বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

নির্বাচনী এলাকায়ও বিতর্কিত আউয়াল

প্রকাশিত: ০৭:১৭ এএম, মে ২১, ২০২১

নির্বাচনী এলাকায়ও বিতর্কিত আউয়াল

লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লায়ন এম এ আউয়াল তাঁর নির্বাচনী এলাকায়ও বিতর্কিত ও সমালোচিত। জাল-জালিয়াতি, ভূমি দখল ও প্রতারণার মাধ্যমেই তাঁর বেপরোয়া উত্থান হয়েছে বলে এলাকার লোকজন মনে করে। এবার রাজধানীর পল্লবীতে ছেলের সামনে প্রকাশ্যে বাবা সাহিনুদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যার মামলায় আউয়ালকে গতকাল বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জমি দখলের জন্য তাঁর নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ। বর্তমানে ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান আউয়ালের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে ঢাকার মিরপুরসহ কয়েকটি এলাকায় জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে জমি দখল করে আবাসিক প্রকল্প গড়ে বাণিজ্যের অভিযোগ আগে থেকেই রয়েছে। জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব ও মামলার কারণে প্লট কিনলেও মালিকানা ও দখল বুঝে পাচ্ছেন না অনেকেই। প্রতিবাদ করলেই হামলা-মামলার আসামিসহ হয়রানির শিকার হতে হয়। অন্যদিকে সংসদ সদস্য থাকাকালে আউয়ালের বিরুদ্ধে এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হয়রানি, সরকারি বরাদ্দ লুটপাট ও কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল মানুষের মুখে মুখে। তখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাঁর প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন। সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৪ সালে আবাসন কম্পানি হিসেবে নিবন্ধন নেয় হাভেলি প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড। ২০১০ সালে রাজধানীর মিরপুরের উত্তর কালশীর বাউনিয়া মৌজায় প্রায় ৪০ একর জমি নিয়ে হাভেলি গ্রুপ আলীনগর আবাসিক প্রকল্প শুরু করে। এর কর্ণধার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আউয়াল। ২০১২ সালে তাঁর আবাসন কম্পানি রিহ্যাবের সদস্য পদ পায়। শুরু থেকেই তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনে এম এ আউয়াল সংসদ সদস্য হন। তখন তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ২০১৫ সালের ১৪ মে ঢাকার মিরপুরে একটি জমি দখল নিয়ে আউয়ালের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের হাতে কলেজছাত্র আবদুর রহমান চঞ্চল খুন হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। আউয়াল ২০১৮ সালে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিবের পদ হারান, দল থেকেও বহিষ্কৃত হন। এরপর জাকের পার্টির হয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হন। কিন্তু ঋণখেলাপির অভিযোগে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল হয়। এর আগে তিনি ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি গঠন করেন। রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ নারায়ণপুর গ্রামে জন্ম আউয়ালের। কিন্তু তাঁর সব কিছুই ঢাকাকেন্দ্রিক। এলাকার হাতে গোনা লোক তাঁকে চিনত। দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মনোনয়ন পেয়ে ২০১৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর হেলিকপ্টারে এলাকায় যান তিনি। আচরণবিধি লঙ্ঘনের মাধ্যমে এলাকায় আউয়ালের নির্বাচনী মহড়া শুরু হয়েছিল। নির্বাচিত হওয়ার পর বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ২০টি সংবর্ধনা দেওয়া হয় তাঁকে। ইছাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শ্রীরামপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক সংর্বধনা অনুষ্ঠানে তাঁকে সোনার নৌকা উপহার দেওয়া হয়। প্রায় সাত ভরি সোনা ব্যবহারে করে নৌকাটি বানানো হয়েছিল। তখন কালের কণ্ঠসহ গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ায় তিনি সমালোচিত হয়েছিলেন। ইছাপুর ইউনিয়নের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, আউয়াল তাঁর কাছাকাছি বয়সী। তিনি আগে ঢাকায় জমির দালালি করতেন। লোকজনের কাছে তাঁর অনেক প্রতারণার কথাও শুনেছেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রামগঞ্জ উপজেলার তিনজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানান, ঢাকায় জমি দখল করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন আউয়াল। প্রতারণা দিয়ে তাঁর উত্থান হয়েছে। সংসদ সদস্য হলেও এলাকায় আশানুরূপ উন্নয়ন করেননি তিনি। প্রতিনিধির মাধ্যমে সব কাজে নিয়মিত কমিশন হাতিয়ে নিতেন। তিনি মূলত সংসদ সদস্য পদ ব্যবহার করে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে মনোযোগী ছিলেন। রামগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সুমন ভূঁইয়া বলেন, ‘আউয়াল এমপি থাকাকালে রামগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অনেক হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। নিজের স্বার্থে তিনি আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করে টাকার পাহাড় গড়েছেন।’
Link copied!