সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

আমাদের যাত্রা অনেক দূরের

প্রকাশিত: ০৬:২০ এএম, মার্চ ২৯, ২০২১

আমাদের যাত্রা অনেক দূরের

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগসহ প্রতিটি সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বলবো যখন করোনাভাইরাস প্রচণ্ড মহামারি আকার ধারণ করলো সে সময় যেভাবে মানুষের পাশে আপনারা দাঁড়িয়েছিলেন আবারো করোনার একটা ধাক্কা আসছে, আমরা দেখতে পাচ্ছি। আপনাদেরও সেভাবে আবার দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, এখন আমাদের সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে। করোনাভাইরাসে যেন মানুষের কষ্ট না হয়, একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য। আপনাদের এখন থেকে প্রস্তুতি নিয়ে আবার মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে একথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সভায় সূচনা বক্তব্য দেন। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এবং আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক মেরিনা জামান, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি ও হুমায়ুন কবির বক্তৃতা করেন। দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং ’৭৫ এর ১৫ই আগস্টের শহীদসহ সকল গণআন্দোলনে আত্মাহুতিদানকারীদের স্মরণে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদের সকলকে অনুরোধ করবো মাস্ক ছাড়া কেউ যাতে বাইরে না যায়, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে এবং প্রত্যেকটি সভা বা সিম্পোজিয়াম, সেমিনার বা প্রশিক্ষণ কর্মশালা সামাজিক দূরত্ব মেনে করতে হবে। যতদূর সম্ভব খোলা জায়গায় কর্মসূচি করতে হবে। ঘরের মধ্যে করলে করোনার প্রাদুর্ভাব আরো বেশি দেখা দেয়। এ সময় ভ্যাকসিন প্রদানও চলবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দেশে একটি মানুষও আর গৃহহীন থাকবে না, সরকার সবাইকে ঘর করে দেবে। তিনি বলেন, আমরা প্রায় ৯৯ শতাংশ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি যেগুলো বাকি আছে সেগুলোও করে দেবো, শতভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে শতভাগ গৃহকে আমরা আলোকিত করবো। তিনি বলেন, গত ১২ বছরে দেশের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। তবে আমাদের যাত্রা অনেক দূরের। জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করতে হবে। তিনি স্কুল-কলেজ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমরা স্কুল কলেজগুলো খুলে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু এখন হঠাৎ করে করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়াতে এখন নয়, রোজার ঈদের পরে স্কুল-কলেজ-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেবো। আর এই ফাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেসবের মেরামত লাগবে সেসব কাজ ইত্যবসরে করে দেয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। পাশাপাশি দেশের উন্নয়নের কাজগুলো চলতে থাকবে, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যাতে অব্যাহত থাকে সে প্রচেষ্টা আমরা অব্যাহত রাখবো। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। সব অনুষ্ঠান সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। পাশাপাশি গত বছর মানুষের পাশে যেমন দাঁড়িয়েছেন, তেমনি সামনেও মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মানুষ যেন কষ্টে না থাকে। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা যা করার করবো। কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামী লীগকেও মানুষের পাশে থাকতে হবে। যে দল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছে, তাদের ওপর অনেক দায়িত্ব। মানুষের জন্য খাদ্য বিতরণ, মাস্কসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ ও নানা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, যেহেতু, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আবার দেখা গেছে এবং এই ভাইরাসটাও আবার ভিন্ন ভিন্ন ভাবে এসেছে। তাই, আমাদের ঠিক আগের মতো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। এই প্রাদুর্ভাব কতদিন থাকবে আমরা এখনো জানি না। তার জন্য আমাদের প্রস্তুতিটা থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১২ বছরে বাংলাদেশের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে দেশ পরিচালনা করেছি। এতসব অর্জনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শই কারণ। এটা নতুন কিছু নয়, কোনো ম্যাজিকও নয়। এদেশের মানুষ জাতির পিতার নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। ৭ই মার্চের ভাষণে যা যা করতে বলেছেন, মানুষ তাই করেছে। তিনিই বলেছিলেন, বাঙালিকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আসলেও দাবায়ে রাখা যায়নি, যাচ্ছে না। আমরা তার আদর্শে দেশ পরিচালনা করে এগিয়ে যাচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু তার সংবিধানে যে মৌলিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন আমরা সে আলোকেই পথ চলছি। তার সব কাজ পূর্ণ করছি। তিনি বলেন, গৃহহীন ও ভূমিহীন কেউ যেন বাদ না যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কেউ বাদ গেলে জানাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। এটাই জাতির পিতার স্বপ্ন। তার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়বো- এটাই প্রতিজ্ঞা। শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে পাঁচ দেশের প্রধান এসেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও ২৭টি প্রতিষ্ঠান থেকে শুভেচ্ছা বার্তা আমরা পেয়েছি। এটা বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত সম্মানের। এটাই আমাদের সার্থকতা। তিনি বলেন, সময়ের অভাবে সব বার্তা শোনাতে পারিনি। সব বার্তা রক্ষিত আছে। এগুলো তৃণমূল পর্যন্ত প্রচার করতে হবে। তাদের শুভেচ্ছা বার্তা যেন জনসাধারণ জানতে পারে। সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনকে এগুলো প্রচারে কাজ করার নির্দেশনা দেন তিনি। ইতিহাস বিকৃতির প্রসঙ্গ টেনেও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২১ বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম মুছে ফেলা হয়েছে। ৭ই মার্চের ভাষণও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ভিন্নখাতে নেয়া হয়েছিল। আমরা ক্ষমতায় আসার পর নানা কর্মসূচি নিয়েছিলাম। তারপরও চক্রান্ত থামেনি। ২০০১-এ আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেয়নি। কিন্তু ফল তো ভালো হয়নি। পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। নানা খাতে পিছিয়েছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, সবুজ বাংলা আরো সবুজ করতে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। কোনো জলাশয় যেন অনাবাদি না থাকে। খাদ্য উৎপাদন করে নিজেদের প্রস্তুত রাখতে হবে। করোনা পরিস্থিতি কোনদিকে যায় বলা যায় না, যাতে অন্তত খাদ্য সংকট না হয়। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা নিজের খাদ্যের জোগান নিজেই নিশ্চিত করে অন্যকেও দেবো।
Link copied!