শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১

হামলায় নিহত ইরানের ‘বোমার জনক’, চরম প্রতিশোধ নেয়ার হুঁশিয়ারি

প্রকাশিত: ০৬:০২ এএম, নভেম্বর ২৮, ২০২০

হামলায় নিহত ইরানের ‘বোমার জনক’, চরম প্রতিশোধ নেয়ার হুঁশিয়ারি

ইরানের জ্যেষ্ঠ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহ-মাহাবাদি চোরাগোপ্তা হামলায় নিহত হয়েছেন। রাজধানী তেহরানের পূর্বাঞ্চলীয় আবসার্ড শহরে গতকাল শুক্রবার তাঁর গাড়িবহরের ওপর প্রথমে বোমা হামলা এবং পরে গুলিবর্ষণ করা হয়। আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর ৫৯ বছর বয়সী এই পরমাণু বিজ্ঞানী মারা যান। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ একে সন্ত্রাসী হামলা বলে দাবি করে বলেন, ইসরায়েল এই হামলা চালিয়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কেউ এ হামলার দায় স্বীকার করেনি। ইসরায়েলের তরফ থেকেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি এই চোরাগোপ্তা হামলার ‘চরম প্রতিশোধ’ নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। পশ্চিমা বিশ্বের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ফাখরিজাদেহকে ইরানের গোপন পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। এ ছাড়া কূটনীতিকরা প্রায়ই তাঁকে ‘ইরানের পরমাণু বোমার জনক’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন। ইসরায়েল দাবি করে থাকে, ২০০০ সালের আগ পর্যন্ত ইরানের পরমাণু কর্মসূচির নেতৃত্ব দিয়েছেন ফাখরিজাদেহ। ২০১৮ সালে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের উদ্দেশে দেওয়া এক বক্তব্যে ফাখরিজাদেহর নাম উল্লেখ করে তাঁকে বিশেষভাবে ‘মনে রাখার’ পরামর্শ দেন। এর আগে গত ৩ জানুয়ারি মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন ইরানের সবচেয়ে প্রভাবশালী কমান্ডার কাশেম সোলেইমানি। এর এক বছরের কম সময়ের মধ্যে অন্যতম শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানীকে হারাল ইরান। ইরানের সশস্ত্র বাহিনী গতকাল রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানায়, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে চিকিত্সক দল তাঁকে (ফাখরিজাদেহ) বাঁচাতে পারেনি। তিনি শহীদ হয়েছেন।’ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফাখরিজাদেহের গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। তাঁর সঙ্গে থাকা বেশ কয়েকজন দেহরক্ষীও এই ঘটনায় আহত হয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা আজ এক বিশিষ্ট ইরানি বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে। এই কাপুরুষোচিত হামলায় ইসরায়েলের ভূমিকা রয়েছে। তারা যুদ্ধ বাধানোর পরিকল্পনা করছে।’ ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল আমির হাতামি তাঁর টুইটে বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড ইরানের বিরুদ্ধে শত্রুদের চরম ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ।’ ফাখরিজাদেহ ইরানের ‘আমেদ’ (আশা) প্রকল্পের প্রধান ছিলেন। ইসরায়েল ও পশ্চিমাদের অভিযোগ, এই প্রকল্প সামরিক উদ্দেশ্যে পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য পরিচালনা করত ইরান। এর আগেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যা করার অভিযোগ ওঠে। ২০১০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত অন্তত চারজন বিজ্ঞানী হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। পরে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও এর সঙ্গে ইসরায়েল জড়িত বলে অভিযোগ করে। যদিও ইসরায়েল কখনোই এ অভিযোগ স্বীকার করেনি। ফাখরিজাদেহ ইরানের ইমাম হুসেইন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন। ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও আর্মড ফোর্সেস লজিস্টিকেও জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সূত্র : এএফপি, আলজাজিরা, জেরুজালেম পোস্ট।
Link copied!