করোনাভাইরাস রোধে সেরামের টিকা আসছে ২০ জানুয়ারি বুধবার। এদিন বিশেষ বিমানে করে দুই মিলিয়ন (২০ লাখ) টিকা দেশে আসবে। তবে এটা বাংলাদেশের সঙ্গে যে ক্রয়চুক্তি হয়েছে তার অন্তর্ভুক্ত নয়। এগুলো ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতার নিদর্শন হিসাবে দেওয়া হবে। টিকাগুলো অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত ভারতে তৈরি। ১৭ জানুয়ারি ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশন থেকে পাঠানো এক জরুরি চিঠিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
সহযোগিতার টিকাই প্রথমে দেওয়া শুরু হবে। শুরুতেই ১০ লাখ লোককে টিকা দেওয়া হবে। বাকি ১০ লাখ দ্বিতীয় ডোজের জন্য রাখা হবে। এজন্য টিকাদান সংক্রান্ত পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। এ লক্ষ্যে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টরা। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির টিকা দেশে পৌঁছার পর সেগুলো দেওয়া শুরু হবে।
এদিকে সোমবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ভারত থেকে উপহার হিসাবেও করোনাভাইরাসের টিকা পাবে বাংলাদেশ; যা শিগগিরই দেশে পৌঁছাবে। উপহার হিসাবে ভারত কোন কোম্পানির কী পরিমাণ টিকা বাংলাদেশকে পাঠাবে, তা জানাতে পারেননি স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, উপহার হিসাবে পাওয়া টিকা সরকারের কেনা টিকার প্রথম চালানের ‘আগেও’ দেশে আসতে পারে।
রোববার ভারতীয় হাইকমিশন থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালককে (দক্ষিণ এশিয়া) করোনা টিকা সম্পর্কিত জরুরি চিঠি পাঠানো হয়েছে। যার অনুলিপি দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে।
চিঠির শুরুতেই বলা হয়েছে, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতার নিদর্শন হিসাবে দুই মিলিয়ন (২০ লাখ) করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী টিকা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়েছে। যা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি। টিকাগুলো একটি বিশেষ বিমানে ২০ জানুয়ারি ভারত থেকে ঢাকায় পাঠানো হবে। টিকার এই চালানে মোট ২৯ হাজার ৪০০ ভায়ল থাকবে। যার ওজন ৭৮০ কেজি। প্রতিটি বাক্সে ১২০০ ভায়ল প্যাকেট করা থাকবে। যার প্রতি প্যাকেটের ওজন ৩২ কেজি।
চিঠিতে, কোনো জটিলতা ছাড়া চালানটি গ্রহণের জন্য টিকার আমদানি সনদ প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। যাতে টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা না হয়। এ ছাড়া কাস্টমস শুল্ক প্রত্যাহারসংক্রান্ত বিষয়ের যাবতীয় কাগপত্র তৈরি রাখতে বলা হয়েছে। এমনকি বিমানবন্দরে টিকা বহনকারী বিমানটি অবতরণ এবং পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতেও বলা হয় ওই চিঠিতে। একই সঙ্গে বিমানবন্দর থেকে টিকা খালাশের পর সেগুলো বন্দরের কাছাকাছি কোথাও সংরক্ষণের স্থান প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। যেখানে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় টিকা সংরক্ষণ করা সম্ভব। এ ছাড়া এ ধরনের সুযোগ পুনরায় বাংলাদেশ যেন পায় সে বিষয়ে ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আন্তরিক চেষ্টা করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে জরুরি ওই চিঠিতে।
এ বিষয়ে জানতে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করা হলেও কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তবে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, রোববার রাতে আমরা বিষয়টি জানতে পারি। তারপর উপরের নির্দেশে আমাদের টিকাদান সম্পর্কিত যে পরিকল্পনা করা হয়েছে, সেটি পরিবর্তনের কাজ শুরু করেছি। এ ছাড়া ভারত সরকারের পক্ষ থেকে যেসব কাগজপত্র প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে সেগুলো তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছে বলেও জানান এই সূত্র।
তারা আরও জানান, টিকাগুলো বিমানবন্দর থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি) গ্রহণ করবে। তারপর তারা তাদের নিজস্ব গোডাউনে নিয়ে যাবে। অথবা তেজগাঁওয়ে অধিদপ্তরের নিজস্ব টিকা রাখার স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে যেখানে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় (২ থেকে ৮ ডিগ্রি) টিকা রাখা হয়। আর এগুলো পরিবহণের জন্য ব্যবহার করা হবে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির টিকা পরিবহণে ব্যবহৃত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ি। তারা বলেন, আমাদের চুক্তির ৫০ লাখ টিকা কখন দেশে পৌঁছাবে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছি না। তবে যেহেতু এই দুই মিলিয়ন বা ২০ লাখ টিকা আগে আসবে তাই এগুলোই প্রথমে দেয়া শুরু হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে ১০ লাখ জনকে টিকা দেওয়া হবে।
বাকি ১০ লাখ রাখা হবে দ্বিতীয় ডোজ হিসাবে। তবে নির্ধারিত সময়ে চুক্তির টিকা এলে আগের পরিকল্পনা অনুসারে টিকাদান শুরু করা হবে। এদিকে সোমবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ভারত থেকে উপহার হিসাবেও করোনাভাইরাসের টিকা পাবে বাংলাদেশ। যা শিগগিরই দেশে পৌঁছাবে।
সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, উপহার হিসাবে কত টিকা আসছে সেই সংখ্যাটা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে সংখ্যাটি ভালোই। বাংলাদেশ সরকারিভাবে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার তিন কোটি ডোজ কিনছে। যার প্রথম চালান ২৫ জানুয়ারির মধ্যে দেশে পৌঁছাবে বলে আশা করছে সরকার।
সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সরকারের করা চুক্তি অনুযায়ী, ওই তিন কোটি ডোজ টিকা বাংলাদেশ পাবে ছয় মাসের মধ্যে। বাংলাদেশে সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকার ‘ডিস্ট্রিবিউটর’ হিসাবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা সরবরাহ করবে। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস বা গ্যাভি এবং কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনসের গড়া প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স-এর আওতায় আরও আড়াই কোটি ডোজ টিকা আগামী জুনের মধ্যে বাংলাদেশ পাবে বলে সরকার আশা করছে। সব কিছু ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে মাঠ পর্যায়ে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আগামী ২৬ জানুয়ারি থেকেই অনলাইনে নিবন্ধন শুরু হবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপে দেশের মোট জনসংখ্যার ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ অর্থাৎ এক কোটি ৫০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত সেরাম ইনস্টিটিউট ছাড়া আর কারও সাথে সরকারের চুক্তি হয়নি, অন্য কোনো টিকা বাংলাদেশে ব্যবহারের অনুমোদনও দেওয়া হয়নি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা সবদিকেই খবর রাখছি। অক্সফোর্ড ছাড়াও ফাইজার, মডার্না, স্পুটনিকসহ যেসব টিকা তৈরি হচ্ছে সেগুলো আমরা আনার চেষ্টা করছি। সাংবাদিকদের ‘সবাই’ টিকা পাবেন জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময় সবচেয়ে ঝুঁকি নিয়ে যারা কাজ করেছেন, তাদের মধ্যে সাংবাদিকরা অন্যতম। আমরা জানি, অনেক সাংবাদিক করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন, অনেকে মারা গেছেন। এ কারণে টিকা এলে প্রত্যেক সাংবাদিক টিকা পাবেন।