শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

‘আধিপত্য ঠেকাতে’ একাট্টা চিকিৎসক নেতারা

প্রকাশিত: ০৪:১৬ এএম, অক্টোবর ২০, ২০২০

‘আধিপত্য ঠেকাতে’ একাট্টা চিকিৎসক নেতারা

অন্তর্দ্বন্দ্ব ভুলে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের চিকিৎসক সংগঠনের নেতারা একাট্টা হয়েছেন স্বাস্থ্য খাতে সিভিল প্রশাসনের ‘আধিপত্যের’ বিরুদ্ধে। আগে কিছুটা আড়ালে-আবডালে প্রতিবাদ জানিয়ে এলেও দুই দিন ধরে তাঁরা প্রকাশ্যে এই বিরোধিতার জানান দিচ্ছেন। বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ও সরকারদলীয় চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতারা দীর্ঘদিনের বিভেদ ভুলে এই ইস্যুতে এক সুরে কথা বলছেন। বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে নালিশ জানানো হবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। দেশের স্বাস্থ্য প্রশাসনে সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পদায়নের বিরোধিতা করে চিকিৎসকদের এমন উদ্যোগে অবশ্য কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য (সেবা) সচিব। বিষয়টিকে চিকিৎসকদের ‘বাড়াবাড়ি’ বলে মনে করছেন তিনি। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে কিছু চিকিৎসক নেতার নিয়োগ, বদলি, পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনৈতিক তৎপরতা, তদবিরবাজি এবং এক ধরনের সিন্ডিকেট বন্ধে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ বানচালে এটি একটি কৌশল বলেও মনে করছেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশের খ্যাতিমান একজন চিকিৎসক বলেন, ‘আমরা একাট্টা হয়েছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ওপরের পর্যায়ের প্রশাসনিক আধিপত্যের বিষয়টি দু-এক দিনের মধ্যেই আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করব। আমাদের সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত তাঁর কাছে পৌঁছে দেব। এ জন্য একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসককে আমরা দায়িত্ব দিয়েছি। আমরা চাই চিকিৎসকদের পেশাগত প্রতিষ্ঠানগুলো চিকিৎসকরাই দেখভাল করবেন। কিন্তু মন্ত্রণালয়ে একেকজন সচিব এসেই চিকিৎসকদের পেশাগত দায়িত্বের ওপর ছড়ি ঘোরাতে শুরু করেন। বিধিবহির্ভূতভাবে কর্তৃত্ব ফলাতে চান। চিকিৎসকদের সরিয়ে বিভিন্ন পদে তাঁদের সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পদায়ন করেন। এই তৎপরতা অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় আমরা আর বসে থাকতে পারছি না।’ স্বাস্থ্য (সেবা) সচিব মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘কোথাও অনৈতিক কোনো তৎপরতা করছি না। যোগ্যতাসম্পন্ন অবহেলিত চিকিৎসকদের পদোন্নতির পথ সহজ করা, পদোন্নতি ও নিয়োগ-বদলিতে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা, বিভিন্ন দপ্তরে কেনাকাটায় দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করা, মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রভাব খাটানো, তদবিরবাজি, যোগ্যদের পদোন্নতি আটকে বিশেষ পরিচয়ে পদোন্নতির তালিকা করে দেওয়ার মতো ঘটনা কমাতে চেয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘চিকিৎসক নেতারা কিছু বিষয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা যখন আমার এখানে আসেন, তখন ভালো ভালো কথা বলেন। বাইরে গিয়েই আবার অন্য আচরণ করেন।’ সিভিল প্রশাসন থেকে পদায়ন সম্পর্কে সচিব বলেন, ‘কাজে গতি আনতেই দু-একটি জায়গায় যোগ্য কর্মকর্তা দেওয়া হয়েছে। সিএমএসডিতে একজন অতিরিক্ত সচিবকে পদায়ন করা হয়েছে আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই। তবে ওই কর্মকর্তা দায়িত্ব নিয়ে বেশ কিছু ভালো কাজ করেছেন। দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধে পদক্ষেপ নিয়েছেন।’ চিকিৎসকদের অবস্থান সম্পর্কে সচিব বলেন, ‘এটা তাঁদের বাড়াবাড়ি। তাঁরা কেউ কেউ পছন্দের লোকদের তালিকা ধরে পদোন্নতি দিতে চাইবেন আর অন্যদের পদোন্নতি আটকে যাবে, তা তো হতে পারে না। যোগ্যতার ভিত্তিতে, স্বচ্ছতার সঙ্গে সব কিছু হওয়া উচিত।’ এদিকে গতকাল সোমবার প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক সভা ডেকে করণীয় ঠিক করেছেন চিকিৎসক নেতারা। সভা থেকে আনুষ্ঠানিক দাবি জানানো হয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় বিভিন্ন অধিদপ্তর বা শাখায় সিভিল প্রশাসন থেকে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব বা উপসচিবসহ অন্য যাঁদের পদায়ন করা হয়েছে তাঁদের অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য প্রশাসনের নিচ থেকে ওপর পর্যন্ত সংস্কারের দাবি জানানো হয়। এই দাবি আদায়ে শিগগিরই সারা দেশের বিএমএ ও স্বাচিপের সভাপতি-সম্পাদকদের ঢাকায় এক সভায় ডাকা হবে। সেখান থেকে দেশব্যাপী কর্মসূচির ডাক দেওয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করবেন। অন্য পেশাজীবীদের সঙ্গেও মতবিনিয় করা হবে। বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরীর পরিচালনায় বিএমএ ভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. এম ইকবাল আর্সলান ও মহাসচিব ডা. এম এ আজিজ; বিএমএর সাবেক সভাপতি ডা. মো. সোহরাব আলী ও ডা. রশিদ-ই-মাহবুব; বিএমএ সাবেক মহাসচিব ডা. মো. শফিকুর রহমান ও ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ; বিসিপিএসের সাবেক সভাপতি ডা. সানোয়ার হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. শাহ মনির হোসেন ও ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নুরুল হক; আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, বিএমডিসির সভাপতি ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ, বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া ও মহাসচিব ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী; পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের মহাসচিব ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, পরিবার পরিকল্পনা সরকারি চিকিৎসক সমিতির সহসভাপতি ডা. নাসিম আখতার এরিনা ও মহাসচিব ডা. মুনীরুজ্জামান সিদ্দীকী; বিএমএ কোষাধ্যক্ষ ডা. জাহিদ হোসেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ডা. আবুল হাসেম খান, সোসাইটি অব ল্যাপারোস্কোপিক সার্জনস অব বাংলাদেশের সভাপতি ডা. সরদার নাঈম, ল্যাবএইড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীম, বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ মুবিন খানসহ আরো কয়েকজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে বিএমএ মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে চিকিৎসকদের বিশেষায়িত পদগুলোতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নিয়োজিত প্রশাসন ক্যাডার ও অন্য বিভাগের কর্মকর্তাদের পদায়ন করায় সভায় এর তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে যাঁদের পদায়ন করা হয়েছে তাঁদের অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
Link copied!