারী গ্রামের ফয়েজ উদ্দিনের পুত্র রফিকুলকে। নিজ গ্রামেও বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি কিনেছেন। সেখানেও করেছেন বাড়ি। বিনিয়োগ রয়েছে রাজধানীর বছিলা এলাকায় একটি আবাসন কোম্পানিতেও। এ ছাড়া কয়েকটি এমএলএম কোম্পানিতেও বিনিয়োগ রয়েছে। যদিও গ্রামের সম্পদের বিষয়ে রফিকুল বলছেন, এগুলো তার পূর্বপুরুষদের সম্পত্তি। বংশানুক্রমে তিনি পেয়েছেন। ডিপিডিসির একাধিক কর্মচারী জানান, মূলত ডিপিডিসি সাতমসজিদ অফিসে চাকরি করতে গিয়ে রফিকুল অনেক অর্থসম্পদের মালিক বনে যান। তিনি লালমাটিয়া ব্রাঞ্চের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার খুব কাছের লোক। ডিপিডিসিতে মিটার রিডার হিসেবে যোগদানের আগে আর্থিক সংকটে ছিলেন রফিকুল। এরপর ধীরে ধীরে তার ভাগ্য খুলতে থাকে। বস্তি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের পাশাপাশি আবাসিক গ্রাহকদের বিল কমাতে মিটারে কারচুপি করে প্রতি মাসে অবৈধভাবে অনেক টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন তিনি। রফিকুলের মালিকানাধীন একটি বাড়ির কেয়ারটেকার আইয়ুব আলী জানান, ১০-১২ বছর আগে তিন কাঠা জমি কিনেছিলেন রফিকুল। পরে রফিকুল বাড়ি তৈরি করেন এবং ফ্ল্যাট ভাড়া দেন। এ বাড়িতে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে,যা তিনি ডিপিডিসির কর্মচারী হিসেবে নিয়েছিলেন। ২০২২ সালে ডিপিডিসি এজন্য তাকে জরিমানাও করেছিল। রফিকুল কখনো এ বাড়িতে থাকেননি। তিনি কাটাসুরের ফ্ল্যাটে থাকেন। ফ্ল্যাটটি লতিফ রিয়েল এস্টেটের তৈরি।চাঁদ উদ্যানের এক বাসিন্দা বলেন, রফিকুল অত্র এলাকার ক্ষমতাধর ব্যক্তি। দান-খয়রাত করেন। কেউ ভয়েও তার বিরুদ্ধে কিছু বলে না। রফিকুলের কাছে প্লট-ফ্ল্যাট কেনা এখন নেশার মতো হয়ে গেছে। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রফিকুল নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে ডিপিডিসি সাতমসজিদ অফিসে কাজ করতেন। তখন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যান, মোহাম্মদী হাউজিং ও নবোদয় হাউজিং সোসাইটির উন্নয়ন কাজ চলছিল। সে সময় রফিকুল অবৈধ বিদ্যুতের লাইন সরবরাহ এবং মিটার ও বিল টেম্পারিংসহ বিভিন্ন অসাধু কাজ করতেন। তিনি আবাসিক ও বাণিজ্যিক মিটার বিক্রিতেও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ডিপিডিসির লালমাটিয়া শাখার একজন কর্মচারী জানান,চাঁদ উদ্যান এলাকার ১ নম্বর রোডের বাড়িগুলোতে সে বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করে আসছে। তার এসব বিষয় ডিপিডিসির হেড অফিস জানার পরও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বিভিন্ন সময়ে তার বিষয়ে তদন্ত শুরু হলেও অজ্ঞাত কারণে কিছুদিন পরে আবার থেমে যায়। সম্পদ নিয়ে মিটার রিডার একেএম রফিকুল ইসলাম বলেন,মোহাম্মদপুর চাঁদ উদ্যানের সাত নম্বর বাড়িটি আমার। তবে চার নম্বর বাড়িটি আমার স্ত্রীর। শ্বশুরবাড়ির জমি বিক্রির টাকায় এটি ক্রয় করা হয়েছে। একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে বলে স্বীকার করে রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ সত্য নয়। প্রধান কার্যালয় তদন্ত করে সত্যতা পায়নি। পশ্ন হচ্ছে শশুর মশায়ের এত এত সম্পদ আসলো কোথা থেকে? তিনি কি করতেন,কি জাদুকরি চেরাগ তার ছিলো যে মেয়ের জামাইকে কোটি কোটি টাকা বিলিয়ে দিয়েছেন?সুত্র-কালবেলা  
Link copied!