করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ রুখতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ কৌশলের দিকেই এগোচ্ছে সরকার। গতকাল রবিবার কঠোর নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঁচটি মন্ত্রণালয়ে পৃথক পাঁচটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে কোনো ধরনের সাধারণ ছুটি বা লকডাউনের সিদ্ধান্ত হয়নি, আপাতত এমন কোনো পরিকল্পনাও নেই। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। একই ধরনের কথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
এদিকে গতকাল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতামূলক অভিযান চালানো হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কোথাও কোথাও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাস্ক পরিয়ে দিয়েছেন, আবার কোথাও মাস্ক না পরায় জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
সচিব মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আগেও বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দেওয়া আছে। তার পরও আজ (গতকাল) পাঁচটি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। এ ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি মানাতে কঠোরভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কথা বলেছি। সব ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ জনসমাগম-সামাজিক অনুষ্ঠান, ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। সড়ক, রেল, নৌ ও বিমানপথে যাত্রী চলাচলের ক্ষেত্রে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। ধর্মীয় বিষয়গুলোতেও কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বলা হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতেই হবে। সব ক্ষেত্রেই আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বড় ভূমিকা রয়েছে। আমরা তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। আমাদের এখন সবচেয়ে বড় বিষয়টি হচ্ছে মাস্ক ছাড়া কেউ চলতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো কিছু বন্ধ করতে চাই না। কিন্তু সতর্কতার জন্য নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় জনজীবন যতটা স্বাভাবিক রাখা যায়, তার চেষ্টা করছি।’
গতকাল কোনো কোনো মিডিয়ায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা সংক্রান্ত খবর প্রকাশের পর দেশজুড়ে এক ধরনের অস্থির অবস্থার সৃষ্টি হয়। সেই খবরে স্বাস্থ্যসচিবকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসচিব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে আমি করোনা মোকাবেলায় এমন নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার কথাই বলেছি। কিন্তু কোনো কোনো মিডিয়া বিষয়টি সঠিকভাবে উপস্থাপন না করায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। পরে যদিও ওই খবর সংশ্লিষ্ট মিডিয়া নিজেরাই সরিয়ে নেয়।’
ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন এলাকায় একইভাবে করোনার বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা নিয়মিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির অংশ হিসেবে জানিয়েছেন, কভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্রহণের কারণে কভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষায় ‘পজিটিভ’ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। চলমান কভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমে ব্যবহৃত কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ গ্রহণের ন্যূনতম দুই সপ্তাহ পর থেকে সর্বোচ্চ প্রতিরোধ সক্ষমতা তৈরি হয়। তাই এই সময়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। সুতরাং ভ্যাকসিন গ্রহণের আগে এবং পরেও মাস্ক ব্যবহারসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত এবং ৪০ বছর ও এর বেশি সবাইকে কভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রমে নিবন্ধন করে নির্ভয়ে টিকা দিতে হবে।
গতকাল রাজধানীর সাতরাস্তা এলাকায় কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের নতুন ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, আগামী ৮ এপ্রিল থেকে দেশে করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হবে। অর্থাৎ যাঁরা প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাঁরা দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারবেন ৮ এপ্রিল থেকে। এ ক্ষেত্রে প্রথম ডোজের তারিখ থেকে দুই মাস পরের নির্দিষ্ট দিনে যাঁর যাঁর টিকা নিতে পারবেন। পাশাপাশি প্রত্যেকের কাছে এসএমএস পাঠানো হবে নির্দিষ্ট দিনে টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য।
আমাদের চট্টগ্রাম অফিস জানায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধকল্পে সামাজিক অনুষ্ঠানে লোকসমাগম ১০০ জনের বেশি নিরুসাহ করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে নানা ধরনের বিধি-নিষেধের কথা জানানো হয়েছে। গতকাল জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় এসব নির্দেশনার কথা জানানো হয়। পরে বিজ্ঞপ্তি আকারে সীমিতকরণের বিষয়ে নির্দেশনা জারি করা হয়।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী কমিউনিটি সেন্টার, কনভেনশন হল, হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট ও বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে অনুষ্ঠান সীমিতকরণ করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এসব নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খুলনা অফিস জানায়, ৯টি থানা এলাকায় কভিড-১৯ মোকাবেলায় জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়েছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)। ‘মাস্ক পরার অভ্যাস, করোনামুক্ত বাংলাদেশ’ স্লোগান সামনে রেখে গতকাল দুপুরে নগরীর শিববাড়ী মোড়ে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন কেএমপি কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান ভূঞা। এ সময় অতিথিরা পথচারীদের মুখে মাস্ক ও ফেসশিল্ড পরিয়ে দেন। একই সঙ্গে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ ও গাড়িতে স্টিকার লাগিয়ে দেন।
অন্যদিকে কেরানীগঞ্জে মাস্ক না পরায় ১১ জনকে জরিমানা করা হয়েছে।