শনিবার, ০২ নভেম্বর, ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১

রেজাউলে দুলছে নাছিরের ‘ভাগ্য’

প্রকাশিত: ০৬:১১ এএম, জানুয়ারি ২৫, ২০২১

রেজাউলে দুলছে নাছিরের ‘ভাগ্য’

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এবার নেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ভোটের লড়াইয়ে। কাগজে-কলমে ভোটের ময়দানে না থাকলেও ছায়া হয়ে অন্য লড়াইয়ে ঠিকই আছেন এই নেতা। রাজনৈতিক অঙ্গনে চাউর আছে, আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর বিজয় মানে সাবেক মেয়র নাছিরেরই জয়। ফলে নৌকার প্রার্থী রেজাউলের মতো নাছিরের কাছেও চসিক নির্বাচনটি ‘আগুন পরীক্ষা’। আরো সহজভাবে বললে, নৌকার মেয়র পদপ্রার্থী রেজাউলের জয়-পরাজয়ের ওপর দুলছে আ জ ম নাছির উদ্দীনের ‘ভাগ্য’। এদিকে আর মাত্র এক দিন পর বুধবার হতে যাওয়া এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরীও বিজয়ের বিকল্প দেখছেন না। ১৯৯৪ সালে চসিকের প্রথম ভোটের পর গেল ২২ বছরের পাঁচটি নির্বাচনের মধ্যে চারবার আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী বিজয়ের পতাকা উড়িয়েছেন। কাউন্সিলর পদেও বেশির ভাগই দলীয় সমর্থিতরা হেসেছেন বিজয়ের হাসি। এসব নির্বাচনে একচেটিয়া প্রাধান্য ছিল আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর। প্রথম তিনটিতে বিজয়ী হয়ে মহিউদ্দিন হ্যাটট্রিক করার পর ২০১০ সালের চতুর্থ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী এম মনজুর আলমের কাছে হারেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৫ সালের নির্বাচনে মহিউদ্দিন মনোনয়ন না পেলেও দলীয় প্রার্থী নাছিরের বিজয়ের ক্ষেত্রে তাঁর ছিল বড় ভূমিকা। তিন বছর আগে মহিউদ্দিন চৌধুরী মারা যাওয়ার পর তাঁর অনুপস্থিতিতে এবারই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে প্রথম নির্বাচন হচ্ছে। বলা হচ্ছে, মহিউদ্দিনের অনুপস্থিতিতে এ নির্বাচনে আ জ ম নাছির উদ্দীন বড় দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব। গেল পাঁচ নির্বাচনে দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা দলীয় মেয়র পদপ্রার্থীর সমর্থনে চট্টগ্রামে এসে রাত-দিন সমানে প্রচারণার মাঠে ছিলেন। কিন্তু এবারের নির্বাচনে কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ নেতাদের খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। কয়েকজন এলেও তা-ও হাতে গোনা। একইভাবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দলগুলোর স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের অনেককেই মেয়র পদপ্রার্থীর সঙ্গে প্রচারণায় দেখা মিলছে না। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন সাবেক মন্ত্রী, সাবেক এমপি, সাবেক মেয়র থেকে শুরু করে ১৯ জন। এর মধ্যে বেছে নেওয়া হয় মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীকে। অবাক করা বিষয় হলো, মনোনয়ন না পাওয়ার মনঃকষ্টে নির্বাচনী মাঠে বাকি ১৮ নেতার বেশির ভাগই রেজাউলের পক্ষে প্রকাশ্য প্রচারণায় নেই। গত ৮ মার্চ প্রচারণা শুরুর পর একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা চট্টগ্রাম এসে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে একটি বার্তা দেন। তা হলো কাউন্সিলর পদে দলের বিদ্রোহীদের পাশাপাশি তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতাকারীদের (দলীয় নেতা) ভবিষ্যতে নতুন কমিটিতে কোনো পদ দেওয়া হবে না। বিদ্রোহীদেরও দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। ভোটের মাঠেই আলোচনা চলছে, নির্বাচনের পরই চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নতুন কমিটি গঠন করা হবে। এসব কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদের আশায় স্থানীয় নেতাদের কেউ কেউ গণসংযোগে থাকলেও রেজাউলকে জয়ী করে আনার পেছনে তৃণমূলের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগসহ নির্বাচনী নানা প্রক্রিয়ায় তাঁদের অনেককে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে না। জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরে আওয়ামী লীগের বিবদমান বড় দুটি পক্ষ রয়েছে। এ ছাড়া একাধিক উপপক্ষও রয়েছে। যদি মেয়র পদে ভোটের ফল নিজেদের অনুকূলে না আসে এ জন্য দায়ী হতে পারেন বিভক্ত নেতাদের কেউ কেউ। তাঁরা ভবিষ্যৎ কমিটি থেকে ছিটকেও পড়তে পারেন। এ জন্য এক পক্ষ আরেক পক্ষের ওপর দোষ চাপাতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে নিয়ে। তবে বর্তমানে রেজাউলের পাশে গণসংযোগ থেকে শুরু করে প্রায় প্রত্যেক কর্মসূচিতে প্রচারণায় যে কয়েকজন নেতাকে দেখা যাচ্ছে তার মধ্যে নাছির অন্যতম। এদিকে নাছিরের ঘনিষ্ঠরা জানান, সাবেক এই মেয়র পড়েছেন উভয় সংকটে। এ নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পর দলের সাধারণ সম্পাদকের পদে থাকা নাছির রেজাউলের পক্ষে ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁর পাশাপাশি গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণায় স্থানীয় অনেক নেতা মাঠে থাকলেও এর মধ্যে বেশির ভাগেরই গাছাড়া ভাব। কেউ কেউ চেয়ে আছেন মেয়র পদপ্রার্থী বিজয়ী হলে এর সুফল নিজেরাই ভোগ করবেন। যদি ভোটের ফল সন্তোষজনক না হয়, তাহলে এর দায় প্রথমেই আসতে পারে সাধারণ সম্পাদক নাছিরের ওপর। এসব বাস্তবতা উপলব্ধির পাশাপাশি দলীয় প্রধানের মনোনীত মেয়র ও সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের বিজয়কে নাছির চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘এ নির্বাচন আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী এবং দল সমর্থিত কাউন্সিলরদের বিজয়ী করা ছাড়া এখন অন্য কিছু ভাবছি না। প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে চট্টগ্রামে যে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আমাদের নৌকার প্রার্থীর বিজয় সুনিশ্চিত করতে হবে।’ দলীয় নেতাদের অনেকেই মাঠে না নামা ও গাছাড়া ভাবের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নাছির বলেন, ‘দলের মেয়র পদপ্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে জয়ী করতে কাজ না করাটা প্রতারণা। যাঁরা কাজ করছেন না তাঁদের দলে থাকার কোনো অধিকার নেই। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারাও বলেছেন, ভবিষ্যতে দলের কমিটিগুলোতেও তাঁরা পদ পাবেন না।’ নাছির বলেন, ‘এ নির্বাচনে কারা কাজ করছেন, কারা করছেন না, তা আমাদের মতো নেত্রীও খোঁজখবর রাখছেন। দল করলে দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে তাঁর বিজয় সুনিশ্চিত করতে হবে।’
Link copied!