তিন দুর্নীতিবাজের কবলে পড়েছিলো গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়
প্রকাশিত: ১০:৪২ এএম, এপ্রিল ২৩, ২০২১
ডেইলি খবর ডেস্ক: আওয়ামী লীগের চলমান শাসনামলের প্রথম ৫ বছর গৃহায়ন ও গণপুর্ত মন্ত্রনালয় ৩ দুর্নীতিবাজের কবলে পড়েছিলো। ওই তিনজনের বিরুদ্ধেই দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা হয়েছে। তবে এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে সাজা এখনো হয়নি। দুর্নীতির এই তিন বরপুত্রের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার ৭ বছর পার হলেও মামলার গতি নাই, দুর্নীতির মামলা ঝুলে আছে।
গত ২০১৪ সালে করা দুদকের এ মামলা কী কারণে ডিফফ্রিজে রাখা হয়েছে তা মানুষ জানতে পারছে না। তিন দুর্নীতিবাজের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খান ও সচিবের স্ত্রীরাও। অন্যরা হলেন সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব দুর্নীতির বরপুত্র খোন্দকার শওকত হোসেন, রাজউকের ওই সময়কালের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা ইজ্ঞিনিয়ার নুরুল হুদা। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই রাজউকের কাছ থেকে অনিয়ম করে প্লট বরাদ্দ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে গত ২০১৪ সালের ২১ এপ্রিল রাজধানীর মতিঝিল থানায় দুদকের কর্মকর্তা যতন কুমার রায় বাদী হয়ে এই ৩টি পৃথক মামলা দায়ের করেন। এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের নিয়মিত সভায় (দুদক) কর্তৃপক্ষ মামলা ৩টি করার অনুমোদন দেয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, দুর্নীতির বরপুত্র খন্দকার শওকত হোসেন ২০০১ সালে সম্প্রসারিত উত্তরা প্রকল্পে নিজের নামে ৩ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন। অনিয়মের মাধ্যমে তিনি সেই ৩ কাঠা জমিকে ৫ কাঠায় উন্নীত করেন। সেখান থেকে ২ কাঠা জমি তিনি বিক্রিও করে দেন। কিন্তু পরে ওই জমি ডেভেলাপার কে দেওয়ার সময় পুরো ৫ কাঠার আম মোক্তার নামা (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) প্রদান করেন সাবেক এই সচিব। মামলার এজাহারে আরও বলা হয়েছে,একইভাবে পূর্বাচল প্রকল্পে ২০০৪ সালে শওকত হোসেন তাঁর স্ত্রী আয়েশা খানমের নামে সাড়ে ৭ কাঠার প্লট বরাদ্দ নিয়ে প্রথমে ১০ কাঠা এবং পরে ওই জমি সাড়ে ১২ কাঠায় উন্নীত করেন। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউকের) উত্তরা আবাসিক প্রকল্পে অভিনব কায়দায় জালিয়াতি করে তিনি তাঁর মায়ের নামে নিয়েছেন ৩ কাঠার প্লট। একই পন্থায় তিনি ওই ৩ কাঠার প্লটকে আয়তনে বাড়িয়ে ৫ কাঠায় উন্নীত করেন। উল্লেখ্য-এই ভুমি লুটেরা ৮২’র বিশেষ ব্যাচের সাবেক সচিবকে খন্দকার শওকত কে আবার দুই মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় বর্তমান সরকার। এক সৎ কর্মকর্তার আকাশ ছোয়া ভবনের গল্প অনেকেই পড়েছেন। সেই সৎ কর্মকর্তা এন আই খান আর এই খন্দকার শওকত দুইজনই ছিলেন মানিকজোড়। একইদিনে শুধু দুজন সচিব হয়ে ছিলেন।
মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সুত্রগুলো জানায় মন্ত্রণালয়ের সচিব খন্দকার শওকত হোসেন দুর্নীতির বরপুত্র হিসাবে চিহ্নিত হওয়ার পরেও প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান এডভোকেট নিজের সুবিধার দরজা প্রসারিত করতে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। উল্টো তাকে দুর্নীতি করার সুযোগ প্রসারিত করে দিয়েছেন। যে কারণে সচিবের প্লট দুর্নীতি প্রতিমন্ত্রী না দেখার ভান।এভাবেই প্রতিমন্ত্রী দায়িত্ব এড়িয়ে গেছেন। আর এ সুযোগে দুর্নীতিবাজ সচিব শওকত নিজের নামে স্ত্রীর নামে একাধিক প্লট জালিয়াতি করে নিজের নামে স্ত্রীর নামে নিয়েছেন,প্লটের আয়তনও বাড়িয়েছেন। সরকার দলীয় একাধিক সুত্র জানায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মিরা কোন কাজে গেলে কিংবা প্লট সংক্রান্ত কাজ নিয়ে কথা বলতে গেলে ছাত্রইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগে আসা আব্দুল মান্নান খান সহযোগীতা দিতেন না। কাজও করে দিতেন না। তারা মনে করেন মান্নান খান আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহায়ন ও গণপুর্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েই কমিউনিষ্টদেরই স্বার্থ বেশী দেখেছেন। আওয়ামী লীগ করা নেতাকর্মীদের দরখাস্তে লিখে দিতেন বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নিন। তবে দুর্নীবিাজ সুযোগসন্ধানীদের দরখাস্ত গুরুত্বসহকারে নিয়ে কাজ করে দিতেন। এসময়ে প্রতিমন্ত্রীর মুল ক্যাশিয়ার ছিলেন ইকবাল নামের এক ব্যক্তি। যার মাধ্যমে রাজউকের বহু অনিয়মের কাজ প্রতিমন্ত্রী করেছেন। চক্রটি শুণ্যহাতে ঢুকে দুহাত ভরে লুটপাট করেছে। এরমধ্যে দুর্নীতিবাজ সচিব শওকতের নানা অপকর্মের কাজ তিনি স্বাচ্ছন্দে করে দিতেন আব্দুল মান্নান খান। এইভাবেই ওই সময়ে মান্নান খানের নেতৃত্বে রাজউক চেয়ারম্যান নুরুল হুদা আর দুর্নীতির বরপুত্র সচিব খন্দকার শওকত হোসেন মন্ত্রনালয়টিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছিলেন। প্রশ্ন হচ্ছে-তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলা কি কারণে অগ্রগতি হয় না?