ডেইলি খবর ডেস্ক: ন্যাশনাল ব্যাংকের সিকদার পরিবারে গৃহবিবাদে ঋণ প্রদানের নথিও মিলছে না। তদন্তকাজে যুক্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকটি এসব ঋণের নথিপত্র দেখাতে পারছে না। শুধু ঋণ বিতরণের নথি রয়েছে। ঋণের টাকা কোথায় ব্যবহৃত হয়েছে, তারও কোনো তথ্য মিলছে না। তদন্ত শেষ হলেই প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে। ঋণ নেয়া ফ্রেন্ডস মাল্টি ট্রেড কোম্পানির নামে ৮৩ কোটি, স্টেপ মিডিয়ার নামে ১৮ কোটি, রূপায়ণ হাউজিং লিমিটেডের নামে ৯ কোটি টাকা ঋণ। আবার মৌখিক অনুমোদনে সিনহা অ্যান্ড ওপেক্স ইন্ডাস্ট্রিজকে দেওয়া ৪০ কোটি টাকা।একই সময়ে সাইফ পাওয়ার হোল্ডিং, বেক্সিমকো এলপিজি, আলেশা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভিসেস, গচিয়াটা অ্যাকুয়াকালচার, সিএলসি পাওয়ার, অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যাল, ডাইরেক্ট ফ্রেশ, খান সন্স বিডি, দ্য ফাইনারি লিমিটেড, ড্রিম প্লাস, ফ্যাশন ফ্লাশ, গ্লোব ট্রাভেল সার্ভিসেস, দেশ টিভি, রংধনু বিল্ডার্স,শান্তা এন্টাপ্রাইজ, গ্লোবাল এমব্রয়ডারি ও তানজিলা টেক্সটাইলের নামে ঋণ বিতরণের নথি নিয়ে চলছে কানামাছি খেলা। জানা গেছে এসব ঋণে পরিচালনা পর্ষদের কোনো অনুমতি ছিল না। এমনকি ঋণ প্রদানের কোনো অনুমতিপত্রও নেই। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক প্রায় ছয় শ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে,যার কোনো অনুমোদন ছিল না। এমনকি এসব ঋণের বেশির ভাগের কোনো নথিপত্র ব্যাংকটিতে মিলছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারাও এসব নথিপত্র খুঁজে পাচ্ছেন না। আর এ নিয়ে তদন্ত চলায় ব্যাংকটির পরিচালনাও পর্ষদও এখন বিতরণ করা এসব ঋণের অনুমোদন দিতে চাইছে না। যদিও এসব ঋণ দেওয়া হয়েছে ব্যাংকটির পরিচালক পদে থাকা সিকদার পরিবারের এক সদস্যের নির্দেশে। এ নিয়ে সিকদার পরিবারের মধ্যে তৈরি হয়েছে গৃহবিবাদ। ভাইয়েরা এক পক্ষে, বিপরীতে আছেন এক বোন। এক পক্ষ চাচ্ছে অনিয়ম অনুমোদনের, অন্য পক্ষ অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চায়। এদিকে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বরের পর যেসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ঋণের বিষয়ে তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে। এরপর ন্যাশনাল ব্যাংকে কী ধরনের অনিয়ম ও কত টাকা পাচার হয়েছে, তার খোঁজে তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এই ইউনিটের কর্মকর্তারা ৭ ও ৮ এপ্রিল ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়, মহাখালী ও গুলশান করপোরেট শাখায় তদন্ত করেন। আইনত বিএফআইইউ অর্থ পাচার তদন্তের দায়িত্বে নিয়োজিত। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইইউ এখন যৌথভাবে ব্যাংকটির সামগ্রিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখছে। বিএফআইইউ প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন,‘অর্থ পাচারের কোনো ঘটনা থাকলে সে বিষয়ে তদন্ত করাটা আমাদের দায়িত্ব। ব্যাংকটির বিভিন্ন অর্থ পাচারের কয়েকটি বিষয় খতিয়ে দেখার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুরোধ করেছে, বিভিন্ন মাধ্যমেও তাদের অনিয়মের বিষয় এসেছে। জরুরি হওয়ায় করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও আমাদের তদন্ত কর্মকর্তারা ন্যাশনাল ব্যাংকে কাজ করছেন। জানা গেছে,গত ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় সবশেষ ঋণ অনুমোদিত হয়। এরপর সভা হলেও কোনো ঋণ অনুমোদিত হয়নি। তবে ঠিকই ব্যাংকটি ৬২৪ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে, যা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে। এসব অনিয়মে সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ব্যাংকটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) এ এস এম বুলবুলকে ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি ব্যাংকটির নথিপত্রে তাঁর প্রবেশাধিকার বন্ধ করতে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পর্ষদ সভার অনুমোদন ছাড়াই ৬২৪ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে ব্যাংকটি। এছাড়া ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণের অর্ধেকের বেশি ১৫টি গ্রুপের কাছে চলে যায়। ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ বিতরণের পূর্ণাঙ্গ হালনাগাদ বিবরণীর নথিপত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত তিন মাসে শান্তানা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে ১৬৪ কোটি টাকা ঋণসুবিধা দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য সরঞ্জাম আমদানির নামে প্রতিষ্ঠানটি ঋণপত্র খোলে, তবে এখনো পণ্য আসেনি। যদিও ব্যাংকটির ঋণের নথিতে দেখানো হয়েছে এটি আবাসন নির্মাণ খাতের ঋণ হিসেবে। এই প্রতিষ্ঠানটির একজন মালিকের বাসায় ব্যাংকটির গুলশানের শাখা। এই সূত্রে ব্যাংকটির কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। এ কারণেই অনুমোদন ছাড়া ঋণ পায়। তদন্তকাজে যুক্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকটি এসব ঋণের নথিপত্র দেখাতে পারছে না। শুধু ঋণ বিতরণের নথি রয়েছে। ঋণের টাকা কোথায় ব্যবহৃত হয়েছে, তারও কোনো তথ্য মিলছে না। তদন্ত শেষ হলেই প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে। সূত্র-প্রথম আলো