চলতি বছরের ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ভোটগ্রহণের নির্ধারিত তারিখ ছিল। করোনা পরিস্থিতির কারণে এর আট দিন আগে ওই ভোট স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেই ভোট হচ্ছে আগামী ২৭ জানুয়ারি। নির্বাচনে এবার প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট দেবেন এই সিটির ভোটাররা। ইসির এই উদ্যোগকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা স্বাগত জানালেও বিএনপির প্রার্থীরা শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, ইভিএমে আপত্তি নেই; তবে কেন্দ্রে সশস্ত্র সেনা মোতায়েন থাকতে হবে।
এদিকে সব কেন্দ্রে ইভিএমের ব্যবহার হলেও এই নির্বাচনে ইসি এবার সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিচ্ছে না। স্থগিত করা গত ২৯ মার্চের নির্বাচনে সেনাবাহিনীর কারিগরি সহায়তা নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল ইসির। সে সময় ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, প্রতিটি কেন্দ্রে ইভিএম পরিচালনায় কারিগরি সহায়তার জন্য সেনাবাহিনীর সদস্যরা থাকবেন।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদত হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘সাধারণত জানুয়ারিতে সেনাবাহিনীর শীতকালীন মহড়া হয়। ওই সময় তাদেরকে নির্বাচনী দায়িত্বে পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন সেনা সহায়তা ছাড়াই নিজস্ব জনবল ও স্কুল শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এই কাজে দক্ষ করে তোলার উদ্যোগ চালু রেখেছে। এই বাস্তবতায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়া হচ্ছে না।’
এর আগে ইসি পৌরসভা নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েও সে অবস্থান থেকে সরে আসে। কারণ হিসেবে ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়, সেনা সহায়তা না নেওয়ায় জনবলসংকটের কারণে সব পৌরসভায় ইভিএমে ভোট নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
চসিক নির্বাচনের দুই দিন পরই ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় ধাপে দেশের ৬৪ পৌরসভার নির্বাচন হচ্ছে। সেসব নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহার করা হবে না। এ বিষয়ে ইসি শাহাদত হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তৃতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা সম্ভব হবে না।’
এদিকে আসন্ন চসিক নির্বাচনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন সরকারি দল মনোনীত মেয়র ও সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা। তবে বিপরীত অবস্থানে বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ভোটকেন্দ্রে সশস্ত্র অবস্থায় সেনাবাহিনী রাখার দাবি তাঁদের। একই সঙ্গে তাঁরা বলছেন, ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষে বহিরাগত যাতে না থাকে, সে ব্যাপারে কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ নিয়ে বিএনপি অতীতেও বিভিন্নভাবে বিভ্রান্তি ও অপপ্রচার ছড়িয়েছে। কিন্তু জনগণ তাদের এই অপপ্রচার বুঝতে পেরেছে। আসলে বিএনপি দলটি এমনই। তারা সব ভালো কাজের বিরোধিতা করে আসছে। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ স্বচ্ছ, অবাধ ও নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য। এ পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণের বিকল্প নেই।’
মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চসিক নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত ১৩ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম দুলাল বলেন, ‘আমরা ইভিএমের বিরুদ্ধে নই। তবে ভোটগ্রহণের সময় প্রতিটি কেন্দ্রে সশস্ত্র সেনা সদস্য উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। সেনাবাহিনীর উপস্থিতির পাশাপাশি বুথ ও কেন্দ্রে বহিরাগত লোকজন যাতে না থাকে, নির্বাচন কমিশনকে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ ইতিমধ্যে যেসব নির্বাচনে ইভিএমে ভোট হয়েছে, সেখানে কারচুপি হয়েছে। বহিরাগতরাই ভোট দিয়েছে।’
বিএনপির মেয়র প্রার্থী মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলতে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
২৩ নম্বর উত্তর পাঠানটুলী সাধারণ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মোহাম্মদ জাবেদ বলেন, ইভিএমে ভোটগ্রহণ স্বচ্ছ পদ্ধতি। আধুনিক এই প্রযুক্তিতে পৃথিবীর অনেক দেশেই ভোটগ্রহণ হচ্ছে। ইভিএমে ভোটগ্রহণের বিকল্প নেই। ভোটাররাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।