এবার শুধু তৃতীয় বিশে^ই নয় অভিবাসী বিরোধী মনোভাব বা জেনোফোবিয়া আর শুধু পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডেনমার্ক কিংবা লিবিয়া থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা-বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নীতিনির্ধারণ থেকে শুরু করে সরকারি পদক্ষেপের অন্যতম উপাদানে পরিণত হয়েছে অভিবাসীবিদ্বেষ। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যর্থতা ঠেকাতেই অভিবাসীবিরোধী রাজনীতিকে বৈশ্বিক শাসনকৌশলের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে কিছু দেশের সরকার।
ওয়াশিংটন থেকে কোপেনহেগেন, লন্ডন থেকে প্রিটোরিয়া-সবখানেই অভিবাসীরা হয়ে উঠেছেন সরকারের ‘গলার কাঁটা’। নানা অপরাধের তকমা লাগিয়ে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ঘটনাও ক্রমেই বাড়ছে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন,এই পরিস্থিতিই আসলে জেনোফোবিয়ার বিস্তুতি তুলে ধরে।
এর প্রাথমিক বীজটা যুক্তরাষ্ট্র বপণ করলেও তার ডাল পালা এখন ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বহু দেশে বিস্তুত। কিছুদিন আগে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের সোমালিয়ার নাগরিকরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের কটাক্ষের শিকার হন। এমনকি সোমালি বংশোদ্ভূত ডেমোক্রেটিক প্রতিনিধি ইলহান ওমরকে ‘আবর্জনা’ বলতেও দ্বিধাবোধ করেননি তিনি।
শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশই যেন হাঁটছে ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী কৌশল অনুসরণ করে। এ তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে ডেনমার্ক। বহুদিন ধরে গড়ে তোলা প্রগতিশীল, মানবিক, শৃঙ্খলাবদ্ধ সমাজের ভাবমূর্তির আড়ালে বর্তমানে ইউরোপের অন্যতম কঠোর অভিবাসন ও আশ্রয় নীতি এখানেই। স্থায়ী শরণার্থী সুবিধা তুলে দিয়ে চালু করা হয়েছে অস্থায়ী আশ্রয়য় ব্যবস্থা। ডেনমার্ক সরকারের অনুমোদিত প্রোগ্রাম ছাড়া ইউরোপের বাইরে থেকে আসা শিক্ষার্থীদের ওয়ার্ক পারমিট না দেয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোপেনহেগেন।
ডেনমার্কের পথ অনুসরণ করছে যুক্তরাজ্যও। সরকারের সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে অভিবাসন কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার। সমুদ্রপথে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঢল ঠেকাতে উপকূলীয় টহল জোরদার করেছে দেশটি।
এশিয়া-আফ্রিকাতেও পরিস্থিতি কম ভয়াবহ নয়। লিবিয়ায় ইউরোপমুখী অভিবাসীদের ওপর সহিংসতা ও নির্যাতন নিত্যদিনের ঘটনা। দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম ও অর্থায়নের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে মদদ দিচ্ছে ইউরোপের কয়েকটি দেশ-এমন অভিযোগও রয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকাতেও ‘পুট সাউথ আফ্রিকানস ফার্স্ট’ এবং ‘অপারেশন দুদুলা’ আন্দোলন অভিবাসীদের বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভ আরও উসকে দিচ্ছে।বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ-দেশটিতে মাদক বিস্তার, মানবপাচার, শিশু অপহরণসহ নানা অপরাধে অভিবাসীরা জড়িত।বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক এই পরিস্থিতির মূল কারণ অনেক দেশের সরকারি ব্যর্থতা। নিজেদের অক্ষমতা আড়াল করতেই অভিবাসীদের সহজ লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে ছড়ানো হচ্ছে বিদ্বেষ। ছবি: সংগৃহীত

ডেইলি খবরের সর্বশেষ নিউজ পেতে Google News অনুসরণ করুন।
আপনার মতামত লিখুন :